For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

পরিচ্ছন্ন হাসপাতালেও মশার উৎপাত, ২৪ ঘণ্টাই মশারিতে আবদ্ধ ডেঙ্গু রোগী

Published : Friday, 1 September, 2023 at 6:54 PM Count : 124


জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হতে শুরু করে। কয়েক দিনের ব্যবধানে রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় ডেঙ্গু বিশেষায়িত ওয়ার্ড খুলতে বাধ্য হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এরপর একে একে পাঁচটি ওয়ার্ড ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়। পাঁচটি ওয়ার্ডই এখন ডেঙ্গু রোগীতে পূর্ণ।

বর্তমানে ৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতির কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুরু থেকে পুরো হাসপাতালকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে জোর দেন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো ওয়ার্ডগুলোতে মশার উৎপাত বিন্দুমাত্র কমেনি। এতে ২৪ ঘণ্টাই মশারির নিচে কাটছে ডেঙ্গু চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। দুর্ভোগে অন্য সাধারণ রোগীরাও। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
শুক্রবার সরেজমিনে হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, একজন রোগীও মশারির বাইরে বের হচ্ছেন না। একান্তই জরুরি প্রয়োজন এবং মেডিকেল টেস্টের জন্য মশারির বাইরে বের হলেও মশা যেন ছুঁয়ে না বসে সেদিকে তৎপর রোগী ও তার স্বজনরা। এমনকি দায়িত্বরত ডাক্তারও মশারির পর্দার বাইরে, প্রয়োজনে মশারির ভেতরে গিয়ে রোগী দেখছেন।

এ বিষয়ে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সেবায় সরাসরি যুক্ত একাধিক ব্যক্তি নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক জানান, হাসপাতালে মশার উৎপাত প্রচুর। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর কানের কাছে ভনভন শব্দ রীতিমতো আতঙ্কের বিষয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে সজাগ। মশারি, এরোসলসহ সবকিছুই সাপ্লাই দিচ্ছেন। কিন্তু মশা তো নাছোড়বান্দা। এরোসল দিয়েও কাজ হয় না। মশারিই প্রধান ভরসা।

রোগীর স্বজনরা বলছেন, ডেঙ্গু ওয়ার্ডে এসে অনেক রোগীর স্বজনও ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। কারণ ডেঙ্গু রোগী মশারিতে ২৪ ঘণ্টা আবদ্ধ থাকলেও স্বজন হিসেবে জায়গা স্বল্পতার কারণে অনেক সময় মশারি টাঙানোর সুযোগ থাকে না। হাসপাতাল এলাকায় প্রচুর মশা। এটার অবসান প্রয়োজন।

এমন বাস্তবতায় বড় প্রশ্ন এই মশার প্রজনন ক্ষেত্র কোথায়? এতো মশা কোথা থেকে আসছে? এই প্রশ্নের উত্তর হাসপাতালের বাইরে বের হলেই দেখা মিলছে!

হাসপাতালের বাইরের এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, এই মশার প্রধান উৎপাদনস্থল বাইরের ড্রেন ও ঝোঁপঝাড়। আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) পরিচ্ছন্নতা বিভাগের অবহেলাও- অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। অসতর্ক আশেপাশের প্রতিষ্ঠানগুলোও। হাসপাতালের সামনেই অবস্থিত রাজশাহী বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের ভেতরে-বাইরে মশার উর্বর প্রজননক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ পরিষ্কার থাকলেও বাইরের ড্রেন ও আশেপাশের স্থাপনাগুলোর পরিবেশ ভালো না। এ কারণে মশার এই উৎপাত।

হাসপাতালের বাইরের এলাকা ঘুরে দেখ যায়, শুধু ড্রেন নয়, মেডিকেলে কলেজের হোস্টেল এলাকা ও আশেপাশের ঝোঁপঝাড়ও কাটা হয়নি। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে থাকা পানিতে মশা জন্ম নিচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের সামনেই রাজশাহী বিভাগীয় গণগ্রন্থগার। সেখানেও বেহাল দশা।

বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার ঘুরে দেখা যায়, গ্রন্থাগারের অধিকাংশ জায়গা এখন পরিত্যক্ত। যেখানে দিনের বেলাতেও মশার মেলা বসছে। এতে একদিকে যেমন এখানে পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, তেমনি অনিরাপদ করছে হাসপাতাল এলাকাকেও।

গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্রন্থাগারে পরিচ্ছন্নতার জন্য জনবল নেই। একারণে তারা রাসিককে একাধিকবার ঝোঁপ-ঝাঁড় পরিষ্কারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। কাউন্সিলর অফিসে একাধিকবার লিখিতভাবে চিঠি দিয়েও জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। একারণে মশার উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

হাসপাতালের প্রধান ফটক ও বহির্বিভাগের সামনের ড্রেন যে শুধু মশার উর্বর জায়গা তাই নয়; জনদুর্ভোগেরও কারণ। ড্রেন ভর্তি হয়ে উপচে পড়ছে ময়লা পানি। পাশ দিয়ে হেঁটে চলাচলেও দুর্গন্ধসহ সন্ধ্যা হলেই মশার অসহ্য যন্ত্রণার মুখে পড়ছেন সেবাপ্রার্থীসহ অন্যরা। অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের দোকানগুলোতেও মশার উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহম্মেদ জানান, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছেই। বৃহস্পতিবারও ২৪ ঘণ্টায় ৩০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ৮৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেছেন। আর ডেঙ্গু বিষয়টি মাথায় রেখে পুরো হাসপাতালের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে তিনি সরাসরি তদারকি করে ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালের বাইরের পরিবেশও তো ভালো হওয়া লাগবে। এখন হাসপাতালের বাইরে গিয়ে কাজ করার এখতিয়ার তো তাদের নেই। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক মো. মাসুদ রানা বলেন, এখানে মশার উপদ্রব বেশি বিষয়টি সত্য। মশার যন্ত্রণার মধ্যে আমরাও রয়েছি। কিন্তু এগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য আমাদের নিজস্ব ফান্ড বা জনবল কোনোটিই নেয়। রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে বারবার অনুরোধসহ চিঠি দেয়ার পরেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি। এখন আমরা কী করতে পারি

এ বিষয়ে রাসিক আট নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসএম মাহবুবুল হক বলেন, বিভাগীয় গ্রন্থাগারের চিঠির বিষয়টি জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে লোক পাঠাবেন। আর ড্রেনের বিষয়টি নিয়ে আমিও উদ্বিগ্ন। প্রভাবশালী দখলদারদের কারণে মেরামত কাজও করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে রাসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মামুন ডলার বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব এরিয়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ওই প্রতিষ্ঠানকেই করতে হবে। সিটি করপোরেশন করে দিবে না। তবে এর বাইরে কেউ সহযোগিতা চাইলে তারা করবেন। আর হাসপাতালের সামনে দখলদারদের কারণে আমরাও পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। ওইখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানোও জরুরি।

প্রসঙ্গত, রামেক হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৯৫৩ জন রোগী ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৬০ জন। এরমধ্যে রাজশাহীর স্থানীয় ৪৯১ জন। মারা গেছেন ৫ জন।


এফএ/এমবি

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,