তিনি বলেন, ‘আমার দেশবাসীর কাছে আমি বিচার চাই, অপরাধটা কী করেছি? যেখানে আমি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি, মানুষের জীবন মান উন্নয়ন করেছি, আজকে ২০০৮ সালের বাংলাদেশ আর ২০২৪ এর বাংলাদেশ তো এক না। বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান তো উন্নত হয়েছে। আমাদের অর্থনীতি আজকে কত উপরে উঠে গিয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে হলো এটা আর কিছু না। আমাদের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে দিয়ে বাংলাদেশকে আবার ভিক্ষুকের জাতি করে দেওয়া। এটাই বোধ হয় এদের পেছনে ষড়যন্ত্র। সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যখন বাংলাদেশকে একটা জায়গায় নিয়ে আসলাম, আজকে সেখানে দেখি, আজকে একদিকে জ্বালাও-পোড়াও সব কিছু, ঠিক যে প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে সেবা দেয় সেখানে।’
জনগণের সহযোগিতা চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে মেট্রোরেলে মানুষ কত অল্প সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারতো, আবার ফিরতে পারতো। সেই স্টেশনগুলো পুড়িয়ে এখন ট্রাফিক জ্যাম, মানুষের কষ্ট। আমি তো কষ্ট লাঘব করেছি। কিন্তু যারা এভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষকে আবার কষ্টে ফেলে দিলো তাদের বিচার এ দেশের মানুষকেই করতে হবে। আমি খালি সবার সহযোগিতা চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমার কি এটাই অপরাধ যে আমি মানুষের জীবনমান উন্নত করার জন্য কাজ করেছি। আর সেই জায়গাগুলোতেই হামলা করতে হবে।’
সাম্প্রতিক সংঘাতে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির দায়দায়িত্ব কার এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা তো আমি বাতিলই করে দিয়েছি। আমি আহ্বান করেছিলাম একটু ধৈর্য ধরো। হাইকোর্টে শুনানি হবে, হাইকোর্ট যে রায় দেয়। না তারপরও এই আন্দোলন, আজকে এতগুলো মানুষের জীবনের ক্ষতি হলো, এতগুলো পরিবারের ক্ষতি হলো। এর দায়দায়িত্ব কাদের?’
তিনি বলেন, ‘আমি দেশবাসীর কাছে সেই আহ্বান জানাবো। এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ, এদেশকে নিয়ে যেন আর কেউ চালাতে না পারে। আমি সবার সাহায্য চাই।’
সাম্প্রতিক সংঘাতে যারা মারা গেছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে আবেগাপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর এভাবে মায়ের কোল খালি হোক এটা আমি চাই না। কারণ আমি তো বাবা-মা সব হারিয়েছি, আমি তো জানি হারাবার ব্যথা কত কষ্টের।’
তিনি বলেন, ‘(স্বজন হারানোর) কষ্ট বুকে নিয়েই তো ফিরে এসেছি এ দেশের মানুষের জন্য। এখানে আমার তো কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি তো ছেলে-মেয়ের জন্যও কিছু করিনি। শুধু তাদের লেখাপড়া, নিজেরাই চাকরি করেছে, নিজেরাই লেখাপড়া করেছে, আমি কতটুকু করতে পেরেছি। কিন্তু আমি দেশের মানুষের জন্য করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে অন্তত মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের কাজের সংস্থান। সবই তো করে দিচ্ছিলাম। যখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি তখনই এই তাণ্ডব করে যে জায়গাগুলোতে মানুষের সেবা সেই জায়গাগুলোতেই আঘাত।’
বিভিন্ন দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীদের কমপ্লিট শাটডাউন আর তার ফলাফল আজকের এই অবস্থা। সমস্ত দাবি মেনে নেওয়ার পরেও তাদের আর সেই শাটডাউন শেষ হয় না। কী কারণে আমি বুঝি না। আমরা তো সম্পূর্ণ দাবিই মেনে নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘একটা মানলে আরেকটা, আরেকটা মানলে আরও একটা। এর ফল আজকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সব দিকে ছারখার। আর আজকে কত মানুষ জীবন হারালো। কত মানুষ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।’