For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রাজশাহীতে ৫০ কোটি টাকার হলুদ বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

Published : Thursday, 22 February, 2024 at 8:45 PM Count : 253


রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মসলা জাতীয় শস্য হলুদ চাষ। শুধুমাত্র উঁচু জমি, পতিত জমি কিংবা বাড়ির আঙিনাই নয়, আমসহ অন্যান্য বাগানেও সাথী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে হলুদ। মানে ও গুণে ভালো হওয়ায় রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় সুনাম কুড়িয়ে চলছে ফসলটি।

জানা যায়, উপজেলায় এক হাজারের অধিক মানুষের জীবিকা জড়িয়েছে হলুদ চাষ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিক্রিতে। কাঁচা হলুদকে বিক্রির উপযোগী করতে গড়ে উঠেছে শতাধিক চাতাল। কাঁচা হলুদ বাছাই থেকে শুরু করে হলুদ সেদ্ধ, শুকানো ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। বিগত কয়েক বছরে হলুদ ব্যবসায় নেমে বেশ লাভবান হয়েছেন ব্যবসায়ীরাও।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গত মৌসুমে উপজেলায় হলুদের আবাদ হয়েছিল ৪৭০ হেক্টর জমিতে। যেখানে শুকনা হলুদ পাওয়া যায় ২ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ৫৭৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয় হলুদ। তবে বৃষ্টিপাতের অপেক্ষায় শেষ পর্যন্ত কিছুটা কমেছে হলুদ উৎপাদন। এবছর ১ হাজার ৭১৫ মেট্রিক টন শুকনা হলুদ পাওয়া গেছে। সেই অনুযায়ী হলুদের বাজার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪৫ কোটি টাকায়। ইতোমধ্যে হলুদ মজুদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
হলুদ চাষিরা বলছেন, হলুদের বীজ জমিতে বপণের পর পাঁচ থেকে ছয় মাস লাগে হলুদ পরিপক্ক হতে। তখন বিঘাপ্রতি কাঁচা হলুদ হয় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মণ। এরপর সেই কাঁচা হলুদ গরম পানিতে সেদ্ধ করে সমতল জমিতে চাতাল করে শুকাতে হয়। ২০ থেকে ২৫ দিন রোদে শুকানোর পর শুকনো হলুদ পাওয়া যায়।  প্রকারভেদে শুকনা হলুদ বিক্রি হয় কেজি প্রতি ১৬০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। আর কাঁচা হলুদ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে। চার থেকে পাঁচ মণ কাঁচা হলুদ শুকানোর পর পাওয়া যায় এক মণ শুকনা হলুদ।

তাদের দাবি, কৃষকরা আগে মাঠভর্তি হলুদ চাষ করতেন। তখন উৎপাদনও ভালো হতো, দামও বেশি পাওয়া যেত। এখন বেশিরভাগ চাষিই আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে হলুদ চাষ করেন। ফলে হলুদের ফলন কিছুটা কম হচ্ছে। আগে যেখানে বিঘা প্রতি ১০০ মণ পর্যন্ত কাঁচা হলুদ পাওয়া যেত, সেখানে ৭০ থেকে ৮০ মণ হলুদ পাওয়া যাচ্ছে। তবে হলুদ উত্তোলনে ও সেদ্ধ কাজ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অনেকেই।

উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, বিগত সময়ে চরের মাটিতে কখনোই হলুদের চাষবাদ করেননি। কিন্তু গত বছর বছর হলুদ চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন তিনি। ভাল দাম পাওয়ায় হলুদ চাষে আবারও আগ্রহী হয়েছেন। এবার উচু জমিতে হলুদ আবাদ করেছেন তিনি।

বাউসা গ্রামে নিজের আম বাগানে হলুদ চাষ করেছেন শাহাজাহান আলী। শিক্ষকতার পাশাপাশি চাষাবাদও করছেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছর এক বিঘা আম বাগানে হলুদ লাগিয়েছি। সাধনা ও শ্রম দিয়ে চাষাবাদ করলে যে কোন আবাদে সাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

আড়ানী পৌর এলাকার গোচর গ্রামের শিক্ষক আমানুল হক আমান বলেন, আগে ফাঁকা জমিতে হলুদ চাষ করতাম। এখন আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করছি। পাঁচ হাজার টাকার বীজ হলুদ কিনে রোপণ করেছি। হলুদের গাছ গজানোর সময় দু’বার সেচ, প্রয়োজন অনুযায়ী সামান্য রাসায়নিক সার ও কিটনাশক দেয়া লাগে। এতে যে পরিমাণ হলুদ উৎপাদন হবে, তাতে খরচের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি টাকা আয় হবে।

একই পৌর এলাকার জোতরঘু গ্রামের কৃষক সুজাত আহম্মেদ তুফান বলেন, প্রথম কয়েক দফা জমি চাষাবাদ করে সার দিয়ে জমি প্রস্তুত করার পর বীজ বপন করতে হয়। আগে হলুদ চাষে তেমন কীটনাশক ব্যবহার করা লাগতো না। এবছর হলুদে রোগ দেখা দেওয়ায় কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। এক বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করতে ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।

একই এলাকার হলুদ ব্যবসায়ী আসরাফ আলী বলেন, আগে আড়ানী এলাকার কৃষকরা হলুদ বেচা-বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করতাম। আড়ানী পৌর বাজারে সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দু’দিন হলুদের হাট বসে। সেখানে প্রতি হাটে ১০০ থেকে ৩০০ মণ হলুদ বেচাকেনা হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুকনো হলুদ ও হলুদের গুড়া সরবারহ করি বলেও জানান তিনি।

বাজারের মোল্লা ট্রেডার্সের একটি কারখানায় শুকনা হলুদের পরিচর্যা ও বাছাই করছিলেন শ্রমিকরা। সেখানে মোল্লা ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক নূর মোহাম্মদ মোল্লা বলেন, প্রতিবছর ৫ থেকে ৭ হাজার মণ শুকনা হলুদ বিভিন্ন কৃষকদের কাছ থেকে কিনি। তারপর সেই হলুদ কারখানায় বাছাই করা হয়। বাছাইয়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন। বাছাই শেষে আকৃতিভেদে প্যাকেটজাত করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। আবার সরাসরি হলুদের গুঁড়া তৈরির কোম্পানির কাছেও হলুদ বিক্রি করা হয়।

আড়ানী পৌরসভার কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক জানান, এ এলাকায় যে পরিমাণ হলুদ চাষ হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণে সরকার বাজারে হলুদের ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে দেশে কখনোই হলুদের সঙ্কট পড়বে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আগের চেয়ে আবাদের পরিমাণ কমলেও হেক্টর প্রতি হলুদের উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকরাও হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আগে যেখানে কৃষকরা হলুদ লাগিয়ে পরিচর্যা না করে ফেলে রাখতেন। এখন সেখানে সেচ-সার ও কীটনাশক দেওয়ায় হলুদের উৎপাদন বেশি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, হাইব্রিড, বারি ও উফসী জাতের কিছু হলুদের উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে হলুদ চাষে কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এখন চেষ্টা করা হচ্ছে, স্থানীয় জাত বাদ দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ উদ্ভাবিত বেশি ফলনের হলুদ যাতে কৃষকরা চাষাবাদ করেন সেই বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে।


আরএইচ/এমবি


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,