মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোঃ আবদুর রহমান বলেছেন, দেশজুড়ে যে সহিংসতায় সাভারের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পশু হাসপাতালের অবস্থা বর্ণনা করার ভাষা নেই। একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলছিলেন, ‘আমরা ৭১ সাল দেখি নাই। কিন্তু ওই দিন আমরা নতুন করে ৭১ সাল দেখলাম। সুতরাং এর ভেতর দিয়ে মনে করতে পারেন, কী তান্ডবলীলাটাই না সেদিন পরিচালিত হয়েছে। তারই একটা লক্ষ্যবস্তু ছিল আমাদের প্রাণিসম্পদের সাভারের এই কার্যালয়। কার্যালয়টি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ গাড়িটিতে যেভাবে আক্রমণ করেছে, তাতে মনে হলো, এদের সঙ্গে তাদের একটা যুদ্ধ ছিল। তারা এদের সঙ্গেই যুদ্ধ করেছে।
শনিবার সন্ধ্যার পর সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পশু হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাধীনতা বিরোধীরা এ তান্ডব চালিয়েছে মন্তব্য করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ভাবা যায় একটা অফিসে একজন কর্মকর্তার কক্ষের কমোড পর্যন্ত ভাঙা হয়েছে। আলমারি, ফ্রিজ, এসি টেবিল চেয়ার এগুলোসহ সবই নিঃশেষ করেছে। সুতরাং এটি আর আমাদের বলার ভাষা নাই। এই নারকীয় তান্ডব যারা করেছে, তাদের চেহারা, তাদের চরিত্র এটি ৭১ সালকে যদি মনে করিয়ে দেয়, সুতরাং তাদেরই উত্তরসূরী এরা, সেই পরাজিত শক্তিরই উত্তরসুরীরা এই আক্রমণ চালিয়েছে।
সহিংসতার বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে এ দেশের মুক্তিকামী, স্বাধীনতাকামী জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ সহিংসতা বাংলাদেশে হতে পারে না। এ বাংলাদেশ শান্তিকামী মানুষের বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ মুক্তিকামী, স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল্যবোধ ধারণ করে যে বাঙালি জাতি, সেই বাঙালি জাতির স্বপ্নের বাংলাদেশ।’
হাসপাতালটির স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে কত দিন সময় লাগবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির চিত্র আপনারা নিজেরা সচক্ষে দেখেছেন। আমরা অনুমান করি, তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুতরাং এগুলো সঠিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ মামলা যাতে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করতে পারে, সে বিষয়ে তাদের কিছু দাপ্তরিক কাজ আছে। সেগুলো তারা সম্পন্ন করবে। ইতোমধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা জানালেন, ১৪ জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। তার মধ্য থেকে চারজনের কাছ থেকে কিছু মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কারা এবং ঘটনা ঘটানোর উদ্দেশ্য কী ছিল সবকিছু পরিষ্কার হতে পারবো। সর্বোপরি এ ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে আমরা যথাসম্ভব খুব শিগগিরই পুনরায় এটায় স্বাভাবিক কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করবো।
হাসপাতালটি পরিদর্শনের সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সচিব সায়েদ মাহামুদ বেলাল হায়দর, মংস ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডাঃ মোহাম্মদ রেয়াজুল হক ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রসঙ্গতঃ কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকার সাভারে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের মধ্যে গত ১৯ জুলাই সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পশু হাসপাতালে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ঘটনার আট দিন পর শনিবার সন্ধ্যার পরে হাসপাতালের পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসেন মন্ত্রী। সরেজমিন কার্যালয়ের ভেতরে আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি গাড়ি, কার্যালয়ের ভেতরে অফিসকক্ষের ভাঙচুর হওয়া আসবাবপত্র ও পুড়ে যাওয়া কাগজপত্র ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ওএফ/এসআর