For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

ইঁদুরের গর্ত থেকে সুগন্ধি ধান সংগ্রহে ব্যস্ত আদিবাসী নারী-শিশুরা

Published : Sunday, 17 December, 2023 at 1:05 PM Count : 188

দিনাজপুরে আমন মৌসুম একেবারে শেষের দিকে। ক্ষেতে এখনো যে ধান রয়েছে সেগুলো সুগন্ধি জাতের ধান। সেই ধান ক্ষেতে দল বেধে মাঠে ইঁদুরের গর্ত খুঁজছেন আদিবাসী নারী ও শিশুরা। ইঁদুরের গর্ত খুঁজে পেলেই শুরু করছেন খোঁড়াখুঁড়ি। সেই গর্তের ভেতর ইঁদুরের রাখা ধানের শীষ খুঁজে বের করে আনছেন তারা। এ ধান শুকিয়ে তার তৈরি করবেন আতব চাল। যা দিয়ে তৈরি করে খাবেন শীতকালিন পিঠা-পুলি ও খেজুরের রস দিয়ে তৈরি পায়েশ।

শনিবার দুপুরে দিনাজপুরের সদর, চিরিরবন্দ ও খাসমামা উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধানের শীষ বের করে আনা আদিবাসী নারী ও শিশুদের দেখা মেলে। তাদের বাড়ি দিনাজপুরের সদর, চিরিরবন্দর ও খানাসাম উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। 

সবাই ক্ষুদ্র নৃ-তান্ত্রিক গোষ্ঠির সম্প্রদায়ের মানুষ। মৌসুমে ধান কাঁটা শুরু হলেই সকালে তারা দুমুঠো ভাত খেয়েই বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন মাঠে। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে হিম শীতল বাতাসের মধ্যেই সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলে তাদের ধানের শীষ সংগ্রহের কাজ। এসব নারী শিশুদের কারও হাতে খোন্তা, কারও হাতে কোদাল, কারও হাতে শাবল আবার কারও হাতে বস্তা দেখা গেছে।

ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান সংগ্রহ করতে সদর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের আদিবাসী লিপা টুটু (৫৫) মাঠে এসেছেন তার নাত্নি সমি টুডুকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি বলেন, আমন মৌসুমে যেসব জমিতে ধান কাঁটা হয়ে যায় সেসব ক্ষেত খামার থেকে আমরা ধানের শীষ সংগ্রহ করি। তবে বছরের অন্য সময় রাস্তাঘাটে এবং হাঁট-বাজারে কাজ করে পেট চালাই। সুগন্ধি ধানগুলো শুকিয়ে আতব চাল করি আর অন্যান্য ধানগুলো সিদ্ধ করে চাল তৈরি করি। আতব চাল দিয়ে পিঠা-পুলি, খেজুর রসের পায়েশ ও পোলাও খেয়ে থাকি। সিদ্ধ চাল দিয়ে ভাত।
তিনি  বলেন, সব গর্ত খুঁড়ে ধান পাওয়াা যায় না। কোনো কোনো গর্তে ভালো ধান পাওয়া যায়। আবার কোনো গর্তে কিছুই পাওয়া যায় না। তবে এ কাজ করতে সাপের ভয়ও আছে। কারণ ইঁদুরের গর্তের মধ্যে অনেক সময় আবার সাপ থাকে। পরিশ্রমও অনেক। তারপরও পেটের দায়ে জীবন বাজি রেখে আমাদের এই কাজ করতে হয়।

এই দলের আরেক সদস্য রেখা রানী মন্ডল বলেন, কষ্ট হলেও আমরা এই কাজ করে মৌসুমে ১০ মণ পর্যন্ত ধান জোগাড় করতে পারি। আমরা অন্য মানুষের মাঠে দিনমজুরের কাজও করি।

দুর্গা রানী হেমরন নামে আরেক নারী বলেন, আমার স্বামী ভ্যান চালায়। আর আমি এখন এটা করছি। কয়দিন পর আমি আবার বোরো চারা রোপণের কাজ করব। সারা বছর আমরা এটা-ওটা করেই সংসার চালাই।

গৃহস্থ পরিবারের যখন ধান কাটা-মাড়াই ঘিরে যখন উৎসব চলছে। ঠিক তখনই ভূমিহীন পরিবারগুলোর শিশুরা খুঁজে বেড়াচ্ছে কৃষকের কেটে নেওয়ার সময় ঝরে পড়া ধান। সকাল বা বিকেল কিংবা মিষ্টি রোদে হাতে ব্যাগ ও কাঁধে কোদাল আর বাশিলা নিয়ে মাঠে ছুটছেন তারা। সারা দিন সংগ্রহ করছেন পাঁচ থেকে ছয় কেজির মতো ধানের শীষ। যখন ধানের পরিমাণ বেশি হয় তারা বিক্রি করে দেন। অনেকে আবার পিঠাপুলি খাওয়ার জন্য জমিয়ে রাখেন সেই ধান। এ ধান কুড়িয়ে কারো আবার বছরের একবেলা খাবার কিংবা বছরে অন্তত একদিন পিঠা খাওয়ার সুযোগ হয়।
 
শনিবার সকালে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের নেউলা গ্রামের কাউয়ার দোলায় ধান কুড়াতে ব্যস্ত শিশু সেলিম, গুলজার ও সাদেকুল। ওদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, কৃষকরা যখন ক্ষেত থেকে ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক ধানের ছড়া এমনিতেই পড়ে থাকে সেগুলো আমরা কুড়িয়ে থাকি। এছাড়াও ক্ষেতে ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে পাওয়া যায় অনেক ধান।

ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান সংগ্রহ করতে আসা শিশু লাপল হেমরন (১১) জানায়, আমার বাবা-মা পরের জমিতে কাজ করেন। আমন মৌসুমে আমরা ক্ষেত-খামার থেকে ধানের শীষ সংগ্রহ করি। অভাব অনটনের সংসারে ধান কুড়িয়ে শীতের সময় পিঠা খাব।

কৃষক জাকারিয়া বলেন, আগে মাঠজুড়ে ধান কুড়ানি শিশুদের আনাগোনা ছিল অনেক বেশি। এক সময়ে ধান কাটার একটা উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। এখন সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। শিশুরা এখন নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। আগের সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না।

কথা হয় সদর উপজেলার রামডুবি এলাকার  কৃষক দয়া রাম রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমন মৌসুমে সাধারণত ইঁদুর বেশি করে পাকা ধানের শীষ কেটে গর্তে নিয়ে যায়। এ সময়টাতে মাঠে ইঁদুরের উপদ্রব বেশি হয়ে থাকে। শুধু ইঁদুরের গর্ত থেকেই নয়, ধান কাটার পর ক্ষেতে ধানের যেসব শীষ পড়ে থাকে, সেগুলোও এই নারীরা কুড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে আমরা তাদের কিছু বলি না।
 
এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দর এলাকার স্বেচ্ছাসেবী মো. ফজলুর রহমান বলেন, মূলত দারিদ্র্যতার কারণেই পেটের জ্বালায় এসব নারীরা ক্ষেত-খামার থেকে ধান সংগ্রহ করেন। তবে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধানের শীষ সংগ্রহ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ অনেক সময় ইঁদুরের গর্তে সাপ থাকতে পারে। আর এতে যে কারও জীবন মৃত্যু মুখেও পড়তে পারে।

-এএইচ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,