For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

ফসলি জমির মাটি পোড়ানো হচ্ছে ইট ভাটায়

Published : Thursday, 22 December, 2022 at 10:45 AM Count : 228

রাজবাড়ীগোয়ালন্দ উপজেলায় দুই ফসলি কৃষি জমি ধ্বংস করে ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। আবার ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। ফলে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি বিনষ্ট হচ্ছে। ইট ভাটার কালো ধোঁয়া ও পোড়া কয়লার বর্জ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩-এর ৮(১)(ঘ) তে বলা আছে, কৃষি জমিতে কোন ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। শুধু তা-ই নয়, ওই আইনের ৩(ক) তে বলা হয়েছে নির্ধারিত সীমারেখার (ফসলি জমি) এক কিলোমিটারের মধ্যেও কোন ইট ভাটা করা যাবে না। কিন্তু  উপজেলায় মোট নয়টি ইট ভাটা একেএফ, এএনএ, এফএএন, জিবিএল-১, জিবিএল-২, এইচবিআই, টিআইবি, এসবি ও এসআইবি ব্রিকস। এর মধ্যে শেষের তিনটি ছাড়া বাকি ছয়টি কৃষি জমিতেই অবস্থিত। 

ইট ভাটাগুলোর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেয়েছে তিনটি এবং ছয়টি ইট ভাটা কোন ছাড়পত্র পায়নি। এই তিনটির মধ্যে আবার মাত্র একটি ইট ভাটার কাগজ হালনাগাদ আছে বাকি কোনটির নেই। একটি ভাটা (এইচ বি আই) ছাড়া বা কি অন্য সব ইট ভাটায় দেদারছে কাঁঠ পোড়ানো হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চর বালিয়াকান্দি অঞ্চলের তিন ফসলি জমির মাটি নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় মাটি খেকো ও তার সক্রিয় সদস্যরা।
এ সময় পাশের ক্ষেতের মালিক নুরু প্রামাণিক বলেন, 'এখান থেকে মাটি কেটে নিলে আমার ক্ষেত ধ্বসে পড়বে। তাছাড়া সারা দিন ট্রাক আসা যাওয়ায় জমির ক্ষতি হচ্ছে। সামনে দেখেন মধ্য মাঠে কি বিশাল পুকুর কাটছে। প্রশাসন দিনে এসে বন্ধ করে দেয় তারা সারা রাত ধরে কাটে। তারা কারও কোন কথা শুনে না।'

দৌলতদিয়া আক্কাস আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছন থেকে দুই ফসলি জমি থেকে জমির উপরিভাগের (টপ সয়েল) তিন ফুট মাটি চলে যাচ্ছে ইট ভাটা ও বাড়ি নির্মাণে। নানা কৌশলে কৃষকদের কাছ থেকে এসব মাটি কিনে নিচ্ছে। আবার মাটি বিক্রিতে অনীহা প্রকাশ করলে অসহায় কৃষকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এতে করে কমছে জমির পরিমাণ। মাটি কাটার ফলে জমির উর্বরতা হ্রাসসহ ফসলি জমি বিনষ্ট হচ্ছে।

অন্যদিকে, জমির মাটি আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরের দানবীর চাকায় পিষ্ট হচ্ছে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তাঘাট। সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা নিয়ে ইট ভাটার মালিকরা নির্বিঘ্নে তাদের এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে একদিকে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের, অন্যদিকে দীর্ঘ সময় থেকে সংস্কার না হওয়া উপজেলার রাস্তাঘাটগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

একাধিক কৃষিবিদ বলছেন, যেকোনো ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ছয় থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। এটাই টপ সয়েল বা প্রাণমাটি। এলাকাভেদে জৈবিক প্রক্রিয়ায় টপ সয়েল তৈরিতে ১০০ থেকে ৫০০ বছর সময় লেগে যায়। মাটির এই অংশেই ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ প্রয়োজনীয় জীবনীশক্তি বা বাঁচার ও বিকাশের উপাদান গ্রহণ করে টপ সয়েল থেকে। এই অংশ একবার কেটে নিলে জমিতে প্রাণ থাকে না। জমি পঙ্গু হয়ে যায়। এমন একটা মূল্যবান মাটির স্তর আমরা শেষ করে দিচ্ছি। দেশের সব কৃষিবিদ, কৃষি কর্মকর্তা বিষয়টি জানেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খোকনুজ্জামান বলেন, 'ফসলি জমির উপরিভাগের ছয় থেকে আট ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির জৈব উপাদান চলে যায়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। ফসলি জমির মাটি কাটা তাই বেআইনি।'

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, 'অবৈধ বালু উত্তোলনের সত্যতা পেয়েছি। ইতিমধ্যে গত মঙ্গলবার তিন জন চালককে রাতে ধরে জরিমানা করা হয়েছে। মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে।'

-এসআই/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,