সাইনবোর্ডে লেখা আছে “সরকারি হাসপাতাল/প্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লা আবর্জনা ফেলা নিষেধ”। কিন্তু বিষয়টা তার ঠিক উল্টো। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ভ্যানে করে বাসা বাড়ির ও বাজারের ময়লা আবর্জনা নিয়ে আসছে এবং রাস্তার ওপর এলোমেলো ভাবে ফেলে যাচ্ছে। কয়েকজন টোকাই পঁচা ময়লার স্তূপ এদিক-ওদিক সরিয়ে ভাঙাচোরা প্লাস্টিক, পলিথিন, বোতল ইত্যাদি কুড়িয়ে কাঁধে চাপানো বস্তায় রাখছে।
এভাবে ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে মূল রাস্তা ও ফুটপাতের বিভিন্ন স্থানে। ফলে নষ্ট হচ্ছে রাস্তার স্বাভাবিক পরিবেশ।
পথচারীদের দেখা যায়, নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করছে। কেউ কেউ হাত দিয়ে নাকমুখ চেপে ধরে চলাচল করছে। পচা ময়লা আবর্জনার দূর্গন্ধ বাতাসের সঙ্গে মিশে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ফলে প্রতিদিনই এলাকাবাসী, পথচারী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষ অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়ছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। তিন ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল এই বাজারটি। সঠিক তদারকির অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে বাজারের সৌন্দর্য। মুন্সীবাজার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সামনের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার মুন্সীবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ডাকঘরসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্লাস্টিকের বোতল, কার্টুন, কর্কশিট, কাগজ, পলিথিন, বস্তাবন্দি বাসি খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ময়লা আবর্জনার স্তুপ পেরিয়ে এখানকার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়, মুন্সীবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আহমদ নগর দাখিল মাদ্রাসা ও এখানকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচল করতে হয়।
বাজারের চারদিকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় কাঁচা বাজার, মাছ বাজারসহ ভেতরের বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর আশ্বাস আর আশ্বাস। কেউই উদ্যোগ নিচ্ছেন না ময়লা অপসারণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে।
কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলছাত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন মুখে রুমাল দিয়ে এই পথ দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করি। যদি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নজরে আনেন আমাদের জন্য ভালো হবে।’
পথচারী আব্দুর রাজ্জাক ও ঝুলন চত্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। রাস্তার পাশের ময়লা-আবর্জনা আর অসহনীয় দূর্গন্ধের কারণে চলাচল করতে কষ্ট হয়।’
ভুক্তভোগী স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, বছরের পর বছর ময়লার দূর্গন্ধের কারণে বাজারে কেনাটাকা করা মুশকিল হয়ে পড়েছে ক্রেতাদের। এই আবর্জনা বাজারের পাশেই রাখার কারণে পুরো বাজার দূর্গন্ধে ভরে গেছে। ব্যবসা করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এই জায়গায় যদি ডাস্টবিন তৈরি করে দেয়া হয় তাহলে প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলবে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি একটি গণশৌচাগার করে দেওয়ার।
বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জুনেল আহমেদ জানান, ‘নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় বাজারের ময়লা এখানে ফেলা হচ্ছে। আমরা মাঝে মধ্যে গিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পরিস্কার করার চেষ্টা করি।’
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নাহিদ আহমেদ তরফদার বলেন, ‘এখানে ময়লা ফালানোটা মোটেও ঠিক নয়। আমি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিকে বিষয়টি অবগত করবো যেন নির্ধারিত স্থানে ফালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘যেহেতু লেখা আছে ময়লা ফালানো যাবে না, তারপরও যদি ময়লা ফালানো হয় তাহলে বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে খুবই গুরুত্বসহকারে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, ‘এখানে লেখাই আছে ময়লা ফালানো যাবে না। এখন আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম ময়লা ফালানো হচ্ছে। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
-এসএস/এমএ