তথ্য গোপন করে ফায়ার লাইসেন্স নেয় বেইলি রোডের ভবনটি
Published : Monday, 4 March, 2024 at 3:42 PM Count : 187
রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিনকজি কটেজ ভবন ব্যবহারে পদে পদে মিথ্যা তথ্য ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ভবনটি নকশা অনুযায়ী নির্মাণের কথা বলা হলেও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। ওপরের তিনটি ফ্লোর আবাসিক ব্যবহারের কথা থাকলেও সেগুলোতেও রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে।
আবাসিকের অনুমোদন থাকা ভবনটির অষ্টমতলার বাণিজ্যিক ব্যবহার হলেও সেখানে সংযোগ দিয়েছে তিতাস গ্যাস। একই ফ্লোরে ফায়ার লাইসেন্স দেয় ফায়ার সার্ভিস। কেবল অগ্নিনিরাপত্তাই নয়, নিশ্চিত করা হয়নি ভবন ব্যবহারে রাজউকের সাধারণ নির্দেশনাও। ফায়ার লাইসেন্স গ্রহণেও বিভিন্ন জায়গায় তথ্য গোপন করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, বেজমেন্টসহ গ্রিনকজি কটেজ মূলত একটি নয় তলা ভবন। রাজউক থেকে দ্বিতীয় থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ছয় থেকে আট তলা পর্যন্ত আবাসিক হিসেবে ব্যবহার হওয়ার কথা। এছাড়া নিচতলাও বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বেজমেন্টে পার্কিংয়ের জায়গা আছে। অথচ ভবনটিতে কোনো আবাসিক ফ্লোর ছিল না। প্রতিটি ফ্লোরই ব্যবহার হয়েছে বাণিজ্যিক হিসেবে। এরপরও আট তলায় একটি বৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তিতাস।
এ অবস্থার মধ্যেও গত বছরের ০৫ সেপ্টেম্বর ২২টি শর্ত দিয়ে ভবনের অষ্টম তলার একটি রেস্টুরেন্টের ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে। আমব্রোসিয়া রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড মিউজিক ক্যাফেকে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়। অথচ রাজউকের অনুমোদন অনুযায়ী এখানে রেস্টুরেন্টই থাকার কথা নয়। ফায়ার সার্ভিস এখানে শর্তগুলো জুড়ে দিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে তাদের দায় সেরেছে। এই সময়ের মধ্যে অগ্নিদুর্ঘটনায় জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি হলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে বলেও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ভবনের ফায়ার লাইসেন্স অনুমোদনে স্বাক্ষর দেওয়া ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর অধীর চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত তদবিরের কারণেই ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্সটি দিতে বাধ্য হয়েছে। একজন রীতিমতো এ জন্য ব্ল্যাকমেইল করেছেন।’
শুক্রবার পুড়ে যাওয়া ভবনটি পরিদর্শনে এসে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। তখন তিনি বলেন, যে ভবনে আগুন লেগেছে এটাকেও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।
গ্রিনকজি কটেজ ভবন কর্তৃপক্ষ ফায়ার লাইসেন্সের শর্তের কোনো তোয়াক্কাই করেনি। এ কারণেই আগুনে প্রাণহানি বেড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) এবং তদন্ত কমিটির প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, একটি শর্তও তারা ঠিক ভাবে পালন করেনি। প্রতিটি নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে। এত ক্ষয়ক্ষতি এসব কারণেই হয়েছে। আমাদের নির্দেশনাগুলো মানলে জীবন ও সম্পদহানি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা যেত।
-এমএ