ডাঙ্গোয়াল আতংকে সীমান্তের কৃষকরা
Published : Tuesday, 12 December, 2023 at 11:30 AM Count : 252
ভারত থেকে গরু চোরাকারবারী ডাঙ্গোয়াল (স্থানীয় নাম) আতংকে রয়েছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সীমান্তের অনেক কৃষক। ডাঙ্গোয়ালরা চোরাইপথে ভারত থেকে গরু এনে সীমান্ত এলাকার ফসলের খেত দিয়ে নিয়ে যায় আর এতে ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ডাঙ্গোয়ালদের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য রাত জেগে ফসলের খেত পাহারা দিচ্ছেন এসব কৃষক। সীমান্ত এলাকার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেও মিলছে না কোন প্রতিকার।
কৃষকরা বলেন, ডাঙ্গোয়ালরা গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত গরু বাংলাদেশে পাচার করেন। তারা সীমান্ত পার করে ভারতীয় গরুগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসে। সড়ক পথ ব্যবহার না করে ফসলের খেত দিয়ে এসব গরু পাচার করেন। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় ধান, সবজি, ভুট্টা, তামাক সহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করেন। ডাঙ্গোয়ালদের কারনে সীমান্ত এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বিশেষ করে শীতকালে ডাঙ্গোয়ালদের এই গরু পাচারকারী চক্রের কারণে আতংকে থাকতে হয় সীমান্ত এলাকার কৃষকদের।
কৃষক আবুল কাশেম (৬০) বলেন, "ডাঙ্গোয়ালরা ভারতীয় গরু পাচারের কারনে গেল এক সপ্তাহে তার এক বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। গভীর রাতে ডাঙ্গোয়ালরা ভারতীয় গরু নিয়ে ফসলের খেত দিয়ে গন্তব্যে চলে যায়। সীমান্তে আমার আরো ৫ বিঘা জমির ফসল নিয়ে চিন্তিত রয়েছি। মাঝ মাঝে রাতে এসে ফসলের খেত পাহারা দিচ্ছি"।
সোলেমান আলী (৫৮) বলেন, "আমি দুই বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছি। ডাঙ্গোয়ালদের কারনে প্রায় এক বিঘা জমির তামাক নষ্ট হয়েছে। বাকি এক বিঘা জমির ফসল নিয়ে চিন্তিত রয়েছি। ডাঙ্গোয়ালদের কারনে আমাদের আতংকে থাকতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা বিজিবির কাছে অভিযোগ করেছি কিন্তু প্রতিকার পাচ্ছি না"। 'ডাঙ্গোয়ালরা দুর্ধর্ষ হয়ে থাকে এ কারনে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদও করতে পারছি না' বলেন তিনি।
কৃষক রেজাউল করিম (৪৮) বলেন, "ডাঙ্গোয়ালদের কারনে তামাক, বোরো ধানের বীজতলা ও সবজিখেত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একমাস আগে আমন ধানখেতের ক্ষতি হয়েছে। শীতকালে, বিশেষ করে কুয়াশার সময়গুলোয় ডাঙ্গোয়ালরা বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে। ডাঙ্গোয়ালদের কারনে সীমান্ত এলাকার জমিতে চারা রোপণ করে ঘরে নিশ্চিন্ত ঘুমাতে পারি না। সীমান্তে ডাঙ্গোয়ালরা সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত হয়। বিজিবি তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থাও নিচ্ছে না"।
দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মেহেরুল ইসলাম বলেন, তিনি কয়েকজন ডাঙ্গোয়ালকে ফসলের খেত দিয়ে গরু আনতে নিষেধ করেছেন কিন্তু তা কোন কাজে আসছে না। স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ক্যাম্পের সদস্যরা এ ব্যাপারে প্রতিকার ব্যবস্থা কৃষকদের আশ্বস্ত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দূর্গাপুর সীমান্তের ডাঙ্গোয়াল সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, দূর্গাপুর সীমান্ত নয়, লালমনিরহাট জেলার প্রায় ২২টি সীমান্তরুটে প্রতিরাতে ভারতীয় গরু পাচার হচ্ছে। ভারতীয় গরু পাচার করার সময় কোনটি ফসলের খেত আর কোনটি সড়ক সেটা তাদের হুশ থাকে না।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দূর্গাপুর বিওপি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার মশিউর রহমান বলেন, কৃষকরা তার কাছে অভিযোগ করেছেন। ক্যাম্পে জনবল সঙ্কট থাকায় সবসময় সবদিকে টহল ব্যবস্থা জোরদার সম্ভব হচ্ছে না। ডাঙ্গোয়ালরা বড়ই দুঃসাহসি ও চালাক-চতুর বিজিবির নজরদারি ফাঁকি দিয়ে তারা ভারতীয় গরু পাচার করেন। কৃষকদের ফসল যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য চিহ্নিত রুটগুলোতে টহল বৃদ্ধি করবো,' তিনি বলেন।
এমএস/এসআর