এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে এবারও একসঙ্গে প্রায় ছয় লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছে বলে দাবি আয়োজকদের। প্রখর রোদ আর তীব্র দাবদাহেও নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে বৃহৎ এই জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশী দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লিরা।
বৃহস্পতিবার উত্তরের ১৬ জেলাসহ সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মিনার ও মাঠ গোর-এ শহীদ ময়দানে এবার ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছিলেন ফরিদপুর ও চুয়াডাঙ্গার কয়েকজন মুসুল্লি।
এশিয়ার বৃহত্তম ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দান ও ঈদগাহ মিনারটি। সাড়ে ২২ একর আয়তন বিশিষ্ট এই ঈদগাহে ১৯৪৭ সাল থেকে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও আধুনিক নির্মাণশৈলীতে এই ঈদগাহে বৃহৎ পরিসরে ঈদের জামাত শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। কিন্তু মাঝখানে করোনা পরিস্থিতির জন্য দুই বছর এই ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়নি ঈদের জামাত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সকাল ৯টায় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হওয়ায় এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মুসল্লি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ঈদুল ফিতরের জামাত।
তীব্র গরম উপেক্ষা করে সকাল ৭টা থেকেই মুসল্লিরা সমবেত হতে শুরু করেন এই ঈদগাহে। ঠিক ৯টায় শুরু হয় নামাজ। এখানে ঈমামতি করেন মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহসহ প্রধানমন্ত্রীর জন্য শান্তি কামনা করে করা হয় মোনাজাত।
বৃহৎ এই জামাতে অংশ নেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহম্মেদ, দিনাজপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনতা।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম মুসুল্লিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, রমজানে আমরা যে তাকওয়া অজর্ন করেছি তা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।
নামাজ শেষে বৃহৎ এই জামাতের প্রধান উদ্যোক্তা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, একসঙ্গে ছয় লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি শান্তিপূর্ণ ভাবে নামাজ আদায় করেছে এই জামাতে। সফল ভাবে ঈদের জামাত সম্পন্ন হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি।
তিনি বলেন, এশিয়ার মধ্যে বৃহৎ এই জামাত আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি লাভের জন্য ইতিমধ্যেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ঈদগাহ মিনার ও ময়দানটি আরও সম্প্রসারণ করার জন্য দেশী-বিদেশী কনসালটেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় মিনারগুলোর খবরাখবর নেয়া হচ্ছে।
এদিকে বৃহৎ এই জামাতে অংশ নিতে পেরে খুশী মুসল্লিরা। তারা জানান, এবার ঈদের জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে দূর দূরান্তের মুসুল্লিরা এসে অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন। গোর-এ শহীদ ময়দানে বৃহৎ পরিসরে ঈদের জামাত শুরু হওয়ার পর থেকে এবার সর্বোচ্চ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছেন। এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন তারা।
শুধু দিনাজপুর ও আশপাশের জেলা নয়, এই জামাতে নামাজ আদায় করতে আসেন দূর দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা।
ঢাকা থেকে আগত মুসল্লি ব্যাংক কর্মকর্তা ইয়ানুর ইসলাম (৪০) ও নীলফামারী জেলা থেকে এসেছিলেন কাউয়ুম হোসেন (৬৩) বলেন, তারা এই জামাতের কথা শুনেছেন। এবার তারা দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশী।
তারা বলেন, এত বড় মাঠ ও এতো মুসল্লির সঙ্গে এটাই তাদের প্রথম নামাজ। এই অনুভূতি কাউকে বোঝানোর নয়। তারা এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে এবং ব্যবস্থাপনা দেখে খুব খুশি।
এখানে নামাজ আদায় করে একই রকম অনুভূতি প্রকাশ করেন জয়পুরহাট থেকে আসা অলিম উদ্দিন (৫৫)। তিনি বলেন, এশিয়ার বড় জামাতের কথা শুনে ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছি। এটি আসলেই বৃহৎ জামাত। এই বড় জামাতে নামাজ আদায় করেছি বেশি সওয়াবের আশায়। তবে দূরের মুসল্লিদের জন্য বিশেষ ট্রেন কিংবা বিশেষ কোনো পরিবহন ব্যবস্থা করলে মুসল্লিরা এখানে সহজেই আসতে পারতো।
বগুড়া থেকে আসা সাদেকুল ইসলাম বলেন, ঈদের কারণে যানবাহন পেতে সমস্যা হয় দেখে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে নামাজ আদায় করতে আসেননা। যদি প্রতিটি জেলা থেকে বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে মুসুল্লি আরও বেড়ে যাবে।
বৃহৎ এই জামাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের জন্য স্থাপন করা হয় শৌচাগার, ওজুর ব্যবস্থা। বসানো হয় মেডিক্যাল টিম। পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নেওয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সুষ্ঠু ভাবে নামাজ সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।
-এএইচ/এমএ