For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুর, নেতাকে মারধর

Published : Sunday, 22 October, 2023 at 9:48 PM Count : 165

প্রায় সাত বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর দিনই বিবাহিত, ড্রপ আউট, অছাত্র ও টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ এনে সদ্যগঠিত কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ, সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুর ও দলীয় নেতাকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার রাতে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে সভাপতি ও আসাদুল্লা হিল গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণার পর দিন রোববার এসব ঘটনা ঘটে। ফলে নতুন কমিটি ঘোষণার ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, কাঙ্খিত পদ না পেয়ে নবঘোষিত কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পদবঞ্চিত ও নতুন কমিটির একাংশ ক্যাম্পাসে মারমুখী অবস্থান নিয়েছে। এতে ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছাত্রলীগের মুখোমুখি অবস্থানে তৃতীয় শক্তির ইন্ধন ও জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টার আশঙ্কাও উঠেছে।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাবি ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলনের প্রায় এক মাস পর শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও আসাদুল্লা হিল গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
এদিকে, রোববার সকালে নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে নিজেদের ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট দেয় পদবঞ্চিত ও পদ পওয়া কিছু নেতাকর্মী। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সংলগ্ন ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে এসে জড়ো হয়।

অবাঞ্ছিত ঘোষণাকারীরা হলেন- পূর্বের কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন, ধর্মবিষয়ক উপ-সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অনিক মাহমুদ বণি ও সাকিবুল হাসান বাকি প্রমুখ।

তবে নতুন কমিটিতে কাজী লিংকন, বাকি ও বণি পদ না পেলেও সরকার ডন ও দুর্জয় সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন।

পরে বেলা ১১টার দিকে পদবঞ্চিতরা মাদার বখশ হলে জড়ো হয়ে নবঘোষিত সাধারণ সম্পাদক আসাদিল্লা হিল গালিবের কক্ষে ভাঙচুর চালায়। অভিযোগ উঠেছে, কাজী লিংকন, সরকার ডনসহ পদবঞ্চিতরা গালিবের কক্ষে ভাঙচুর করেছে। তবে তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পরে বেলা ১২টা দিকে পরিবহন চত্ত্বরে নতুন সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী ও পূর্বের কমিটির সহ-সম্পাদক আরব হোসেনকে মারধর ও ধাওয়া দেয়া হয়।

গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই তাকে মারধর করেন কাজী লিংকন। এ সময় সাকিবুল হাসান বাকিসহ অন্য পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে অবস্থান নিয়ে সদ্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

বর্তমান কমিটি গঠিত হওয়ার আগে পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও পদ পাননি কাজি লিংকন। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত, সে কেমন করে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসে। ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে সে নিস্ক্রিয় অথচ সে রাবি ছাত্রলীগের দায়িত্ব পেয়ে গেছে। টাকার বিনিময়ে বর্তমান কমিটি প্রদান করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আমরা যোগ্য সম্মান পেলাম না। আমরা এই কমিটি মানি না।

নতুন সাধারণ সম্পাদক গালিবের কক্ষ ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে কাজী লিংকন ও সরকার ডন বলেন, আমরা ওই হলে (মাদার বখশ) শান্তিপূর্ণ ভাবে গিয়েছিলাম। কিন্তু কক্ষ ভাঙচুরের সঙ্গে আমরা জড়িত নই। এটা সাজানো নাটক। ওরাই এখন ভাঙচুর করে আমাদের নামে অভিযোগ দিতে পারে। গালিব বিয়ে করে রাজশাহীতে শ্বশুর বাড়িতে থাকে। সে কিভাবে নেতা হয়?

সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরকার ডন আরও বলেন, আমরা এখন রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছি। ওদেরকে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দেব না। সেটা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বুঝবে, কমিটি বিলুপ্ত করে দেবে। কুষ্টিয়াতে হয়েছে, চট্টগ্রামে হয়েছে। সভাপতি-সেক্রেটারি ক্যাম্পাসে ঢুকতেই পারেনি। আমরাও ঢুকতে দেব না। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে আমরা চাপে রাখবো। আমরা এই কমিটির বিলুপ্তি চাই। 

রাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, নতুন এই কমিটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরে নেতাকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু কতিপয় নেতা ও কর্মী কমিটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। তারা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত করার কেউ নন। নির্বাচনের বছরে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে আমরা সেটা শক্ত হাতে প্রতিহত করব। 

এদিকে, ছাত্রলীগের মুখোমুখি অবস্থানে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এই সুযোগে সরকার বিরোধী পক্ষ ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা তৈরী করতে পারে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এটাকে তৃতীয় শক্তি সুন্দর ভাবে কাজে লাগাবে। তারা তো এটা নিয়ে হাসাহাসি করছে। ছাত্রলীগের পক্ষের অবস্থান নিয়ে তারা ফায়দা লুটবে এবং ইন্ধন দেবে এটা খুবই স্বাভাবিক। এবং সেটিই চলছে। 

ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ সক্রিয় আছে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক। তিনি বলেন, হলে ভাঙচুরের খবর পেয়ে আমরা সেখানে গেছি। আমরা দেখছি নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে। আমরা তাদের মনিটর করছি। কথা বলার চেষ্টা করছি যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। এছাড়া প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে আছে।

-এফএ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,