দেশ জুড়ে শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতায় পটুয়াখালীর দশমিনায় বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটিতে বৃদ্ধি পেয়েছে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। শীতজনিত এসব রোগে আক্রান্তের বেশির ভাগই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু।
চিকিৎসকরা বলছেন, ঠান্ডার তীব্রতায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়াসহ এ সময়টাতে শিশুদের প্রতি বাড়তি সতর্কতার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সোমবার সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ৬৫ জন রোগী। এর মধ্যে ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়া রোগে ১০ জন ও ডায়রিয়ার ১৫ জন রোগী রয়েছেন। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
উপজেলা সদরের মোল্লাপট্টি এলাকার বাসিন্দা তানজিলা ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'আমার ৬ মাস বয়সের শিশুপুত্র রিমন গত তিন দিন ধরে প্রচন্ড ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভোগায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তার আমার শিশুপুত্রকে ভর্তি করে চিকিৎসা করছেন।'
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড চরহোসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা হালিমা বলেন, 'আমার দেড় বছরের শিশু সন্তান সাজিদ তিন দিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। গত দুই দিন ধরে ছেলেকে নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি আছি।'
উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড আদমপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুন্নাহার বেগম বলেন, 'গত ছয় দিন ধরে আমার ১১ মাস বয়সের শিশুপুত্র ওমর ফারুক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। চার দিন ধরে আমার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা চালাচ্ছি।'
এদিকে কিছু রোগীর স্বজনরা বলছেন, অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকায় হাসপাতালে বেড পাওয়া যাচ্ছেনা। বাড়তি বেড করে থাকতে হচ্ছে রোগী নিয়ে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের মতো শীতকালীন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৬২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম সরোয়ার ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'শীতের শুরু থেকেই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে এ ধরনের রোগীর চাপ বেশি। এতে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাসতন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ (অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন), নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি। বয়স্কদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত সমস্যা বেড়েছে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া এড়াতে বাড়িতে শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে।'
তিনি বলেন, 'এ সময়ে শিশুদের সুস্থ রাখতে শীতের কাপড় পরিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। শিশুর মাথায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না এবং শিশুদের নিয়ে অহেতুক বাড়ির বাইরে ঘোরাফেরা করা যাবে না।'
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান রহমান ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'হঠাৎ শীতের তীব্রতা বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারি মাসে শিশুরা শ্বাসকষ্ট নিয়ে বেশি ভর্তি হচ্ছে। বুকের পাঁজরের নীচের অংশ দেবে যাওয়া, জ্বর, শ্বাস নেয়ার সময় শব্দ, বমি এসব নিউমোনিয়ার লক্ষণের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসতে হবে।'
-এসটি/এমএ