For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু

Published : Friday, 20 October, 2023 at 10:55 AM Count : 270

মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব।

শুক্রবার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহাষষ্ঠীর আনুষ্ঠানিকতা। এ সময় ঢাক-ঢোলের বাজনা, কাঁসা, শঙ্খের আওয়াজ এবং ভক্তদের উলুধ্বনিতে দেবী দুর্গাকে অশুভশক্তির বিনাশে পৃথিবীতে স্বাগত জানানো হয়। সন্ধ্যায় হবে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস।

দুর্গা শব্দের অর্থ হব্যূহ বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে দেবী ভক্তদের রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।

অন্যদিকে সনাতন ধর্মমতে, দেবী দুর্গা পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ। সংস্কৃত দুর্গা শব্দের অর্থ যিনি দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন। দুর্গা হিন্দু দেবী পার্বতীর এক উগ্র রূপ। তাকে আদ্যাশক্তির রণরঙ্গিনী এক মহাদেবীর রূপ বলে মান্য করা হয়।
হিন্দু পূরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল। কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেছিলেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ-শোক, হানাহানি ও মারামারি বাড়বে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। যার ফলে জগতে মড়ক ব্যাধি এবং প্রাণহানির মতো ঘটনা বাড়বে।

গত বছর মহিষাসুরমর্দিনী দেবী মর্ত্যে এসেছিলেন গজে (হাতিতে) চেপে। গজ বা হাতিতে চড়ে দেবীর আগমনের অর্থ হলো শুভ। মনে করা হয়ে থাকে দেবী যদি গজে চড়ে মর্ত্যে আসেন তাহলে তিনি সঙ্গে করে সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে আসেন। হাতি হচ্ছে জ্ঞান এবং সমৃদ্ধির প্রতীক।

দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার পূজা আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল, কাঁসা ও শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ।

রামকৃষ্ণ মিশনের পূজার নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। এদিন সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত থাকবে সব মণ্ডপ এলাকা।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন শনিবার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে। মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে রাত ৮টা ৬ মিনিটে। সোমবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হবে মহানবমী পূজা। পরদিন মঙ্গলবার দশমী পূজা শুরু সকাল ৬টা ৩০মিনিট। পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যায় আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী এ শারদীয় উৎসবের।

রাজধানীতে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃত্বে দশমীর দিন বিকেলে পলাশীর মোড় থেকে প্রতিবছরের ন্যায় বিজয়া শোভাযাত্রা শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির হয়ে পলাশী বাজার, জগন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট, বঙ্গবাজার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবন, গোলাপ শাহ্ মাজার, গুলিস্থান মোড়, নবাবপুর রোড, রায়সাহেব বাজার, বাহাদুর শাহ্ পার্ক হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর ওয়াইজ ঘাটে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের প্রতিমা নিরঞ্জন মাধ্যমে শেষ হবে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানিয়েছেন, এবার সারাদেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর রাজধানী ঢাকায় এবার পূজা অনুষ্ঠিত হবে ২৪৬টি মণ্ডপে। গতবছর সারাদেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মন্দিরে এবং রাজধানীতে ২৪১টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদরদপ্তর, ধর্ম মন্ত্রণালয়, মহানগর পুলিশ কমিশনার, নৌ-পুলিশের সঙ্গে নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়েছে।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপ, গুলশান বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মণ্ডপ, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, শাঁখারী বাজারের পানিটোলা মন্দিরসহ অন্যান্য মণ্ডপে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বুধবার মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় বলা হয়, গত ১৪ অক্টোবর পবিত্র মহালয়ার মাধ্যমে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজা একটি ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় আয়োজন হলেও ঐতিহ্যগতভাবেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ অনুষ্ঠান এখন সর্বজনীনতা লাভ করেছে। দুর্গাপূজার শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী এবং আসুরিক শক্তির বিরুদ্ধে সুরশক্তির বিজয়ের চেতনা বিশ্বজনীন। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এই চেতনাকে ধারণ করেই বিকশিত হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শারদীয় দূর্গাপূজা জাতীয় জীবনে একটি ঐক্য ও সমন্বয়ের ধারা প্রতিষ্ঠার সূচনা করতে পেরেছে বলে তারা মনে করেন। যার মূল সুর ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’।

মহাগর সার্বজনীন পূজা কমিটির পক্ষ থেকে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে সাত্ত্বিকভাবে মায়ের অর্চণা করাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, প্রতিমা তৈরি থেকে পূজা সমাপ্তি পর্যন্ত প্রতিটি পূজামণ্ডপে নিজ উদ্যোগে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট মণ্ডপ কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

পূজামণ্ডপে নারী ও পুরুষের পৃথক যাতায়াত ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিজস্ব নারী-পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে। স্বেচ্ছাসেবকদের নামের তালিকা (মোবাইল নম্বরসহ) জেলা ও কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। সন্দেহভাজন দর্শণার্থীদের দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা এবং নারী স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে নারী দর্শণার্থীদের দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা রাখতে হবে। উচ্চশব্দের কারণে বিরক্তি উদ্রেককারী মাইক-পিএসেট ও আতশবাজি-পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ভক্তিমূলক সংগীত ব্যতীত অন্য কোনো গান বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এরূপ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার কথাও নির্দেশনায় বলা হয়।

দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ ও সাধারণ সম্পাদক রমেন মন্ডল হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,