পাটের সোনালী আঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত চলনবিলের চাষীরা
Published : Monday, 15 July, 2024 at 5:40 PM Count : 598
চলনবিল বিভিন্ন সময়ে নানা রুপ ধারণ করে। শুস্ক মৌসুমে এক রুপ তো বর্ষায় অন্য রুপ। এভাবেই মৌসুম ভিত্তিক সৌন্দর্যে পরিবর্তন হয়ে নানা ফসলে দেশকে সমৃদ্ধ করে চলছে দেশের সর্ববৃহৎ এই বিল। এখন বর্ষা মৌসুম। চলনবিলে পাট জাগ দেওয়া আর আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ততা চলছে কৃষকের। পাট গাছকে ১০ থেকে ১২ দিন স্থির পানিতে ডুবিয়ে রেখে পঁচে যাওয়া গাছ থেকে সোনালি আঁশ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
এক সময় পাটকে বাংলাদেশে সোনালী আঁশ বলা হলেও বর্তমানে পাটের যে খরচ সে অনুপাতে দাম না পাওয়ায় চাষীরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বললেও ভুল হবে না। বাপ চাচাদের পেশা ধরে রাখতেই এখনো কিছু চাষী এর আবাদ করে থাকেন। নানা কারণে দিন দিন বাংলাদেশে পাটের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তার মধ্যে পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপক আকারে বেড়ে যাওয়া, পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, পাট চাষের সাথে সংশ্লিষ্ট দ্রব্যাদির দাম বেড়ে যাওয়া, সারের দাম ও শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তবে এখন রোপা পদ্ধতিতে চাষ করায় পাটের উৎপাদন বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। তাই কৃষকরা আবার পাট চাষের দিকে মনোযোগী হয়েছে। নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া পাবনার চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়ায় সোনালী আঁশ পাট কাটা ধোয়া এবং শুকানো শুরু হয়েছে। ওই কাজে পুরুষের পাশাপাশি সহযোগিতা করছে নারীরাও। ইতিপূর্বে অনেক পাট চাষীরা মাঠের পাট কেটে জাগ দিয়ে ধুইয়ে তুলেছে। পাটের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষকরা তাদের পাটক্ষেতে সময়মত পরিচর্যা করার কারণে এই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চলতি বছরে চলনবিলে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে।
তবে কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, দুই হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। স্থানীয় কৃষিকর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে প্রনোদণা হিসেবে এক হাজার ৫৫০ জন চাষীকে প্রতি বিঘায় ২ কেজি করে পাটবীজ ও প্রয়োজনীয় সার সরবরাহ করা হয়েছে। এ বছর চলনবিলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে সময় মত পাট কেটে ঘরে তুলতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে জানান। খরচ বেশী হলেও দাম বেশি পেলে কৃষকরা পাট বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে অনেকেই জানান।
সোমবার (১৫ জুলাই) চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, মাঠ জুড়ে পাট আর পাট। তবে কৃষকরা বলছেন, পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। ন্যায্য মূল্য পেলে লাভবান হবেন কৃষকরা। এক সময় পাটের ব্যবহার বেশী হলেও বর্তমান প্লাস্টিক ও নাইলনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ সোনালী আঁশের বাজারে ধস নেমেছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পাটের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
সিংড়া উপজেলার, শেরকোল, লালোর, হাতিয়ান্দহ, কলম, চামারি ইউনিয়ন এবং গুরুদাসপুরের খুবজীপুর, মশিন্দা, বিয়াঘাট তাড়াশ ও চাটমোহরের কৃষকরা আশা করেছেন এ বছর পাটের মূল্য বেশী পাবেন। সে জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছরে অনেক চাষীরা পাট চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। পাট চাষীরা বলেন, এবার প্রাকৃতিক তেমন কোন দূর্যোগ না থাকায় সুন্দর পরিবেশে পাট কেটে শুকিয়ে ঘরে তুলতে পারবো এবং ন্যায্যমুল্য পেলে লাভবান হওয়া যাবে।
নাটোর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় ২০২২-২৩ চলতি মৌসুমে ৩০ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার ৮৪২ হেক্টর। গত মৌসুমে জেলায় ৩০ হাজার ২৩৯ হেক্টর জমিতে ৫৮ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে নাটোর সদর উপজেলায় পাটের আবাদ হয়েছে ২৯৩০ হাজার হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার হেক্টর। এরমধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলায় আবাদ ৪ হাজার ১০০ হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১৫০ হেক্টর। সিংড়া উপজেলায় আবাদ ২ হাজার ২০ হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮০০ হেক্টর। নলডাঙ্গা উপজেলায় ১ হাজার ৯১০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর। বাগাতিপাড়ায় ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫৫০ হেক্টর। বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৯ হাজার হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৬৯২ হেক্টর। এবং লালপুর উপজেলায় ৭ হাজার ৪২০ হেক্টর, জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর। এ বছর নাটোর জেলায় জেআরও-৫২৪, ও-৯৮৯৭ এবং ফালগুনী জাতের পাট বেশি আবাদ হয়েছে। যার মধ্য জেআরও-৫২৪ আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ৪২০ হেক্টর, ও-৯৮৯৭ আবাদ ১ হাজার ৮৫৩ হেক্টর এবং ফালগুনী আবাদ হয়েছে ৫০০ হেক্টর।
এসআর