For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

হারিয়ে যাওয়ার ২৩ বছর পর পরিবার ফিরে পেলো মাইদুল

Published : Sunday, 17 September, 2023 at 3:29 PM Count : 435


হারিয়ে যাওয়ার ২৩ বছর পরে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছে মাইদুল। তাকে বুকে জড়িয়ে আনন্দে আত্মহারা তার জন্মদাতা বাবা। মুখে কোন ভাষা নেই, শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছেন প্রিয় সন্তানের মুখের দিকে। কখনো দু’চোখের কোনে জল জমে। ভিজে যায় চোখ। একসময় গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ে আনন্দ অশ্রু।

একই অবস্থা মাইদুলেরও। কথা বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে আসে তার। নিজেকে সামলিয়ে বলেন, তার হারিয়ে যাওয়া ও ফিরে আসার গল্প। সে শুনতে ও তাকে এক নজড় দেখতে তার ফিরে আসার দিন শনিবার নাগেশ্বরীর সন্তোষপুর ইউনিয়নের গোপালপুর উত্তর সরকারটারী গ্রামে এখন প্রতিবেশির ভীর জমেছে তার বাড়িতে।

মাইদুল জানায়, আবছা মনে পড়ে তখন তার বয়ষ পাঁচ বছর। বড়ভাই মতিয়ার তার চেয়ে এক বছরের বড়। হঠাৎই একদিন পারিবারিক কলহে তার বাবা সামাদ আলী ও মা বানেছা বেগমের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তিনিও অকালে মৃত্যুবরণ করলে ফের মাতৃহীন হয়ে পড়ে তারা দুই ভাই। 
এরপর তাদের মা বানেছা বেগম পরিবারের সাথে কথা বলে রংপুরে নিয়ে যায়। সেখানে কিছুদিন অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে চলে যায় ঢাকায়। এরপর তার দুর্ভোগের যাত্রা শুরু।

ঢাকায় কোথায় জানতে চাইলে জানান, আমার তেমন একটা মনে নেই। জন্ম প্রত্যন্ত গ্রামে। ঠিকানাও জানতাম না ঠিকমত। কিছু বুঝে ওঠার আগে বহুদুর পথ। কোন জায়গার কি নাম জানতাম না। সম্ভবত যেখানে মা নিয়ে গেছিলেন তা ঢাকার যাত্রাবাড়ির আশেপাশের কোন জায়গা হবে। পরে তারা আশ্রয় নেয় সায়দাবাদের এক বস্তিতে। মনে আছে সেবার এক ভয়াবহ বন্যায় তারা বস্তি ছেড়ে একটি স্কুলে উঠেন। মা অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজ করতেন। যাতে আমরা হারিয়ে না যাই তাই তিনি আমাদের শেখাতেন কখনো পথ ভুলে গেলে আমরা যেন বলি আমাদের বাড়ি দিনাজপুর। 

বাবা মোশারফ হোসেন। আসলে মোশারফ ছিলেন মায়ের তৃতীয় স্বামী। পরে জেনেছি বাবা সামাদ আলীর প্রতি রাগ থেকে তিনি আমাদের ভুল শেখাতেন। 

তবে মনে ছিল জন্মের পর আমার শিশুকালের যে স্বল্প সময় যেখানে কেটেছিল সে বাড়ির পাশে ছিল একটি মসজিদ। আরো এগিয়ে একটি গীড়াই নদি। আমরা স্কুলে থাকার সময় সেখানেই একদিন ঠাটারিয়া বাজারের এক মহিলা এসে সাথে কথা বলে আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। 

সেখানেই থাকি কিছুদিন। মাঝে মধ্যেই দেখা হত মা, ভাইয়ের সাথে। মিথ্যা চুরির অপবাদে বাড়িওয়ালার নির্যাতনে বের হই অজানার উদ্দেশ্যে। 

