তাপমাত্রার পারদ নামলো ৫ ডিগ্রিতে। এতে করে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উত্তরের হিমাঞ্চল জেলাখ্যাত পঞ্চগড়। টানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারনে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিররতা।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারী) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গতকাল বৃহস্প্রতিবার (২৫ জানুয়ারী) তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে তাপমাত্রা রেকর্ডের তথ্যটি জানান জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যাবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর আজ শুক্রবার তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইছে এ জেলায়। গত ২৩ জানুয়ারী থেকেই এ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। এর মধ্যে ২৩ জানুয়ারী ৭ দশমিক ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ডে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ ও গতকাল বুধবারসহ আজ দুইদিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে এ জেলায়।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন দেশের এই উত্তরের জেলা। বৃষ্টির মতো ঝরছে বরফ শিশির। হিম বাতাসে ঝরছে শীতের পারদ। শহর ও গ্রামীণ সড়কগুলোতে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। শীতের তীব্রতায় জর্জরিত শিশু ও বৃদ্ধরা। লাগাতার শীতের কারণে দূর্ভোগ বেড়েছে খেটে খাওয়া মানুষদের। কাজকর্ম কমে যাওয়ায় দিন কাটছে অভাব-অনটনের ভেতর। প্রয়াজনের বাইরে শহরের অভিজাত মানুষজন ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের মানুষের শীত উপেক্ষা করেই কাজে যেতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, আজকে তাপমাত্রাটা মনে হয়েছে জিরোতে নেমে এসেছে। এতো ঠান্ডা এ শীত সময়ে মনে হয়নি। প্রচন্ড ঠান্ডা। ঘরের বাইরে বের হওয়া দায়।
গ্রামীণ নারীরা জানান, এ বছরের সবচেয়ে কঠিন ঠান্ডা বুঝি আজকে। ঘরের আসবাবপত্র, বিছানাপত্র, ঘরের মেঝে পর্যন্ত বরফের মতো মনে হয়েছে। হাতপা কাইয়া (অবশ) হয়ে আসার মতো। খুব ঠান্ডা।
সকালে আরশেদ আলী, সায়েদ আলীসহ কয়েকজন ভ্যান চালক জানান, ভাই প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভব হয়েছে। ভোর থেকে গতদিনের থেকে প্রচন্ড ঘন কুয়াশা। শীতের কারণে তো ভ্যানে কামাই নাই। তার মধ্যে প্রচন্ড ঠান্ডায় নাজেহাল অবস্থায় পড়েছি।
শীতের কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগ। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন লোকজন। কামাই-রোজগার কমে যাওয়ায় অনেকে শীতজনিত রোগ বেড়ে যাওয়ায় টাকার অভাবে ঔষুধপত্র কিনতে পারছেন না অনেকে।
চিকিৎকরা জানান, শীতে হাসপাতালে শীতজনিত রোগ নিয়ে প্রচুর রোগী আসছে। বিশেষ করে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক শিশু। শীত বাড়লে এই রোগ আরো বাড়বে। শিশুদের গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। সাধারণ সর্দি-কাশিতে যতœ না হলে জটিলতা বাড়তে পারে। শীতে শিশুদের সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বাড়ে। একই সঙ্গে চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার মতো রোগও বাড়ছে। শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না। শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।
জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যাবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, আজকে এ জেলায় ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ তাপমাত্রা রেকর্ডে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইছে এ জেলায়। গত কয়েক দিন থেকেই এ জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে এ অঞ্চলে। কুয়াশা ও হিমশীতলের বাতাসের কারণে তীব্রশীত অনুভূত হচ্ছে।
এসকেডি/এসআর