মোবাইলে ওয়াজ শোনার অপরাধে ছাত্রকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন
Published : Wednesday, 11 October, 2023 at 6:23 PM Count : 548
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে মোবাইল ফোনে ওয়াজ শোনার অপরাধে এক মাদ্রাসাছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে মাদ্রাসার পরিচালক। আহত ছাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে।
খবর পেয়ে এলাকাবাসী মাদ্রাসা পরিচালকের বিচারের দাবিতে মাদ্রাসা অবরুদ্ধ করেন।
এ ব্যাপারে নির্যাতনের শিকার শামীম হোসেনের বাবা আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে মাদ্রাসার পরিচালক মুফতী মতিউর রহমান ও তার সহযোগী মুফতী সাইফুল্লাহ'র নামে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগে দেওয়ানের খামার গ্রামের মুফতী মতিউর রহমান এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে দারুল উলুম আশরাফিয়া মাদ্রাসা নামে একটি আবাসিক মাদ্রাসা চালু করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানে পড়াশোনা করতে আসা ছাত্রদের প্রায় সময়ই সামান্য ভুলভ্রান্তির কারণে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন করে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে কাউকে জানালে মাদ্রাসা থেকে বহিঃস্কারের ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো।
গত রোববার (০৮ অক্টোবর) ভুরুঙ্গামারীতে ক্বওমী ওলামা পরিষদের ইসলামী মহাসম্মেলনে বক্তাদের ওয়াজ ভিডিও করতে নির্যাতিত ওই ছাত্র বাড়ি থেকে একটি মোবাইল ফোন আনে। মঙ্গলবার বিকেলে মাদ্রাসার উর্দু ফার্সী কিতাবখানা বিভাগের ছাত্র একই উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ শিংঝাড় গ্রামের হতদরিদ্র কাঠমিস্ত্রী আনোয়ার হোসেনের পুত্র শামীম হোসেন (১৭) বাড়ি থেকে আনা মোবাইল ফোনে তার রেকর্ড করা ওয়াজ শুনতে থাকে।
এ খবর জানতে পেরে সন্ধ্যায় মাদ্রাসার পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক মুফতী মতিউর রহমান শামীমকে তার খাস কামরায় ডেকে নিয়ে তার আরেক সহযোগী মুফতী সাইফুল্লাহ'র উপস্থিতিতে মধ্যযুগীয় কায়দায় বাঁশের বাকলা দিয়ে এলোপাতারী মারপিট করে। এর ফলে তার শরীরের বিভিন্ন স্থান ফেটে রক্ত ঝড়তে থাকে। শুধু তাই নয় মারপিটের পর রক্তাক্ত শামীমের নিকট স্ট্যাম্প কেনার টাকা দাবি করলে টাকা দিতে না পারায় আবারও মারপিট করেন মুফতী মতিউর রহমান। পরে নিজেই একটা সাদা স্ট্যাম্প এনে জোর করে স্বাক্ষর নেয় এবং এ ঘটনা কাউকে বললে মাদ্রাসা থেকে বহিঃস্কারের ভয়ভীতি দেখিয়ে নজরদারীতে রাখেন।
এদিকে, শামীম হোসেন রক্তাক্ত অবস্থায় কৌশলে তার এক খালার বাড়িতে গিয়ে রক্তাক্ত শরীর দেখান এবং বাড়িতে সংবাদ দিতে বলেন। তার খালা বাড়িতে সংবাদ দিলে তার বাবা-মা এসে শামীমকে রক্তাক্ত অবস্থায় মঙ্গলবার রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সে সময় ছাত্রকে অমানুষিক মারপিট করে রক্তাক্ত করার ঘটনায় উপস্থিত শত শত জনতা মাদ্রাসা ঘেরাও করে মুফতী মতিউর রহমানের শাস্তি দাবি করে মাদ্রাসার মেইন গেটে অবস্থান নেয়। সে সময় পিছনের গেট দিয়ে মুফতী মতিউর রহমান পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
ভুরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ রুহুল আমিন জানান, অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।
-এএইচ/এমএ