মাদারীপুর ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এতে করে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মাঝে। ঘুষ দিতে না পারলে বিভিন্ন ধরনের মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে।
অবশ্য ট্রাফিক পুলিশ বলছে, ট্রাফিক পুলিশকে হেয় করার জন্য এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। গাড়ির কাগজপত্র সঠিক না থাকলে, ট্রাফিক আইন না মানলেই পুলিশ মামলা দিচ্ছে। ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
সরেজমিন মাদারীপুর শহরে দেখা গেছে, শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে অবৈধ পার্কিং, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা, লোকজন উল্টো পথে চলা, রুট পারমিটবিহীন ও ফিটনেসবিহীন বাস গাড়ি চলাচল করলেও এগুলো নিয়ন্ত্রন করতে ট্রাফিক পুলিশের আগ্রহ নেই। তাদের আগ্রহ মটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানি করা। অথচ গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলার কারণে শহরবাসী অতিষ্ঠ। ট্রাফিক ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলার কারণে যানজট বৃদ্ধি পেলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রাফিক পুলিশের আগ্রহ যেন মামলাতেই বেশি দেখা যাচ্ছে।
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসে মাদারীপুরে মটর সাইকেলের বিরুদ্ধে ২ হাজার চারশত ৭১টি মামলা হয়েছে। অবৈধ যানবাহন নসিমন, করিমন, টলী, থ্রিহুইলার মোট আটক রয়েছে ৬৪টি, ও বিভিন্ন অপরাধে মোটরসাইকেল আটক রয়েছে ২০৪২টি, মোটরসাইকেলের মামালর জরিমানা করা হয়েছে ৭৯ লাখ ৬২ হাজার, ৮শত টাকা। অনন্যা যানবাহনের মামলার জরিমানা হয়েছে ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৫শত। অথচ মাদারীপুরে অর্ধশাধিক ফিটনেসবিহীন বাস গাড়ী চলাচল করলেও একটিও আটক কিংবা জরিমানা হয়নি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মূল সড়কে বেড়েছে অবৈধ স্থাপনা। সঙ্গে আছে অবৈধ পার্কিং। যা মূল সড়কের অনেকটাই দখলে রেখেছে। অথচ জেলার বিভিন্ন প্রত্যান্ত গ্রামের মোড়ে মোড়ে পুলিশ দাড়িয়ে থেকে মটর সাইকেল আটকের নামে ঘুষ বানিজ্য করে থাকেন।
ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, মাদারীপুরে গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনভিজ্ঞ ও মেয়াদবিহীন লাইসেন্সের চালক— সবাই যেন নেমে পড়ে সড়কে। এ সব কারণে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। যার কারণে চালকরা বলছে, এ সব হলো অতিরিক্ত মামলা।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা এলাকার মোটরসাইকেল চালক রায়হান বলেন, আমার গাড়ির কাগজপত্র সব ঠিক আছে তারপরও পুলিশ আমাকে শুধু শুধু মামলার ভয় দেখিয়ে এক হাজার টাকা নিয়েছে।
সাকিব নামে এক মটরসাইলে চালক বলেন, ‘আমরা গ্রামের রাস্তায় মটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। সেই গ্রামে এসে আমাদের মটর সাইকেল বিভিন্ন অজুহাতে আটক করে টাকা আদায় করে। সারাদিন শেষে আমরা ৫০০/৭০০ টাকা পাই। অথচ একবার পুলিশে ধরলেই আমাদের দুই তিন হাজার টাকা নিয়ে যায়। এমন করলে কিভাবে আমরা সংসার চালাবো। আল্লাহর কাছে ওদের নামে বিচার দিলাম। আল্লাহ যেন ওদের বিচার করে।’
শহরের ইটেরপুল এলাকায় নিয়ম মেনে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন মোটরসাইকেল চালক ও শিক্ষার্থী হাবিব আকন। পুলিশ তাকে থামিয়ে কাগজপত্র হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে আগের কোনো মামলা আছে কি না? জবাব দেওয়ার আগেই এক হাজার টাকার মামলা দেওয়ার কথা বলে দুই হাজার টাকার মামলা দেয়। এর পর হাবিব আকন ওই ট্রাফিকের কাছে তার অপরাধ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তায় চললে মাঝে মাঝে এমন মামলা হয়। এ সময় আরিফ আকন অভিযোগ করে বলেন, উল্টা পথে ভিআইপি গাড়ি চলে গেলেও তাদের কেনো ধরে না।
মাদারীপুর উন্নায়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, যারা মটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা বেশি দেয়া হয়। এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই শুনি। এবং জেলা পুলিশের প্রাপ্ত তথ্য থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট। পুলিশের আরও মানবিক হওয়া উচিত। সাধারণ মানুষ পুলিশের প্রতি ক্ষুব্ধ। যানজট নিরসনের চেয়ে পুলিশ বেশি ব্যস্ত থাকেন মামলা দিয়ে হয়রানি করাতে। অথচ সকাল বিকাল শহরের মধ্যে যানজট লেগেই থাকে। বিষয়টি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখা উচিত।
মাদারীপুরে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট জুলফিকার বলেন, চালকরা অন্যায় বা অনিয়ম করলে আমরা মামলা দিয়ে থাকি। আরেক ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট যাকারিয়া বলেন, রাস্তায় অনিয়ম করলে মামলা দেওয়া হয়। কোনো গাড়িকে টার্গেট করে মামলা দেওয়া হয় না। তিনি আরো বলেন পুলিশকে হেয় করার জন্য এই প্রচারণটা চলেই আসছে। পুলিশ ইচ্ছা করে মামলা দেয় না। চালকরা অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
তবে এসব অভিযোগের ব্যপারে মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলমের সাথে তার সরকারী মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এএইচএস/এসআর