ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) একই। শুধু খোলস পাল্টানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খোলস পাল্টিয়ে একই ধরনের নতুন আইন না করার জন্য এই আহ্বান জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ ও প্রস্তাবিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ এর তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এছাড়া প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় অনেক বিষয়ে শাস্তি কমানো এবং জামিনযোগ্য করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে ‘সাইবার নিরাপত্তা’ ও ‘সাইবার ক্রাইম’ শীর্ষক পৃথক আইন প্রণয়ন হতে পারে মত জানানো হয়েছে।
ড. ইফতেখার বলেন, যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর হয়, তখন আমরা এটা বাতিল করতে বলেছিলাম। এবার যখন সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া বানানো হলো, সেটিও একই রকম রয়েছে। শুধু কিছু অংশে পরিবর্তন আছে, যা পরিষ্কার নয়। অনেক ক্ষেত্রে হুবহু কপি পেস্ট করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার বলছে জনগণকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আইন করা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে কার্যত নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে প্রণীত আইনটিকে আসলে কোনো আইন বলা যাবে না, কারণ এটি একটি কালো আইন। ৬ বছর আগে প্রণীত আইনটি যে কালো আইন ছিল এটি বাতিলের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার তা স্বীকার করে নিয়েছে।
সরকারের প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বদলে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে আরেকটি কালো আইন করা উচিত হবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে অনেকে আইনটির বিভিন্ন ধারা সংশোধনের দাবি করেছেন। কিন্তু টিআইবির পক্ষ থেকে আমরা সবসময় এ কালো আইনটি বাতিল চেয়েছি। কারণ এটা সম্পূর্ণ জনবিরোধী একটি দলিল, এটা কোনো আইন হতে পারে না।
প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে অনেক বিষয়ে শাস্তি কমানো ও জামিনযোগ্য করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। সরকার কিছু দণ্ড কমানো ও জামিনযোগ্য করার চিন্তা করেছে, এটা ভালো চিন্তা। প্রশ্ন হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যে ভালো আইন নয়, একটি কালো আইন, তা বাতিলের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার সেটি মেনে নিয়েছে। তারপরও একই ধরনের আরেকটি আইনের কথা নতুনভাবে কেন চিন্তা করছে তা বোধগম্য নয়।
‘সাইবার নিরাপত্তা’ এক বিষয়, আর ‘সাইবার ক্রাইম’ আরেক বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন আছে, কিন্তু প্রস্তাবিত এ আইনে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলো মূলত সাইবার ক্রাইমের বিষয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘সাইবার নিরাপত্তা’ এবং ‘সাইবার ক্রাইম’ এর বিষয়ে আলাদা আইন আছে। আমাদের দেশেও সরকার সেভাবে চিন্তা করতে পারে। আইনের শিরোনামের সঙ্গে যেন বিষয়বস্তুর মিল থাকে তা নিশ্চিত করা উচিত, না হলে আইনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে উল্লিখিত দুইটি আইনের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম। এ সময় টিআইবির অন্যান্য কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এসআর
