রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের প্রথম কর্মসূচি পালন করেছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার এ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের সব ইউনিটের নেতা-কর্মীদের নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকতে বলা হলেও এতে অংশ নেননি ‘কাঙ্ক্ষিত’ পদবঞ্চিত সিনিয়র নেতারা।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাত বছর পর গত শনিবার (২১ অক্টোবর) রাতে মোস্তাফিজুর রহমানকে সভাপতি ও আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরদিন থেকে কমিটিকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করে আসছিল ছাত্রলীগের কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া একটি অংশ।
তিন দিন ধরে তাঁরা ক্যাম্পাসে আন্দোলন, ভাঙচুর, মারধর ও কয়েক দফায় ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটান। এমনকি নতুন কমিটির নেতা-কর্মীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার বিকেলে তাঁরা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক ও কাজলা গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এর পর বিষয়টি সমাধানে সন্ধ্যায় নগরভবনে দুই পক্ষের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। বৈঠকের পর নতুন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।
রাতে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসেন তারা। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফুল দিয়ে বরণ করে তাদের কর্মী ও সমর্থকেরা।
বুধবার ছাত্রলীগের নতুন কমিটির প্রথম কর্মসূচিতে সব হল ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সব অনুষদ ও বিভাগ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সব নেতা-কর্মীকে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল গেটে উপস্থিত হওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আহ্বান জানান নতুন সভাপতি-সম্পাদক। কর্মসূচির মধ্যে ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও শহীদ ড. শামসুজ্জোহা স্যারের সমাধিতে ও শহীদ ফারুক হোসেনের স্মৃতিফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা।
তবে কর্মসূচিতে দেখা যায়নি আন্দোলনকারী ‘পদবঞ্চিত’ সাবেক সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি শাহিনুল ইসলাম ও তাওহীদুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা অনীক মাহমুদ, সাকিবুল হাসানকে।
আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে শুধু বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদকে কর্মসূচিতে দেখা গেছে।
‘কাঙ্ক্ষিত’ পদ না পেয়ে গত তিন দিন আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন নতুন কমিটির সহ-সভাপতি শাহিনুল ইসলাম। কর্মসূচিতে অংশ নেবেন কি না, জানতে চাইলে বুধবার সকালে মুঠোফোনে তিনি বলেন, কর্মসূচির বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে। আমি কিছুটা অসুস্থ, থাকতে পারব না।
ক্যাম্পাসে অবস্থান করার পরও কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ‘কাঙ্ক্ষিত’ পদ না পেয়ে আন্দোলনে অংশ নেওয়া নতুন কমিটির সহ-সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম বলেন, কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। তবে আমার এক আত্মীয় মারা যাওয়ায় যেতে পারিনি। অন্য কেউ অংশ নিয়েছেন কি না, সেটা আমি জানি না।
জানতে চাইলে নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের প্রথম কর্মসূচি ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সব নেতা–কর্মীকে কর্মসূচিতে থাকতে বলা হয়েছিল। আমার সাধারণ সম্পাদক সবাইকে ফোন দিয়েও বিষয়টি জানিয়েছেন। আন্দোলনকারী কয়েকজন নেতা অংশ নিয়েছেন। বাকিরা কেন অংশ নেননি, সে বিষয়ে আমার জানা নেই।
সমঝোতার বিষয়ে সভাপতি বলেন, ছাত্রলীগের যেসব নেতা-কর্মী কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে। লিটন ভাই (সিটি মেয়র) আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদকে নির্দেশ দিয়েছেন, সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার।
আরএইচএফ/এসআর