আগে বাবাকে হারিয়েছি এরপর হারাই মা-ভাইকে। ঘুরতে ঘুরতে এক সময় গেন্ডারিয়া স্টেশনে বসে কাঁদতে থাকি। তা দেখে এগিয়ে এসে আমার কথা শুনে আমাকে কাছে টেনে নেয় এক ভিক্ষুক জনৈক এন্তাজ আলী। খাইয়ে দাইয়ে আশ্রয় দেন। পরদিন তাদেরকে না বলে আবার বের হই মা ভাইকে খুঁজতে। না পেয়ে দিনশেষে আবারো ফিরে আসি তাদের কাছে।  

এরপর তার শ্যালীকা সাফিয়া, সর্বশেষ সাফিয়ার বোন আলেয়া ও ভগ্নিপতি জব্বারের আশ্রয়ে তাদের মা-বাবা ডেকে গাইবান্ধার দামোদর পুর গ্রামে বড় হই। 

এর মাঝে সংসারের প্রয়োজনে ২০১২ সালে যখন উত্তরায় কাজ করতাম। তখন গাইবান্ধার কুপতলার জনৈক দম্পত্তি তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তান খুঁজতে আমাকেই তাদের সন্তান বলে নিয়ে যায়। সেখানে ২ মাস থেকে তাদের বলা কথার সাথে আমার শিশুকালের মনে পড়া আবছা কথাগুলোর মিল না হওয়ায় ফিরে আসি। ফিরে যাই আশ্রিত বাবা জব্বারের বাড়িতে। ২০১৬ সালে ফের কাজে যাই গেন্ডারিয়ায়। সেখানে ঝাল-মুড়ির ব্যবসা করতাম। পরে পালিত বাবা জব্বারের জনৈক আত্মীয়ের মেয়ে মাহমুদাকে বিয়ে করে সংসার পাতি। এ ঘরে আমার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। 

নিজে বাবা-মা হলেও জন্মদাতা বাবা ও পরিবারকে ফিরে পেতে মন ব্যাকুল ছিল সবসময়। আমার স্ত্রীও চাইত সেটি। সে সবসময় সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগাত আমায়। এর সবকিছুই জানাতাম পালিত বাবা জব্বারের এক ভাতিজা রাজাকে। 

অবশেষে তার সহযোগিতায় আপন ঠিকানায় যোগাযোগ করি। এ মাসের ৫ সেপ্টেম্বর তা ইউটিউবে প্রকাশিত হলে আমার বাবার প্রতিবেশি এক নাতি আপন ঠিকানা ইউটিউব চ্যানেলের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে। 

পরে তাদের দেয়া তথ্যের সাথে আমার ভাবনা সম্পুর্ণ মিলে যাওয়ায় আমি নিশ্চিত হই আমার পরিচয়। ফিরে আসি বাড়ি। ফিরে পাই বাবা ও পরিবারকে।

সন্তান যখন এ কথাগুলো বলছিল তখন তার পাশে বসে গভীর মনযোগে তা শুনছিল বাবা সামাদ আলী। দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু। মাঝে মাঝে ফুপিয়ে কেঁদে উঠছেন। পরক্ষনেই নিজেকে শান্ত করে ধন্যবাদ দিচ্ছেন ইউটিউব চ্যানেল আপন ঠিকানাকে। 

তিনি বলেন ছোট একটি ভুলে আমার ডিভোর্সি বউকে বিশ্বস করে তার কাছে সন্তানদের দেয়ায় কাল হয়েছে আমার। হারিয়ে গেছে আমার বুকের দুই মানিক। 

সেদিনের পরে তাদের ফিরে পেতে রোজ আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছি। তিনি আমার কথা শুনেছেন। ফিরে পেয়েছি আমার দ্বিতীয় পুত্র মাইদুলকে। বিশ্বাস আল্লাহর রহমতে বড় ছেলে মতিয়ারকেও ফিরে পাব আমি। 

কেএস/এমবি


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,