মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে হাত-পা বেঁধে শিক্ষকের মারধর
Published : Wednesday, 6 September, 2023 at 5:00 PM Count : 198
পাবনার সাঁথিয়ায় আসাদুল (৮) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রকে হাত-পা বেঁধে বেধরক মারধর করে জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে শিক্ষক মাওলানা ইকবাল হোসাইনের বিরুদ্ধে।
আসাদুল উপজেলার গৌরীগ্রাম ইউনিয়নের হাড়িয়াকাহন বাইতুল উলুম নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার হেফজ শিক্ষার্থী এবং হারিয়াকাহন গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে।
বুধবার সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ওই শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা না করে এলাকায় বসে বিচার করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আসাদুলের জন্ডিস হওয়ার কারণে তিন দিন মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিল। গত রোববার (০৩ সেপ্টম্বর) রাত ১১টার দিকে তার দুই সহপাঠী সজিব ও সিয়ামকে দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে পাঠায় মাদ্রাসার ওই শিক্ষক। আসাদুল মনে করেছে সিয়াম তার কাছে টাকা পেত সে জন্য এসেছে। পরে আসাদুলের মা শোভা খাতুন পাওনা ১০০ টাকা দিয়ে দেয় সিয়ামকে দেওয়ার জন্য। আসাদুল তার বাড়ির সামনে সিয়ামকে টাকা দেয়ার জন্য যায়। সেখানে শিক্ষক ইকবাল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
সে সময় শিক্ষক আসাদুলকে জিজ্ঞাসা করে এতদিন মাদ্রাসায় অনুপস্থিত কেন? আসাদুল অসুস্থতার কথা জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে মাদ্রাসায় রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে, মাথা টেবিলের নীচে দিয়ে কোমড়ের নিচে বেত এবং স্টিলের স্কেল দিয়ে বেধরক মারপিট করে জখম করেন। একপর্যায়ে আসাদুল নিস্তেজ হয়ে যায়। এ সময় তাকে হাত-পা বেঁধে কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখেন।
পরে আসাদুলের মা খবর পেয়ে দৌঁড়ে মাদ্রাসায় যান। গিয়ে ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করেন। না পেয়ে শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করেন আমার ছেলে কোথায়? তিনি বলেন, ছেলে তো আপনাদের বাড়ি চলে গেছে। পরে তিনি এদিক ওদিক খোঁজাখুজি করে দেখতে পান মাদ্রাসার ভেতরে কাঁথার নীচে শুয়ে ছেলেটা কাতরাচ্ছে। তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই দিন রাত ১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তার পরবিার।
আসাদুলের মা শোভা খাতুন জানান, আমার ছেলের জন্ডিস ধরা পড়ায় তাকে আমরা মাদ্রাসায় যেতে দেইনি। আমি যদি ওই সময় দ্রুত না যাই তাহলে হয়তো আমার ছেলে মারা যেত। কোনো মানুষ হয়ে এভাবে কোনো শিশু সন্তানকে মারতে পারে? ওই শিক্ষকের মনে হয় কোনো সন্তান নেই। থাকলে এভাবে অমানবিক নির্যাতন করতো না।
আসাদুলের বাবা আনোয়ার হোসেন জানান, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ দিতে নিষেধ করেছে।
অভিযুক্ত মাদ্রাসাশিক্ষক মাওলানা ইকবাল হোসেন পলাতক। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আশরাফ আলী জানান, মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ওই শিক্ষার্থীর যাবতীয় চিকিৎসার দায়ভার নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শিশুটিকে যে দিন নিয়ে আসে সে দিন তার অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। সে প্রচুর ভয় পেয়েছে পরবর্তীতে যেন জটিল কোনো সমস্য না হয় সে জন্য তাকে নিবির পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে মারপিটের জখম শুকাতে সময় লাগবে।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীকে মারধরের খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-জেইউ/এমএ