বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ডাবের বাম্পার ফলনে উপযুক্ত মূল্য পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। প্রতিদিন এ উপজেলার ডাব যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায়। টাকার হিসাবে প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার ডাব পাঠানো হচ্ছে এসব স্থানে।
জানা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠানোর জন্য প্রতিদিন মোরেলগঞ্জের অন্তত ৩০টি গ্রাম থেকে ডাব সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন বিকেল হলেই ফেরিঘাটে ফেরি পার হওয়ার জন্য ডাব ভর্তি নসিমন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। নদীর পূর্ব পাড়ে কয়েকটি স্পর্ট থেকে যেমন- আমতলী, কালিকাবাড়ি, মহেশপুর, পোলারহাট, দৈবজ্ঞহাটি বাজার থেকে এই ডাব ট্রাক বা বাসে করে পাঠিয়ে দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন প্রায় ২০০ এর মতো হকার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মালিকদের কাছ থেকে ডাব সংগ্রহ করেন। পরে তাদের সংগ্রহ করা ডাব নসিমনে করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছান।
মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের ফেরিঘাটে ফেরি পার হওয়ার সময় কথা হয় ডাব বিক্রেতা সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিদিন আমরা ডাবের সন্ধানে নসিমন নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেড়াই উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব ডাব সংগ্রহ করি। তারপর আড়তের মাধ্যমে বা নিজেরাই সেই ডাব ট্রাক, বাসের ছাদে করে রাজধানীতে পাঠিয়ে দেই। এই ডাব বিক্রি করেই আমাদের সংসার চলে। হকাররা মালিকদের কাছ থেকে প্রতি পিস ডাব ৩০-৩৫ টাকা দরে কিনে আনেন। ঢাকার বড় বড় পার্টি আমাদের প্রতি পিস ডাবের মূল্য দেয় ৫০-৬০ টাকা করে।
মোরেলগঞ্জ ফেরিঘাটের ইজারাদার শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে শতাধিক ডাব হকার ছোলমবাড়িয়া ঘাট থেকে ফেরি পার হয়ে বারইখালীর পাড়ে আসেন। আবার বিকেলে ডাবভর্তি নসিমন-করিমন বারইখালী ফেরি ঘাটে লম্বা লাইন দেন পার হওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, বছরের চার মাস বাজারে ডাবের ব্যাপক চাহিদা থাকে। তখন দামও ভালো পাওয়া যায়। মোরেলগঞ্জ থেকে প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার ডাব ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। সব খরচ বাদে প্রতি পিস ডাবে গড়ে প্রায় ১০-২০ টাকার মতো লাভ হচ্ছে।
ডা. কামাল হোসেন মুফতি বলেন, ডাবের পানিতে মিনারেল ওয়াটার, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে। যা হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ডাবের পানিতে অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল কার্যকারিতা থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ডাবের পানিতে অ্যান্টি-এজিংপ্রপার্টিস থাকে।
তিনি বলেন, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে ডাবের পানি অনেক বেশি কার্যকরী। এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি যা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে। ডাবে আছে কার্বোহাইড্রেড যা শক্তি বাড়ায়। এবং শরীরে পানি শূন্যতা পূরণ করে। ডাবের পানি পান করলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধার প্রবণতা কমে আসে। ফলে কম খাওয়া হয়। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডাবের পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। হজমশক্তি অনেক বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া নিয়মিত ডাবের পানি খেলে অ্যাসিডিটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ডাবের ফলন ভালো হওয়ায় ও তীব্র গরম পড়ায় ডাব কাটা হয়েছে বেশি। তবে ডাবের কারণে নারিকেলের ফলন কম হয়েছে। নারিকেল সমৃদ্ধ এ জেলায় নারিকেলভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে চাষিরা উপযুক্ত দাম পাওয়ার পাশাপাশি বিপুল মানুষের কর্মসস্থান হবে। সে জন্য এ জেলায় নারিকেলভিত্তিক কারখানা গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ডাব উৎপাদনে খরচ অনেক কম।
তিনি বলেন, মোরেলগঞ্জে এবার ৬৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি ডাব উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪২ কোটি টাকা। ডাব উৎপাদনে এ এলাকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। কর্মসংস্থানও হচ্ছে অনেকের। ভিয়েতনামের নারিকেলের প্রতি আগ্রহের কারণে চাষিরা সে দিকে ঝুঁকছেন। বড় গাছের চেয়ে ছোট গাছের ফলনের প্রতি নজর বেশি তাদের। আমরাও চাহিদামতো সরবরাহের চেষ্টা করছি। এছাড়াও নারিকেলের ছোবড়া বেশ চাহিদা সম্পন্ন। তাই গোডাউন, ফ্যাক্টরি গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
-এসআই/এমএ