For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

নেশা থেকে ছবি আঁকার পেশায় রাজশাহীর সাদিতউজজামান

Published : Tuesday, 13 February, 2024 at 9:35 PM Count : 291


টি-ব্যাগে কিংবা ওষুধের খোসায় আঁকেন ছবি। এমনকি বাদ যায় না ইনহেলারও। প্রস্তুত করেন বইয়ের প্রচ্ছদও। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও এক সময়ের নেশা থেকে ছবি আঁকাই এখন পেশায় পরিণত হয়েছে রাজশাহীর সাদিতউজজামানের।

সাদিতের আঁকা টি-ব্যাগের ছবিগুলোতে উঠে এসেছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। ফেলে দেওয়া টি-ব্যাগে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, কবি নজরুল, মাশরাফি, সাকিব, লাল-সবুজের পতাকা, ধর্মীয় সম্প্রীতি, রঙিন কৃষ্ণচূড়া কিংবা কালবৈশাখী ঝড়, পরিবেশ-প্রকৃতি যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় টি-ব্যাগের সেই ছোট্ট ক্যানভাসে।

একইভাবে বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, কবিতার বইয়ে উঠে আসে তার আঁকা বিভিন্ন চিত্র। প্রচ্ছদগুলোতে রঙ তুলির কাজগুলো বেশি করা হয়। এছাড়া ওষুদের খোসায় আঁকছেন লিওনেল মেসি ও নেইমারের ছবি। ইনহেলারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে টম অ্যান্ড জেরি, হুমায়ূন আহমেদ এর নিলাবতী ইত্যাদি।
সাদিতউজজামান বলেন, রিসাইকেল আর্ট নিয়ে এক্সপ্রেরিমেন্ট করি দীর্ঘদিন থেকে। ব্যবহৃত টি-ব্যাগের উপরে বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকি। ছবি আঁকতে আঁকতে ছবির মানুষ হয়ে গেছি। টি-ব্যাগে আঁকা ছবি দেখে পছন্দ করেছেন এমন প্রচুর লেখক রয়েছেন। তারা চেয়েছেন যেন আমি তাদের বইয়ের প্রচ্ছদগুলো তৈরি করি। বাংলাদেশের প্রথম সারির প্রকাশনীগুলোর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে। যেমন অন্য প্রকাশ, অন্য ধারা, এশিয়া পাবলিকেশন। এছাড়া অন্য প্রকাশনীগুলোর সঙ্গেও কাজ করেছি। এছাড়া ওষুধের বাদ দেওয়া খোসা ও ইনহেলারের উপরে বিভিন্ন ছবি এঁকেছি।

ছবি আঁকার বিষয়ে সাদিতউজজামান বলেন, ছবি আঁকা নিয়ে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তবুও ছবি আঁকা আমার পছন্দের কাজ। আমার কখনও পরিকল্পনা ছিলো না যে, ছবি আঁকা পেশা হিসেবে নেব। ছবি আঁকা নেশা থেকে পেশায় পরিণত হয়েছে। আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা পেইজ রয়েছে। তার নাম ‘টি-ব্যাগ স্টোরেজ’। সেই পেইজে আমার কাজগুলো দেখেছেন অনেক লেখক। এছাড়া কিছু লেখক আছে, যারা আমার এই কাজগুলো দেখেন। তারা প্রচ্ছদের জন্য ছবি আঁকার বিষয়ে আমাকে বলেন।

টি-ব্যাগে ছবি আঁকার বিষয়ে সাদিতউজজামান বলেন, মূলত ব্যবহারের পরে টি-ব্যাগগুলো সবাই ফেলে দেয়। কোনো কাজে আসে না। আমি ভাবলাম কিছু করা যায় কিনা। তারপর বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করি। পরে টি-ব্যাগে ছবি আঁকা দেখেছিলাম রুবি সেলফিয়ার। তিনি টি-ব্যাগে ছবি আঁকেন। তিনি ছাড়াও বেশকিছু আর্টিস্ট কাজ করেন। তাদের মধ্যে রুবি সেলফিয়ার কাজগুলো আমার বেশি ভালো লাগত। সেখান থেকেই আমার অনুপ্রেরণা পাওয়া।

