বোর্ডে মোটে ২২৭ রান। প্রথম দিনের শেষ বিকেলে ভারতের ২-৩টা উইকেট নিতে পারলে এই ম্যাচে বেশ ভালো অবস্থানে থাকতো বাংলাদেশ। সুযোগ যে আসেনি, তেমনও নয়।
তবে শেষ বিকেলের ভয় জয় করে ফেলেছে ভারত। বারকয়েক জোরালো আবেদন থেকে বেঁচেছে, একবার তো আম্পায়ার আউটও দিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যায় লোকেশ রাহুলের দল।
প্রথম দিন শেষে ৮ ওভার খেলে বিনা উইকেটে ১৯ রান তুলেছে ভারত। লোকেশ রাহুল ৩ আর শুভমান গিল ১৪ রানে অপরাজিত আছেন।
তাসকিন আহমেদ প্রথম ওভার শুরু করেন মেইডেন দিয়ে। দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই প্রায় উইকেটের দেখা পেতে যাচ্ছিলেন সাকিব। শুভমান গিলের ড্রাইভ একটুর জন্য পয়েন্টে ক্যাচ হয়নি। পরের ওভারে এজ হয়ে কিপারের পাশ দিয়ে চলে যায় বল, আবার বাঁচেন গিল।
সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাসকিনের বলে আরেকবার সুগোগ তৈরি হয়। বল ব্যাটে লেগে উইকেটের পেছনে গেছে মনে হওয়ায় রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু আলট্রাএজে দেখা যায় এমন কিছুই হয়নি।
তার ঠিক পরের ওভারে সাকিবের এলবিডব্লিউ আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেন রাহুল। এবারও বেঁচে যান তিনি। দেখা যায় বল স্টাম্পের ওপর দিয়ে চলে যেতো। এভাবেই বারকয়েক ভাগ্যের সহায়তায় বেঁচে দিন শেষ করেছে ভারত।
এর আগে মুমিনুল হক সেঞ্চুরি মিস করেন, দুর্ভাগ্যজনক এক আউটে থামেন ব্যক্তিগত ৮৪ রানে। মুমিনুল আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের ইনিংসটা আর এগোয়নি। ৭৩.৫ ওভারে ২২৭ রানে গুটিয়ে গেছে সাকিব আল হাসানের দল।
অথচ টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সূচনাটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। দুই ওপেনার জাকির হাসান এবং নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে বাংলাদেশ দল ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়িয়ে চলছিলো।
কিন্তু ১৫তম ওভারে এসেই ছন্দপতন ঘটলো। কুলদীপ যাদবের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া জয়দেব উনাদকাটের বলে ক্যাচ তুলে দেন জাকির হাসান। তার ক্যাচটি তালুবন্দী করেন লোকেশ রাহুল।
আউট হওয়ার আগে জাকির করেছিলেন ১৫ রান। এর আগে দ্বিতীয় ওভারেই ক্যাচ তুলেছিলেন জাকির। মোহাম্মদ সিরাজ সেই ক্যাচ মিস করেন।
পরের ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও এই আউটটি ছিল বিতর্কিত। বাইরে চলে যাওয়া বল প্যাড দিয়ে ঠেকান শান্ত। বলটা ছিল স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে। তবুও জোরালো আবেদন করেন অশ্বিন। তার জোরালো আবেদনের মুখে আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা।
রিভিউ নেয়ার পর দেখা যায় বলটি অফস্ট্যাম্প হয়তো আলতো টাচ করে যেতো। কিংবা স্ট্যাম্প মিসও করতে পারতো। তবুও ফিল্ড আম্পায়ার আউট দেয়ার কারনে টিভি আম্পায়ারও সেটিকে আউটই ঘোষণা করেন। ২৪ রান করে ফিরে যান শান্ত।
ভালো কিছুর আশা দেখাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসানও। কিন্তু উমেশ যাদবের বলে মিড অফে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ধরা পড়েন চেতেশ্বর পুজারার হাতে। ৩৯ বল খেলে ১৬ রান করেন তিনি।
সাকিব আউট হওয়ার পর মুমিনুল হকের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুশফিকুর রহিম। এই জুটিটা আশা জাগাচ্ছিল। দু’জনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে ৪৮ রানের জুটিও গড়ে ওঠে।
কিন্তু ভালো খেলতে খেলতেই হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলার অভ্যাসটা বের পুরোনো বাংলাদেশের ব্যাটারদের। মুশফিকুর রহিমের মত সিনিয়র ক্রিকেটারও খেই হারালেন।
জয়দেব উনাদকাটের বলটি ছিল অফস্ট্যাম্পের ওপর। বলটি বুঝতে না পেরে ব্যাট ছুঁইয়ে দেন মুশফিক। সহজেই সেটি জমা পড়ে উইকেটরক্ষক রিশাভ পান্তের গ্লাভসে। ৩৯ বলে ১৬ রানের একটি ছোট্ট ইনিংস খেলে বিদায় নেন বাংলাদেশের মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিক। ১৩০ রানে পড়ে বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেট।
এরপর লিটন দাসকে নিয়ে ৪২ রানের একটি জুটি গড়েন মুমিনুল। লিটন ২৫ করে সহজ ক্যাচ হন অশ্বিনকে ফ্লিক করতে গিয়ে। মেহেদি হাসান মিরাজ উইকেটে টিকতে চেয়েছিলেন। তবে ৫১ বল খেলে ১৫ রানে তাকে ফিরতে হয় উমেশের শিকার হয়ে, উইকেটরক্ষকে ক্যাচ দিয়ে।
৬ রান করে নুরুল হাসান সোহান এলবিডব্লিউ হন উমেশ যাদবের বলে। তাসকিন আহমেদের উইকেটটিও নেন ডানহাতি এই পেসার। একটা প্রান্ত ধরে লড়াই চালিয়ে যাওয়া মুমিনুল হক সেঞ্চুরির সুযোগ মিস করেন।
সাবেক টেস্ট অধিনায়কের আউটটা যদিও ছিল ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক। অশ্বিনের বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল তার গ্লাভসে লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক পান্তর হাতে। ১৫৭ বলে ১২ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় ৮৪ রান করেন মুমিনুল।
সবমিলিয়ে মাত্র ২৫ রানে ৪টি উইকেট শিকার করেন উমেশ। ৭১ রানে ৪ উইকেট রবিচন্দ্রন অশ্বিনের।
এসআর
বিরতির পর সাজঘরে সাকিব-মুশফিক