নদীতে ছুড়ে ফেলে নবজাতককে হত্যা, বাবা গ্রেপ্তার
Published : Monday, 30 October, 2023 at 9:36 PM Count : 238
কুড়িগ্রাম-রংপুর সড়কের তিস্তা সেতু থেকে নদীতে ছুড়ে ফেলে নবজাতক পুত্র সন্তানকে হত্যার দায়ে ঘাতক পিতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গত ২৭ অক্টোবর বিকেলে তিস্তা ব্রিজে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ঘাতক বাবার নাম লাল মিয়া।
পুলিশ জানায়, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝার ইউনিয়নের রাবাইটারী এলাকায় লাল মিয়া-ছামিরন দম্পতির ৩ বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হয়। সে সময় লাল মিয়ার পরিবার তাদের বিয়ে মেনে না নেওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রী দু'জনে মিলে নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ তেতুলতলা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। চলতি বছরের ২২ অক্টোবর ছামিরন তার বাবার বাড়িতে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। জন্মের পর থেকে তার স্বামী সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করে আসছিলেন।
এমতাবস্থায় স্ত্রী ছামিরন প্রতিবাদ করলে গত ২৭ অক্টোবর বিকেলের দিকে স্বামী লাল মিয়া পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে নবজাতকের ডিএনএ পরীক্ষার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সে দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিস্তা ব্রিজের মাঝখানে স্বামী লাল মিয়া মোটরসাইকেল থামিয়ে নবজাতককে তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর কথা বলে বিরতি নেয়। দুধ খাওয়ানোর একপর্যায়ে ছামিরন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার স্বামী লাল মিয়া আকস্মিক ভাবে নবজাতককে তার কোল থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে ব্রিজের উপর থেকে তিস্তা নদীতে ফেলে দেয়। পরে দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে রংপুরের দিকে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় হতভম্ব ছামিরন আর্তনাদ ও কান্নাকাটি করলে সমবেত পথচারীদের সে ঘটনাটি জানাতে পারে। উপস্থিত লোকজন কাউনিয়া ফায়ায় সার্ভিসকে ফোন দিলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নবজাতকে খোঁজাখুজি করেও কোনো সন্ধান পাননি। পরে ছামিরন হতাশাগ্রস্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পথে তার খুনী স্বামীকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। পরে ছমিরন মোবাইলে সুকৌশলে স্বামীকে তার কাছে আসতে বলে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর রাতে ঘাতক লাল মিয়া ছামিরনের কাছে এলে কৌশলে তাকে সঙ্গে নিয়ে কচাকাটার বলদিয়া ইউনিয়নের শাহিবাজার গ্রামে তার ভাইয়ের শ্বশুর মো. আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে নিয়ে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে। খবর পেয়ে কচাকাটা থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক ভাবে এসে ঘাতক স্বামীকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লাল মিয়া সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
এ ঘটনায় একটি নিয়মিত হত্যা মামলা রুজু হয় এবং আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা ও সত্যতা স্বীকার পূর্বক বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন ঘাতক লাল মিয়া।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. রুহুল আমীন জানান, পিতা কর্তৃক নিজ নবজাতক পুত্র সন্তানকে হত্যা- একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। এ বিষয়ে নাগেশ্বরী থানায় গত ২৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে এবং ঘাতক পিতা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
-ওটি/এমএ