ফেনীতে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ঋতু পরিবর্তনের কারণে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। গত এক সপ্তাহে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার পাঁচ গুণ অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হয়েছে। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
এ ব্যাপারে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল জানান, শিশু ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বিপরীতে ভর্তি ছিল ১৩৫ জন। রোগীর তুলনায় শিশু চিকিৎসক অপ্রতুল। মাত্র তিন জন চিকিৎসক দিয়ে এত রোগীর চাপ সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এর মধ্যে হাসপাতালের স্ক্যানু বিভাগও চালু রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। তবে শিশু রোগীদের নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিশু চিকিৎসকের সংকট মেটানোর কথা বললেও কোনো সুফল পাচ্ছি না।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালের শিশু বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের ভেতর জায়গা না হওয়ায় অনেক শিশু রোগীদের নিয়ে হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে ঠাঁই নিয়েছেন অভিভাবকরা। ওয়ার্ডের ভেতর রাউন্ডে থাকা চিকিৎসকের সেবা নিতে রোগীর স্বজনরা শিশুদের কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
রোগীর স্বজনরা বলছেন, হাসপাতালে বারান্দায় কোনো রকম বিছানা পেতে থাকলেও সুচিকিৎসা পাচ্ছি না।
রহিমা নামে এক শিশুর অভিভাবক বলেন, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসে ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে শিশু রোগীদের। ফলে সুস্থ হওয়ার বদলে আরও বেশি সংক্রমিত হচ্ছে শিশুরা।
অন্য রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বলেন, সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই এটা কোনো ভাবেই মানা যায় না। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে আজ চার দিন। ওয়ার্ডের ভেতর এতো রোগী ডাক্তার আসেন এক বা দু'জন। ডাক্তাররা রোগীর সমস্যা ভালো ভাবে বুঝতে পারেন না।
হাসপাতালের শিশু বিভাগে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স শ্যামলী রাণী বলেন, গত ক'দিন ধরে রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। এতো রোগীর চাপ সামাল দেয়া আমাদের পক্ষে কষ্টকর। কাঙ্খিত সেবা দিতে আমরাও হিমশিম খাচ্ছি।
আরএমও ডা. আসিফ ইকবাল বলেন, শিশুদের বেশির ভাগই নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, জ্বর সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত। এখন আবার নতুন করে হ্যান্ড ফুড এন্ড মাউথ নামে নতুন আরেকটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
হাসপাতালে রোগীদের শতভাগ সেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক সংকট নিরসনের দাবি জানিয়েছেন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আসিফ ইকবাল। তিনি বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করার মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসক এখানে নেই। চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রায়ই সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন বহিঃবিভাগ ও ওয়ার্ডে যে পরিমাণ শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে সে তুলনায় আমাদের চিকিৎসক নেই। ফলে মাত্র তিন জন চিকিৎসককে অধিক চাপ সামলে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
আরএমও বলেন, ওয়ার্ডে শয্যা আছে ২৬টি রোগী ভর্তি থাকে একশোর বেশি। হাসপাতালে রোগী এলে ফিরিয়ে দেওয়ার যেহেতু সুযোগ নেই, তারপরও আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। অপর্যাপ্ত চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতাল চালাচ্ছি আমরা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো সুফল মিলছে না।
-এটি/এমএ