নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের মৃত মোকসেদ মাষ্টারের জামাতা মো. আলমগীর হোসেন ও চাচকৈড় তালুকদার পাড়া নূর বক্সের ছেলে মো. ওহাবের বিরুদ্ধে প্রায় তিন কোটি টাকা প্রতারণা করে আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ওই প্রবাসীর স্ত্রী মোছাঃ সাদেকা সুলতানা (৪৭) বাদী হয়ে ঢাকা মহানগর আদালতে ১২৭/২০২৩ একটি সিআর মামলা করেছেন। মামলাটি ঢাকা মেট্রো (উত্তর) পিবিআইয়ের অধিনে তদন্তধীন রয়েছে।
মামলার প্রধান আসামী আলমগীর হোসেন(৪৪) কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার তিলকান্দ্রা গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। বৈবাহিক সুত্রে সে গুরুদাসপুর উপজেলার শ্রীপুর মৃত মোকসেদ মাষ্টারের মেয়েকে বিয়ে করে ওই বাড়িতেই বর্তমানে বসবাস করছে।
বাদী মোছা. সাদেকা সুলতানা ঢাকা নিউমার্কেট এলাকার মিরপুর রোডের স্কয়ার টাওয়ারে বসবাসরত মৃত আইয়ুব আলী মোল্লার মেয়ে ও ইটালী প্রবাসী মো.আবুবাকারের স্ত্রী।
অনুসন্ধান ও মামলাসূত্রে জানাযায়, গত ৪ বছর আগে মামলার প্রধান আসামি আলমগীরের সাথে মামলার বাদী সাদেকা সুলতানার ফেইসবুকে পরিচয় হয়।
সেই পরিচয় থেকেই কৌশলে প্রথমে ম্যানেজার হিসেবে চাকুরী নেন আলমগীর অতঃপর তার পছন্দ মতো শশুর বাড়ি এলাকার পুর্ব পরিচিত দুই নম্বর আসামি ওহাবকে কেয়ারটেকারের দায়িত্ব দেয়। তার কথা মতো না চলায় তারই নিয়োগকৃত গুরুদাসপুরের ধারাবারিষা ইউনিয়নের চলনালী গ্রামের শাহাদত হোসেন নামের আরেক জনকে চাকুরী থেকে বাদ দেন ওই আলমগীর।
সাদেকা সুলতানা অসুস্থ থাকায় বিভিন্ন ভাবে তাকে প্রলোভন দেখিয়ে তার নিজনামীয় সম্পত্তি থেকে ১০ শতক জমি পাওয়ারঅফএটর্নী হিসেবে দলিল করে নেয় ওই প্রতারক আলমগীর। কথা ছিল এই জমির উপর বহুতল ভবন নির্মাণ করে দিবেন। আর তার জন্য বিভিন্ন অফিসে দৌড় ঝাপ করতে হবে। তাই অসুস্থ সাদেকা দৌড়াতে পারবেনা বলেই তার দায়িত্বরত ম্যানেজারকে পাওয়ার দলিলের মাধ্যমে দায়িত্ব দেন এবং গত চার বছরের সাদেকার বাড়ি ও কারখানা ভারার গচ্ছিত ৬০ লাখ টাকা সুকৌশলে হাতিয়ে নেয় আলমগীর ও ওহাব।
জমির পাওয়ার অফ এর্টর্নী যখন পান তখনই কাষ্টমার ঠিক করে দুইকোটি টাকার বিনিময়ে ১০শতক জমি থেকে ছয় শতক জমি বিক্রি করে আসামি আলমগীর। সেই দলিলে মিথ্যা ভবনের অনুমোদনের কথা বলে সাদেকা ও তার সন্তান রহিতকে পৃথক ভাবে দুই জনকে দুই জায়গায় রেখে কৌশলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।
জমির ক্রেতা আনিস দখলে আসলে সাদেকা জমি বিক্রির খবর জানতে পেরে ছেলে রহিত ও সাদেকা পৃথকভাবে দুটি ঢাকা নিউ মার্কেট থানায় জিডি করেন। সাদেকার স্বামী ইটালি প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক। বিষয়টি বাংলাদেশ দূতাবাসকে আবেদনের মাধ্যমে অবহিত করেন সেই সাথে ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় আলমগীরের বড় সিন্ডিকেট চক্র রয়েছে। ফেইসবুকে অনেক মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে তাদের জিম্মি করে সুবিধা নেওয়াই তার প্রধান কাজ। এছাড়াও আসামি আলমগীর চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য কোন ভাল চাকরি ব্যাবসা না করেই কোটি কোটি টাকার সম্পদ করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকা বাসি জানান। অথচ এই আসামি আলমগীর মাত্র ১৫ হাজার টাকা বেতনে বাদী সাদেকা সুলতানার বাড়িতে ম্যানেজারী করেছেন। মামলা হওয়ার পর সে নরেচরে বসেছে। দ্রুত পাসপোর্ট করে দেশত্যাগ করার চেষ্টাও করেছেন বলে জানা গেছে।
গুরুদাসপুরের অত্যাধুনিক বাড়ি, গাড়ী জমি ও বিশাল অংকের ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে তার স্ত্রী ডলির নামে। এছাড়াও তার নামে বনপাড়ায় মুল্যবান ছয় শতক জমি রয়েছে। সম্পদের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদকের ক্যামরার সামনে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি আলমগীর।
অপর আসামি ওহাবের চাঁচকৈড় বাজারে একটি কনফেকশনারির দোকান রয়েছে। আসামী ওহাব বলেন, আমি ওই বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলাম মাত্র। এব্যাপারে আমি কিছু জানিনা।
আলমগীর হোসেন মুঠোফোনে জানান, বাদী সাদেকা সুলতানার জমির সংক্রান্ত অনেক কাজ করে দেওয়ায় আমাকে এই জমি লিখে দিয়েছিলেন। ওই জমির ছয় শতাংশ ৯৬ লাখ টাকায় বিক্রি করে ৭৫ লাখ টাকা পেয়েছি মাত্র।
চাকুরীচ্যুত কেয়ারটেকার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি অনেক দিন ওই বাসার কাজ করেছি। আলমগীর ও ওহাবের জমি লিখে নেওয়ার পরামর্শ শুনতাম। আমি তাদের অবৈধ কাজে সমর্থন না দেওয়ায় আমাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদী সাদেকা সুলতানা ও তার স্বামী ইটালী প্রবাসী আবু বাকার জানান,আসামি আলমগীর প্রতারনা করে নগদ ও জমিসহ তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমার স্ত্রী অসুস্থ্য বলে সরল তার সুযোগ নিয়ে আমাকে নিঃশ্ব করে ফেলেছে। আলমগীরকে বিভিন্ন ভাবে ওহাব সহযোগিতা করেছে। আলমগীরের দেওয়া স্ট্যাম্পে আমি স্বাক্ষর করতে চাইনি। কিন্তু সহযোগী ওহাব আমাকে বলেছে ম্যাডাম বিল্ডিং এর অনুমোদনের জন্য এটা দরকার । এমনকি দুজনই বিল্ডিংয়ের নকসাও দেখিয়েছে। আসামিদের দ্রæত গ্রেফতারসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করেছেন প্রশাসনের কাছে।
ঢাকা মেট্রো উত্তর পুলিশ পরিদর্শক (পিবিআই) মো.জুয়েল মিয়া মুঠো ফোনে জানান, তদন্ত চলছে, শেষ হলে প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করা হব।
এমএ/এমবি