চলতি বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ চান গারো আদিবাসীরা
Published : Wednesday, 5 June, 2024 at 3:17 PM Count : 228
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় বাস করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত গারো আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। মুসলমান, হিন্দু কোচ, ডালু, বানাই ও হদি সম্প্রদায়ের পাশাপাশি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী গারো সম্প্রদায়ের মানুষগুলো ক্ষুধা, দারিদ্র ও বন্যহাতির সাথে লড়াই করে কোনো রকমে টিকে আছে। তাদের অধিকাংশ পরিবারই এখন অবহেলিত।
তারা বেশির ভাগই অন্যের বাড়িতে দিনমজুরী করে সংসার চালান। তারা পরিবার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভুমিহীনদের ঘর বরাদ্দ পাওয়াসহ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। তাই চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ চান তারা।
গারো আদিবাসী নেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ৩২৭ দশমিক ৬১ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নের ৭৪টি গ্রামে প্রায় ২২ হাজার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আদিবাসী মানুষ প্রকৃতির নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে বসবাস করেন। ২০০ বছর আগে সুদূর চীনের তিব্বত প্রদেশ থেকে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের মানুষ এ দেশে আগমন করেন। প্রায় দুই লক্ষাধিক গারো আদিবাসী দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বাস করে। আদিকাল থেকেই গারোরা শিকারী পেশায় খুবই দক্ষ ছিল বলে অধিকাংশ পরিবার বনে জঙ্গলে বাস করে। পারিবারিক দিক দিয়ে গারোরা মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত পরিবার। এ সম্প্রদায়ের প্রধান ও পছন্দনীয় খাবার হলো ভাত ও শূকরের গোশত। পাশাপাশি ‘নাখাম’ বা শুটকি মাছ দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম প্রধান খাদ্য। শূকরের গোশত পছন্দীয় খাবার হওয়ায় গারোরা নিজ উদ্যোগে শূকর পালন করে থাকেন।
তারা প্রধানত ছয়টি গোত্রে বিভক্ত। এগুলো হলো- আত্তং, মিগাম, আবেং, দোয়াল, চিবক ও রোগা। তবে বাংলাদেশে আবেং গোত্রের লোকই বেশি। গারো সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ লোকই রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী। বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে গারোরা নিজেদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। পাত্র-পাত্রীর পছন্দ অনুযায়ী মিশনারীর ধর্মযাযকরা বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন।
বর্তমানে গারোদের পোষাক-পরিচ্ছদেও আধুনিকতার ছোঁয়া লক্ষ্য করা যায়। মেয়েরা দকবান্দা-দকশাড়ী ও সেলোয়ার কামিজ আর ছেলেরা শার্ট, প্যান্ট ও লুঙ্গি পরিধান করে। গারো নারীরা কৃষি কাজে খুবই পারদর্শী। তাই তার পুরুষের পাপাশি কৃষি কাজে অংশগ্রহণ করে। গারোরা সংস্কৃতি ও অতিথি অপ্যায়নকে খুব পছন্দ করে। তারা বিশ্বাস করে ‘সেবাই পরম ধর্ম’। নাচে-গানে প্রভু ঈশ্বরকে খুশি করা যায়। আর তিনি খুশি হলেই পরকালে স্বর্গ পাওয়া যাবে। গারোদের নিজস্ব ভাষা আছে যার নাম ‘আচিক ভাষা’। তারপরও শিক্ষিতরা বাংলায় ও ইংরেজীতে কথা বলতে পারে। গারোরা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো বড়দিন।
এছাড়া, বছরে মাঝে মধ্যেই ছোটখাট সামাজিক উৎসব উদযাপন করে থাকে। ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে সুদীর্ঘকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা এই উপজেলায় বসবাস করলেও নানা দিক থেকে এখনও বেশ পিছিয়ে রয়েছে। তাই চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন তারা।
নালিতাবাড়ীর আদিবাসী সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের (টিডব্লিউএ) সাবেক চেয়ারম্যান আদিবাসী নেতা মি. লুইস নেংমিনজা জানান, এখানকার আদিবাসীরা দারিদ্রতা, ভুমি সমস্যা ও বন্যহাতির অব্যাহত তাণ্ডবে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ পরিবার বনে, জঙ্গলে বসবাস করায় বিশুদ্ধ পানি পায় না তারা। অনেক ভুমিহীন পরিবার এখনও সরকারি ঘর বরাদ্দ পাননি। আদিবাসীরা নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে না। তাই শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি আদিবাসীদের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও অন্যান্য সরকারি সাহায্য সহযোগিতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন।
-এমএস/এমএ