For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ, স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্নআয়ের মানুষ

Published : Thursday, 7 September, 2023 at 1:09 PM Count : 290

বিশ্ব ঐতিহ্য পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ পূর্ব সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটের পানগুছি বলেশ্বর নদের ইলিশ। যেমন তার রূপ, তেমন তার স্বাদ ও গন্ধ। একটি ঐতিহ্যও বলা চলে এই বলেশ্বরের ইলিশকে। দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী, সাগরের মধ্যে পানগুছি বলেশ্বর নদের ইলিশই সেরা। বাজারে ইলিশের দামও বেশি। এ কারণে নিম্নআয়ের মানুষগুলো ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন না।

ইলিশের আসল স্বাদ-গন্ধ পেতে চাইলে জুড়ি নেই বলেশ্বরের ইলিশের। স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ শরণখোলায় ছুটে আসেন এই বলেশ্বরের ইলিশের টানে। কিনে নেন কোনো রকম বরফের স্পর্শ ছাড়া তাজা ইলিশ। আবার অনেকে ঢাকা, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্যও কিনে পাঠান সুস্বাদু এই ইলিশ।

পানগুছি বলেশ্বর নদে এখন প্রতিদিনই জেলের জালে ধরা পড়ছে মণকে মণ তরতাজা ইলিশ।

দুপুরের পর থেকেই জেলেরা ভেজা কাপড়ে ইলিশ ভর্তি ঝুড়ি নিয়ে ফেরেন আড়ৎগুলোতে। আর বিকেল হলেই আড়ৎ থেকে সেই ইলিশগুলো চলে যায় উপজেলা শহর রায়েন্দা বাজার, পাঁচরাস্তা প্রশাসন মার্কেট মাছ বাজারসহ বিভিন্ন হাটে-বাজারে। এসব ইলিশ আকার ভেদে দাম হাকিয়ে বিক্রি করে থাকেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন-চার দিন ধরে প্রচুর বড় ইলিশ ধরা পড়ছে বলেশ্বরে। রূপালি ইলিশের ঝিলিকে হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখেও। ৮০০-৯০০ গ্রাম থেকে শুরু করে দেড়-দুই কেজি ওজনের ইলিশ অহরহ উঠছে জেলের জালে। এর মধ্যে বেশির ভাগই মা ইলিশ। তবে, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও এর দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। যে কারণে বড় ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্নআয়ের মানুষ।

বলেশ্বর নদে জেলের জালে হঠাৎ ইলিশ ধরা পড়ার কারণ হিসেবে মৎস্য বিভাগ জানায়, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। আবহাওয়াও অনুকূলে। তাই বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসছে ইলিশের ঝাঁক। তাছাড়া, কিছু দিন বাদেই ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম শুরু হবে। এ জন্য মা ইলিশগুলো সাগর থেকে ঝাঁক বেঁধে মিঠা পানির শাখা নদ-নদীতে চলে আসছে। যা ধরা পড়ছে জেলের জালে।

বুধবার সন্ধ্যা ও বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা মোরেলগঞ্জে শহরের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছ ব্যবসায়ীরা রূপালি ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। প্রত্যেকটি ইলিশের পেটেই ডিম। ক্রেতারাও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দাম যাচাই-বাছাই করে বনিবনা হলে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ইলিশ।

মোরেলগঞ্জ মাছ বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মাতুব্বর বলেন, 'গত তিন-চার দিন ধরে পানগুছি বলেশ্বরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। সাইজও বেশ বড়। এর আগে ছোট ইলিশ (জাটকা) ধরা পড়তো। তাও পরিমাণে কম।' 

আরেক ব্যবসায়ী খোকন হাওলাদার বলেন, 'বর্তমানে ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৬০০ টাকা এবং দুই কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, দাম যতোই হোক না কেন কোনো ইলিশই অবিক্রিত থাকে না। স্থানীয়রা নিজেদের পাশাপাশি তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্যও ইলিশ কিনে নেন। ককসিট ভরে বলেশ্বরের ইলিশ পাঠান দূর-দূরান্তের স্বজনদের কাছে।

বলেশ্বর নদের জেলে সোহেল শাহ বলেন, 'কয়েকদিন আগেও সারা দিন জাল ফেলে দেড়-দুই কেজি জাটকা উঠতো। এখন বড় ইলিশ উঠছে।'

জেলে রাসেল হাওলাদার বলেন, 'প্রতিদিন একেকজন জেলে ৮-১০ কেজি করে বড় ইলিশ পাচ্ছেন। এসব ইলিশ তাদের নির্ধারিত আড়তে বিক্রি করেন। এখন জেলে-মহাজন-ব্যবসায়ী সবাই লাভে আছেন।'

বুধবার সন্ধ্যায় মোরেলগঞ্জ বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন জাহিদুল ইসলাম। তিনি দেড় কেজি ওজনের দুটি ইলিশ কিনেছেন। ১৬০০ টাকা কেজি দরে দুটি ইলিশের দাম পড়েছে চার হাজার ৮০০ টাকা। 

ওই ক্রেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম কোনো বিষয় না। বলেশ্বরের ইলিশ আমার খুব পছন্দ। তাই কিনে নিলাম।

উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, 'দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য নদ-নদীর চেয়ে বলেশ্বর নদের ইলিশের স্বাদ-গন্ধ একটু আলাদা। ইলিশের চেহারা-আকারও ভিন্ন। বঙ্গোপসাগরের ইলিশের তুলনায় পেটি খুব চওড়া। প্রচুর তেলও এই ইলিশে। যে কারণে দাম ও চাহিদা বেশি। এখন সময় এসেছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের। আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলিশ ধরার জন্য জেলেদের বিভিন্ন সভা-সেমিনারের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছি।'

তিনি বলেন, 'এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় ইলিশের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। যে কারণে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ শাখা নদ-নদীতে উঠে আসছে। তাই জাল ফেললেই ধরা পড়ছে বড় ইলিশ। তাছাড়া, অক্টোবর মাসে শুরু হচ্ছে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এ সময় ২২ দিন দেশের সকল নদ-নদী ও সাগরে ইলিশসহ সকল প্রকার মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকবে। প্রজনন মৌসুম আসন্ন হওয়ায় এখন সব ইলিশের পেটে ডিম থাকাটাই স্বাভাবিক।'

-এসআই/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,