দিনাজপুরে শীতের তীব্রতা বাড়ায় শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট বেড়েছে। শীতে কমে গেছে কাজ। অনেককে কাজ না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে।
শনিবার দিনাজপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে দিনাজপুর। ১০ গজের মধ্যেও দৃষ্টি ছড়ায়না।
শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি কৃষির পাশাপাশি দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যেও প্রভাব পড়েছে। কাজের সন্ধানে গ্রাম থেকে আসা অনেক মানুষ কাজ না পেয়ে ফিরে গেছেন। মানুষ বিক্রির হাট নামে পরিচিত শহরের ষষ্টীতলা মোড়ে কাজের জন্য আসা শ্রমিকদের কাজ না পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকেও অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
দিনাজপুর শহরসহ মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে সকল ধরনের যানবাহনকে সকাল ৯টা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী নৈশকোচগুলো পাঁচ থেকে সাত ঘন্টা দেরিতে দিনাজপুরে ঢুকতে দেখা গেছে।
শীতে বেড়েছে মুজা, টুপি, মানকি টুপি, কানপট্রি, মাফলার, হ্যান্ডগ্লোফসসহ গরম কাপড়ের বিক্রি।
গাজীপুর থেকে দিনাজপুরে আসা নাবিল কোচের যাত্রী হুমাযুন পারভেজ বলেন, 'রাত ১১টায় উঠেছি। আগে সকাল ৬টার দিকে কালিতলা কোচ কাউন্টারে এসে পৌঁছে যায়। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে গাড়ী ধীরে চলেছে তাই চার ঘন্টা দেরি হয়েছে। সকাল ৬টার স্থলে ১০টার দিকে পৌঁছেছে।'
মানুষ বিক্রির হাট নামে পরিচিত শহরের ষষ্টীতলা মোড়ে কাজের সন্ধানে আসা নির্মাণ শ্রমিক আবুল হোসেন বুলেন, 'বিরল উপজেলা থেকে কাজের জন্য সকাল ৭টার দিকে এখানে এসেছি। কিন্তু সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কাজ পাইনি। এখনও নাস্তাও করিনি। আজ আর কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফিরে যেতে হবে। শীতের কারণে প্রায় দিন আমাকে কাজ না পেয়ে ফিরে যেতে হয়।'
কুয়াশার কারণে ঢাকা থেকে আসা সংবাদপত্রের গাড়িগুলোও দেরিতে আসছে।
পত্রিকা বিক্রেতা শহরের একমাত্র মহিলা হকার মরিয়ম বেগম বলেন, 'আমি পায়ে হেঁটে ফেরি করে পত্রিকা বিক্রি করি। পত্রিকার গাড়িগুলো দেরিতে আসায় কেউ পেপার নিতে চাননা। দুপুরের পর পত্রিকাগুলো আসায় বেশী মানুষের কাছে যেতে পারিনা। ফলে পত্রিকা কম বিক্রি হয়। আবার অনেকে দুপুরের পর পেপার নেন না। এতে আমার আয় তিন ভাগের এক ভাগে নেমেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।'
ফেরি করে হাতের-পায়ের মুজা, উলের টুপি, মাফলারসহ বিভিন্ন শীতবস্ত্র বিক্রেতা আলেফ উদ্দিন বলেন, 'দেশের সবচেয়ে বড় হুশিয়ারী পণ্য তৈরির এলাকা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাহার, নয়ারহাট ও পুরাতন বাজার থেকে তারা দিনাজপুরে এসেছেন হুশিয়ারি পণ্য বিক্রির জন্য।'
আরেক বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, 'দিনাজপুরে শীত বেশী হওয়ায় তারা ৫০ জনের একটি দল এসেছেন দিনাজপুরে। বেঁচাকেনাও বেশ ভাল। শীত যেভাবে বাড়ছে তাতে বেচাকেনা আরও বাড়বে।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও আবহাওয়া সহকারী আসাদুজ্জামান বলেন, 'দিনাজপুরে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঘন কুয়াশায় দিনাজপুর ঢাকা পড়েছে। বাতাসের আদ্রতা ৯৬ শতাংশ হওয়ায় মানুষ শীত অনুভব করছে। ০৬ জানুয়ারীর পর আরও শীত বাড়বে।'
-এএইচ/এমএ