প্রচ্ছদ আঁকার বিষয়ে সাদিতউজজামান বলেন, একটা প্রচ্ছদ কেমন হবে, এটা অনেক কিছুর উপরে নির্ভর করে। প্রথমত লেখকের চাহিদা থাকে। এছাড়া প্রকাশনের একটা প্রতিক্রিয়া থাকে। তাদের সম্মিলত চেষ্টায় একটা ভালো প্রচ্ছদ গড়ে তোলা হয়। একজন লেখক তার গল্পে কি লেখেছেন, কি বোঝাতে চেয়েছেন, এ বিষয়গুলো যত সহজভাবে জানা যাবে তত ভালো প্রচ্ছদ তৈরি করা সম্ভব হবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০টি বইয়ের প্রচ্ছদ করেছি। বর্তমানে প্রচ্ছদের কাজটা ফুল টাইম করা হচ্ছে। প্রচ্ছদ আঁকা নিয়ে অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া হয় না। একটা সময় ছবি আঁকা নেশা ছিল, কিন্তু এখন পেশায় পরিণত হয়েছে।

বই মেলায় প্রচ্ছদের বিষয়ে সাদিতউজজামান বলেন, ছবি আঁকার সঙ্গে সঙ্গে প্রচ্ছদের কাজে প্রবেশ করা। ২০১৬ সালের শেষের দিকে টি-ব্যাগের উপর কাজ শুরু করি। আর ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদের কাজের শুরু। তবে ২০১৯ সালের বই মেলায় আমার আঁকা প্রচ্ছদের বই বের হয়। প্রথম বছর তিনটি বই ছিল মেলায়। প্রথম বইটি ছিল- লেখক ফুয়াদ খন্দকারের ‘মায়া মায়া লাগে’। তার পরে রুহুল আমিনের ‘মধ্যবৃত্ত’ এবং লুৎফর হাসানের ‘বগি নম্বর জার্নি’। এই বইগুলো দিয়েই প্রচ্ছদে আসা।

এবারের বই মেলায় সাদিতউজজামান করা প্রচ্ছদের মধ্যে ছিল- সাদাত হোসাইন এর ‘শঙ্খচূড়া’, কবি রুহুল আমিনের ‘উলুন’, মুন্নি আক্তার প্রিয়ার ‘যদি দাও নির্বাসন’ মিদহাদ আহমদের ‘বৃহন্নলার কবিতা’, সাদিতউজজামানের ‘হমন্ত আসার আগে’, মুহাম্মদ ইব্রাহীমের ‘কলকাতা কেলেঙ্কারি’, অনিমা অনির ‘মন-বাস্তু’, সালাম সুলতানার ‘ফুরায় বেলা’, নাজনীন নাহারের ‘ঘাসদের ফাগুন’, সাবিকুন নাহার নিপার একদিন প্রতিদিন’, জান্নাতুন ইভার ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, রেশমী রফিকের ‘তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আর প্রাণ’, সাঈদা আম্বিয়া সুলতানার পঞ্জিকার হিসেবে এখন বসন্ত’ ইত্যাদি।

সাদিতউজজামান আরও বলেন, ছোটবেলা থেকে নিজের আনন্দের, নিজের শখের ছবি আঁকি। সেখান থেকে আমার আঁকার যাত্রা শুরু। ছবি আঁকায় আমার কোন প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি, আর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে বিবিএ, এমবিএ করেছি। বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরিও করেছি। ছবি আঁকব বা ছবি আঁকাকে পেশা হিসেবে নেব কখনও ভাবিনি। তুরস্কের টি-ব্যাগ ফিল্টার পেপার উৎপাদন কোম্পানি পেলিপেপারের ক্যাটালগ কাভারেও শোভা পাচ্ছে আমার ছবি।

প্রচ্ছদ এঁকে উপার্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ হয়ে থাকে। লেখকরা আমাকে তাদের চাহিদার কথা বলেন, সেই চাহিদা অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করি। সর্বোচ্চ চেষ্টা করি একজন লেখকের চাওয়াটাকে তুলে ধরতে।

এ বিষয়ে লেখক নাজমিন নাহার বলেন, ‘ওর (সাদিতউজজামান) কাজের আমি ফ্যান। সাদিতউজজামানের টি-ব্যাগ স্টোরিগুলো আমার অনেক ভালো লাগতো। তারপর থেকে সাদিতউজজামানের সঙ্গে পরিচয়। সাদিতউজজামানের কাজ ও প্রেজেন্টেশন অনেক ভালো লাগে আমার। তার মনন ও দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ভালো। সাদিতউজজামানের কাজের বিষয়গুলো আমার কাছে একটু বেশি ভালো লাগে। আমার ২৫টি বইয়ের মধ্যে ২১টি বইয়ে প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছেন সাদিতউজজামান।’


এফএ/এমবি

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,