গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় ঘের বা পুকুরে মাছ চাষ করায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিভিন্ন সড়ক ও স্থাপনা। ফলে সরকারের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন টেকসই হচ্ছে না। সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় জনসাধারণের যাতায়েত বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রসাশনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি বলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার কান্দি, পিঞ্জুরী, রাধাগঞ্জ, হিরণ, কুশলা, আমতলী, কলাবাড়ি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অপরিকল্পিত ভাবে করছেন মাছের চাষ।
আর এসব মৎস্য চাষীরা তাদের মাছের ঘের বা পুকুরের পাড় হিসেবে সরকারি রাস্তা এবং স্থাপনাকে ব্যবহার করছে। যার ফলে মাছে রাস্তার পাশে মাটি খেয়ে ফেলছে। মাছে এই মাটি খেয়ে ফেলার কারণে রাস্তা ও রাস্তার পাশের স্থাপনা ভেঙ্গে পড়ছে।
সরেজমিনে উপজেলার পৌরসভার সিকিরবাজারে গিয়ে দেখা গেছে এখানকার জনৈক আব্দুল হক মিয়া তার পুকুরে মাছের চাষ করেছেন। এই পুকুরটির পূর্ব পাশে রয়েছে কোটালীপাড়া পাবলিক ইউনিয়ন ইনষ্টিটিউশনের সীমানা প্রাচীর। দক্ষিণে রয়েছে সিকিরবাজার-গচাপাড়া সড়ক। পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে রয়েছে মানবাধিকার কর্মী ডক্টর অপূর্ব দাসের দুইতলা বিশিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এই পুকুরটির মাটি মাছে খেয়ে ফেলার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সীমানা প্রাচীর ধসে পড়েছে। অন্যদিকে ডক্টর অপূর্ব দাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির গাইড ওয়াল ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া সিকিরবাজার- গচাপাড়া সড়কের অনেক অংশই ভেঙ্গে পড়েছে।
এ বিষয়টি নিয়ে ডক্টর অপূর্ব দাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস ওয়াহিদের কাছে লিখিত ভাবে আবেদন করেছেন।
তিনি বলেন, প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে আমি আমার এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করেছি। প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণের পরে কোন প্রকার সুরক্ষা ব্যবস্থা না করে প্রতিবেশী আব্দুল হক মিয়া তার পুকুরে মাছ চাষ করার কারণে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির গাইড ওয়াল হেলে পড়েছে। বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস ওয়াহিদকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। তিনি এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমার বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে।
কোটালীপাড়া পাবলিক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুরেশ দাস বলেন, প্রচুর বৃষ্টিও মাছ চাষের কারণে আমাদের সীমানা প্রচীরটি ভেঙ্গে পড়েছে। আগামীতে প্যালাসাইটিং ছাড়া এই পুকুরে আমরা আর মাছ করতে দিবো না।
আব্দুল হক মিয়া বলেন, আমি আমার পুকুরের চারিদিকে নেট দিয়ে মাছ চাষ করেছি। এই মাছ চাষ করায় কারো কোন ক্ষতি হয়নি বা আগামীতে ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনাও নেই।
কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুষার মধু বলেন, অপরিকল্পিত ভাবে মাছের চাষ করায় আমার ইউনিয়নের ১০টি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক ক্ষতি হয়েছে। এতে আনুমানিক প্রায় ২০কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি চাই, প্রশাসন দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব মৎস্য চাষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসার দোলন চন্দ্র রায়কে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে সাথে নিয়ে এলাকাগুলো ঘুরে দেখছেন। কোন মৎস্য চাষী যদি সরকারি সড়ক বা স্থাপনার পাশে প্যালাসাইটিং বা নেট না দিয়ে মাছ চাষ করে এবং তার জন্য যদি সড়ক বা স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এটি/ এমবি