বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর অভিযোগ নেত্রকোনার কেন্দুয়ার বিএনপিতে চলছে গ্রুপিং রাজনীতি। এতে করে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতেও দলটির খেতে হচ্ছে হিমশিম।
সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঐক্য থাকার ঘোষণা কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদের থাকলেও কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির মাঝে নেই কোন ঐক্য। যে যার মত করে পালন করছেন দলীয় কর্মসূচি।
বৃহস্পতিবার বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে গিয়েও দেখা যায় গ্রুপিং রাজনীতিতে বিভক্ত।
দীর্ঘ বছর ধরে চলা উপজেলা বিএনপির গ্রুপিং রাজনীতি নিয়ে সরাসরি বিএনপির কোন নেতা কথা বলতে না চাইলেও শেষ সময়ে এসে সাংবাদিকদের সাথে গ্রুপিং রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন, উপজেলা বালাইশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী আজগর তালুকদার মল্লিক।
সিনিয়র এই নেতা বলেন, কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপি একসময় শক্তিশালী সংগঠন ছিল। তখন কেন্দুয়া - আটপাড়া আসনের নুরুল আমীন তালুকদার এমপি ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মারা যাবার পর মাঠে আসেন তার স্ত্রী খাদিজা আমীন তিনি এমপি নির্বাচিত হয়।
এই সময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে মাঠে আসেন রফিকুল ইসলাম হিলালী। সেই সময় থেকে কেন্দুয়া বিএনপিতে শুরু হয় গ্রুপিং রাজনীতি। যা আজ পর্যন্ত মাঠে চলছে। গ্রুপিং রাজনীতির কারণে আমরা কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনা মোতাবেক দলীয় কর্মসূচি সঠিকভাবে পালন করতে পারছি না। যদিও দলীয় নেতাকর্মী কিছুটা চাঙা হয়েও মুল রাজনীতি করতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে অনবরত।
তিনি আরও বলেন, গ্রুপিং রাজনীতির কারণে আমরা কেন্দুয়ার বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে পুলিশ ও আ.লীগের বাধার মুখে। আমারা সবাই যদি এক হয়ে মাঠ থাকি তাহলে পুলিশ এবং আ.লীগ আমাদের কমসূচিতে বাধা সৃষ্টি করতে অনেকটাই ভয় পেত।
সিনিয়র এই নেতার কথার সাথে একমত পোষণ করে আরো অনেক নেতাকর্মী জানান, বিএনপির ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে দলটির নেতারা পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে।
তবে পৃথকগ্রুপের কর্মসূচিতেই পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা।
তারা আরও বলেন, বিএনপির ৪৫ বয়সেও কেন্দুয়ায় তৈরি হয়নি নিজস্ব কোন কার্যালয় বা অফিস যে কারণে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আরো বেশি।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পৌরশহরের খাদ্য গুদাম সংলগ্ন বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বর্তমান জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলালের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা আলোচনা সভা, কেক কাটা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে। পরে পৌরশহরে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশি বাধা দেয়।
অপরদিকে বিকেল ৫টার দিকে পৌরসভার কেন্দুয়া-মদন সড়কের পাশে বাদে আঠার বাড়ি গ্রামের নব নির্মিত 'হিলালী প্যালেস' কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের কর্মসূচির আয়োজন করে উপজেলা বিএনপি। এ সময় তার গ্রুপের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও একই সময় উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, কেক কাটা ও দোয়া মাহফিল কর্মসূচির আয়োজন করেন, জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব ও জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রোটারিয়ান এম নাজমুল হাসান। তবে এসব কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা প্রদান করে বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন।
দলীয় নেতাকর্মী জানান, কয়েক গ্রুপে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হলেও নেত্রকোনা-৩ নির্বাচনী এলাকার আটপাড়া ও কেন্দুয়া উপজেলায় বিএনপি দলের প্রতিটি ইউনিট মূলত দুলাল গ্রুপ ও হিলালী গ্রুপে বিভক্ত।
শনিবার কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন ভুঁইয়া গ্রুপিং রাজনীতি বিষয়ে বলেন, আমরা উপজেলা বিএনপি দলীয় যে কোন প্রোগ্রাম সবাই একসাথে পালন করতে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে থাকি। কিন্তু অন্যরা আমাদের সাথে আসেনা তারা তাদের মত করে পালন করে।
গ্রুপিং রাজনীতি রফিক হিলালী শুরু করেনি বরং মনোনয়নের আশায় দুলাল চেয়ারম্যান শুরু করেছেন। তবে দলীয় মনোনয়ন যিনি পাবেন আমরা উপজেলা তার নির্বাচন করব।
এইচকে/এমবি