অস্তিত্ব হারাচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল
Published : Sunday, 18 December, 2022 at 10:24 PM Count : 226
খুলনার কয়রা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণে শাকবাড়িয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের শেষ প্রান্তে বঙ্গোবসাগরের তীরে অবস্থিত দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন। নদী দুটি তিন দিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে ইউনিয়নটিকে। নদী পার হলেই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি সুন্দরবন।
লোকালয়ের পাড়ে ইউনিয়নটির সর্ব দক্ষিণে গোলখালী গ্রামের সামনে বেড়িবাঁধের বাইরে মূল জঙ্গল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পলি জমে গড়ে উঠেছে আরেকটি জঙ্গল। জঙ্গলটির নাম সিংঙ্গের টেকের চর। চরটির চারপাশে সংরক্ষিত বনাঞ্চল লেখা সাইনবোর্ড রয়েছে বন বিভাগের। তবে এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির অস্তিত্ব আর থাকছে না। কারণ বন বিভাগকে না জানিয়ে সিংঙ্গের টেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করতে বরাদ্দের পাশাপাশি ঠিকাদারও নিয়োগ করে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ।
একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালাতে হলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে দাবি করছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
এছাড়া, সিংঙ্গের টেকের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এলাকার কাঠের সেতু কিংবা ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হলে সেখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবার ঝুঁকির রয়েছে। ফলে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আপত্তির কথা জানিয়েছে বন বিভাগ।
আর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, সিংঙ্গের টেকের সব জমি বন বিভাগের নয়। সেখানে সরকারি খাস জমিও রয়েছে। গোলখালী সিংঙ্গের টেকের যেটুকু অংশে রাস্তা, ওয়াকওয়ে এবং ওয়াচ টাওয়ার হবে, সেটি মূলত নদীর বুকে জেগে ওঠা একটি চর। যা মূল ভূখন্ডের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে তেমন কোন গাছপালাও নেই। তাছাড়া গাছপালা না কেটেই সবকিছু নির্মাণ করা যাবে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের টুরিজম বোর্ড কয়রার গোলখালী এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য এক কোটি ৫৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রথম ধাপে ৪৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওয়াকওয়ে ও কাঠের সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করতে বলা হয়েছ। এরপর এক কোটি ছয় লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। কাজটি বাস্তবায়ন করছে মেসার্স ঘোষ কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পর্যটন কেন্দ্রের জায়গাটি সুন্দরবনের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের কাছাকাছি।
ওই স্টেশনের কর্মকর্তা মো. ফারুকুল ইসলাম বলেন, গোলখালীর যেখানে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে সেটা সরকারি গেজেট অনুযায়ী অভয়ারণ্য হিসেবে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সে জন্য বন বিভাগের অনুমতি না নিয়ে কোন কার্যক্রম শুরু না করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মমিনুর রহমান বলেন, সিংঙ্গের টেকের জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। এটা বন বিভাগের নয়। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের টুরিজম বোর্ডের সচিব এসে ওই স্থানটি ভিজিট করেছিলেন। এরপর পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করারও নির্দেশ রয়েছে। আমরা বন বিভাগকে আশ্বস্ত করেছি যে গহিন বনের ভেতরে আমরা কিছু নির্মাণ করব না। লোকালয়ের কোল ঘেঁষে সড়ক ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। কিন্তু তাতেও বন বিভাগের আপত্তি। এছাড়া অনুমোদিত গেজেটে ওই জায়গাটি ভূমি অধিদপ্তরের, বন বিভাগের নয়।
গোলখালী সিংঙ্গের টেক এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে অবাক হয়েছেন খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন।
তিনি বলেন, সিংঙ্গের টেক এলাকায় এক সময় ফরেস্ট অফিস ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে অফিসটি ভেঙে গিয়েছিল। আবারও সেখানে বন বিভাগের অফিস নির্মাণ করা হবে। ওই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের কোন সুযোগ নেই।
-এসএম/এমএ