নামের মিলে জেল খাটলেন কলেজছাত্র, মূল আসামি চেন্নাইয়ে
Published : Tuesday, 14 May, 2024 at 6:53 PM Count : 80
রাজশাহীতে মাদক মামলার আসামির সঙ্গে নিজের ও বাবার নামের মিল থাকায় বিনা দোষে একদিন জেল খেটেছেন এক কলেজছাত্র। তবে আসামি শনাক্তে ভুল বুঝতে পেরে পুলিশ আদালতে একটি প্রতিবেদন দিলে মঙ্গলবার আদালত এই কলেজছাত্রকে মুক্তি দিয়েছেন।
এর আগে গত সোমবার ভোরে ওই কলেজছাত্রকে আটক করা হয়। পরে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই কলেজছাত্রের নাম ইসমাইল হোসেন (২১)। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার ফাজিলপুর মহল্লার আব্দুল করিমের ছেলে। তাঁর মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম। ইসমাইল হোসেন গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
মাদক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক ওই আসামির নামও ইসমাইল হোসেন (২০)। তাঁর বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার লালবাগ হেলিপ্যাড মহল্লায়। বাবার নাম আবদুল করিম। তাঁর মায়ের নাম মোসা. বেলিয়ারা। আসামি ইসমাইল পেশায় কাঠমিস্ত্রি।
মাদক মামলায় জামিন নেওয়ার পর তিনি ভারতের চেন্নাই গিয়ে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। মাদক মামলার ওই আসামি এবং ওই কলেজছাত্রের দুজনের নিজের নাম এবং তাদের বাবার নামও একই। মহল্লা এবং মায়ের নাম আলাদা হলেও পুলিশ কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনের ভাই আব্দুল হাকিম রুবেল জানান, গত রোববার (১২ মে) এশার নামাজের সময় গোদাগাড়ী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান তাদের বাড়ি যান। এ সময় তিনি একটি মাদক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখিয়ে তার ভাই ইসমাইল হোসেনকে ধরে নিয়ে যান।
ওই সময় তাঁরা পুলিশকে জানান, তার ভাইয়ের নামে কোনো মাদক মামলা নেই। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও নেই। পুলিশ কোনো কথা না শুনেই ধরে নিয়ে যায়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত পৌনে ১১টার দিকে গোদাগাড়ীর মাদারপুর জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে রাজমিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে রাজশাহী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল। রাতেই তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গোদাগাড়ী মডেল থানায় মামলা করেন ডিবির এসআই ইনামুল ইসলাম।
পরদিন তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর এক মাস পর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এরপর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসমাইল হোসেন জামিনে মুক্তি পান। কিছুদিন পর তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজে চেন্নাই চলে যান। তার বাবা ছয় বছর ধরেই সেখানে আছেন।
এই মামলায় কলেজছাত্র ইসমাইলকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিনকে পরিবারের সদস্যরা অবহিত করলেও তিনি তাকে না ছেড়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। পরে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল রানাকে অবগত করেন। পরে সোহেল রানা বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখার জন্য থানা-পুলিশকে নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ খোঁজখবর নিয়ে দেখতে পায়, আসামি ইসমাইলের বদলে অন্য ইসমাইলকে ধরা হয়েছে।
জানতে চাইলে মঙ্গলবার দুপুরে গোদাগাড়ী থানার ওসি আবদুল মতিন বলেন, আমরা সোমবার ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠাই। দু’জনের নিজের এবং বাবার নাম একই থাকার কারণে ভুলটা হয়ে গেছে। পরে ভুল বুঝতে পেরে সোমবার বিকেলেই আমরা একটা প্রতিবেদন দিয়েছি। মঙ্গলবার আদালত ইসমাইলকে মুক্তি দিয়েছেন। আসল আসামি ভারতে পালিয়ে আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। দেশে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
আরএইচএফ/এসআর