ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’র সহায়সম্বল হারা পরিবারের মানবেতর জীবন
Published : Sunday, 2 June, 2024 at 5:55 PM Count : 137
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’র প্রভাবে জোয়ার ও জলোচ্ছাসের আঘাতে দুর্গত চরাঞ্চচলের পরিবারগুলো এখন চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছে। ‘রেমাল’ চলে গেলেও উপকূলের প্রায় ২৩ চরে তার ক্ষতবিক্ষত চিহ্ন রেখে গেছে। সহায়সম্বল হারা পরিবারগুলো এখন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক বলেন, ঘুর্ণীঝড় রেমালের আঘাতে চরফ্যাশনে প্রায় ৬ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের তালিকা অনুযায়ী ২৪৩ কোটি ৩ লক্ষ ৮২হাজার ৫০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ েক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, ‘রেমাল’র প্রভাবে দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ৯ ইউনিয়নের ৮১টি গ্রাম আক্রান্ত হয়েছে। গৃহহারা পরিবারের সংখ্যা ২ হাজার ৩ হাজার ৫০০ টি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ ৩ হাজার ৫১০টি পরিবার। এতে সরাসরি আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ। জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়েছে এক হাজার ৫৩৫টি ছাগল ও ভেড়া। মৃত ও ভেসে যাওয়া গরু-মহিষের সংখ্যা এক হাজার ৫৮০টি। ঘূর্ণিঝড়ের পরে সরকারের পক্ষ থেকে নিম্নাঞ্চলের মানুষ জন্য (ক্ষতিগ্রস্থ ৯টি ইউনিয়নে) মাত্র ৭৫ মে:টন চাউল, আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা অবস্তায় রাতে খাওয়া বাবত পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও দিলেও ঘূর্ণিঝড়ের ৬ দিন পরেও ঘুরে দাড়ানোর মতো কোন সহায়তা এখনো পৌছেনি তাদের কাছে।
এদিকে ঘরবাড়ির পরই বেশি ক্ষতি হয়েছে গবাদি পশুর। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩টি স্থানে প্রায় ১২শ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লবন পানির কারণে চরঞ্চালের পশুর মড়ক দেখা দিয়েছে। ২৮ মে রাত থেকে জোয়ারের উচ্চতা কমলেও খাল-বিলে জলাবদ্ধতায় থাকা নোনা পানির কারণে নানা সংকট দেখা দিয়েছে। এ মুহুর্তে মহিষ গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষীরা। মিঠা পানি আর গৌখাদ্যের সংকট চরমে। ঢাল চর, কুকরি মুকরি ইউনিয়নের মতোই চর হাসিনা, ঢাল চর, চর মনোহর, সিকদারেরচর চরফারুকি দুর্গত ক্ষতিগ্রস্থদের দুর্ভোগ যেনশেষ নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ডিভিশন-২) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান মাহামুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানানো হয়েছে, ‘রেমাল ’র তান্ডবে চরফ্যাশনের তিনটি পয়েন্টে ১২শত মি; বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে হাজারী গন্জ ইউনিয়নের খেজুর গাছিয়া ৫০০ কিমি বেড়িবাঁধ রয়েছে। এছাড়া চরফ্যাশনের নজরুল নগর ও নীলকমল ইউনিয়নে ৭০০ মিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানির টানে চরফ্যাশনের বেতুয়া পাড়ের প্রশান্তি পার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো আসন্নঅমাবস্যার আগেই সংস্কার করা হবে। জোয়ারের পানি যেন ঢুকতে না পারে তার জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: রহমত উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ২৮মে পর্যন্ত তারা ১৩৪টি পশু মারা যাওয়ার খবর পেয়েছেন। ক্ষয় ক্ষতির তালিকার কাজ চলছে। তবে দক্ষিণের চরগুলোতে নোনা পানির কারণে মহিষের বিভিন্ন অসুখ দেখা দিয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের টিম চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
চরফ্যাশন উপজেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মো ফজলুল হক জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করে তাদের কাছে শুকনো খাবার পৌছে দেয়া হয়েছে। যাদের ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ টাকা ও ঢেউটিন বরাদ্দ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা কি অবস্থায় আছে তা চিহ্নিত করার পর তাদের পুনর্বাসন করা হবে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমান ত্রান সামগ্রী রয়েছে। চাহিদার সাথে সাথে দিতে পারছি। আমাদের কোন ঘাটতি নেই।
এসএফ/এসআর