তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের নিগ্রহ শুরু হয় পরিবার পরিজন থেকে। মা- বাবা ও পরিবার পরিজন থেকে বিচ্যুত এসব মানুষ কয়েকদিন আগেও মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকতো। তৃতীয় লিঙ্গের অবহেলিত এসব মানুষকে সহজেই কেউ ঘর ভাড়া দিতো দিতো চাইতো না নানান অজুহাতে। অনিশ্চিত গন্তব্যে দিন কাটতো। তাদের সেই কষ্ট লাঘব হয়েছে।
সরেজমিনে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের হোসেন মণ্ডলপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় লিঙ্গের সাত সদস্যকে পুনর্বাসন করা হয়েছে এই আশ্রয়কেন্দ্রে। তারা প্রত্যেকেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর পেয়েছেন।
তৃতীয় লিঙ্গের নীলিমা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে সবাই ভালো আছি। স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে নতুন জীবন দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। এখন জীবন সাজানোর স্বপ্ন দেখছি। নতুন জীবন পেতে সহায়তা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।’
চায়না ও অনু বলেন, ‘পরিবার ও সমাজের লোক যেটুকু ভালো না বাসত, প্রধানমন্ত্রী তার চেয়ে বেশি ভালোবাসেন আমাদের। তার জন্য আমরা দোয়া করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন।’
অপর্ণা ও সুরভী বলেন, ‘আশ্রয়ণের ঘরে আসার পরও আশপাশের মানুষ প্রথম দিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত। তবে এখন বেশ ভালোভাবে কথা বলে, আমাদের এখানে আসে, আমরা তাদের আপ্যায়নও করি।’
স্থানীয় বাসিন্দারাও জানান, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করবেন বলে ধারণা ছিল তাদের। তবে তাদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করছেন। তাদের কেউ কেউ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করছেন, কেউ শাকসবজি চাষ করছেন। তারা সবার সঙ্গে হাসি-আনন্দে দিন কাটাচ্ছেন।
উপজেলার তৃতীয় লিঙ্গের দলনেতা মাহিয়া মাহি বলেন, ‘মা-বাবা ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ও দূরে থেকে আমরা যে কখনো এত সুন্দর ঘর পাব, আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। আমরা বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি, কটু কথা শুনেছি। আজ আমরা প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে সুস্থ জীবন পেয়েছি। তবে সরকারি হিসাবে সাতজনকে জায়গা দিলেও আমরা এখানে আছি ১২ থেকে ১৫ জন। এখন আমাদের প্রয়োজন কর্মসংস্থান। সেটি হলে আর আমাদের মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাততে হবে না।’
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন বলেন একদিন ফেরির মধ্যে তাদের দেখলাম ভিক্ষাবৃত্তি করতে। কাছে ডেকে তাদের দুঃখ দুর্দাসার কথা শুনলাম কথা হলো তাদের দলনেতা মাহির সাথে। সরকারী আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের কথা বলতেই সানন্দে রাজি হলো। তারপর শুরু হলো তাদের আশ্রয়ন নির্মানের কাজ।
গোয়ালন্দের স্থায়ী বাসিন্দা, যাচাই-বাছাই করে এমন সাতজনকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। গত ২ এপ্রিল তাদের কাছে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেছি।’
কর্মসংস্থানের বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের আঙিনায় তারা বিভিন্ন রকম শাকসবজি চাষ করছেন, হাঁস-মুরগি-কবুতর পালন করছেন। আমরা তাদের গবাদিপশু পালনের জন্য ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলেছিলাম। তারা গরু পালনের শেড করে দিতে বলেছেন। আশা করি সেটি হয়ে যাবে।
এসআই/এমবি