For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রাবির গণরুমে গাদাগাদিতে দেড় হাজার ছাত্রী, নেই পড়ালেখার পরিবেশ

Published : Monday, 12 December, 2022 at 8:27 PM Count : 122

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নয় হাজার ৩৪৬ জন ছাত্রীর বিপরীতে সিট রয়েছে চার হাজার ৩৫৪টি। যা মোট আবাসনের ৪৬ শতাংশ। পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ছয়টি আবাসিক হলেই গণরুমের সৃষ্টি হয়েছে। এতে গাদাগাদি করে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। 

ছাত্রীদের অভিযোগ, সিটের তুলনায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। এছাড়াও শৌচাগার সংকট, সিনিয়রদের দৌরাত্ম, পোকামাকড়ের উপদ্রব, দুর্বল ওয়াই-ফাই, ডাইনিংয়ের পুষ্টিহীন খাবারসহ নানাবিধ সমস্যায় ভুগছেন তারা।

হল প্রাধ্যক্ষরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রী নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে থেকে আসা। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কথা উল্লেখ করে তারা গণরুমের সিটের জন্য বিভিন্ন শিক্ষকের মাধ্যমে অনুরোধ করেন। অনেকের অভিভাবক এসে মেয়ের নিরাপত্তার কথা বলে গণরুমে সিটের জন্য আকুতি-মিনতি করেন। তখন তারা বাধ্য হয়ে সিটের তুলনায় অধিক শিক্ষার্থী রাখেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদেশি ও সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষার্থী ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী ২৬ হাজার ৩১৫ জন। এর মধ্যে নয় হাজার ৩৪৬ জন ছাত্রী। এই ছাত্রীদের জন্য আবাসিক হল রয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে মন্নুজান হলে এক হাজার ১০টি, রোকেয়া হলে ৭২০, তাপসী রাবেয়া হলে ৪৬৪, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪৫২, রহমতুন্নেসা হলে ৬৭৬, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে এক হাজার ৩২টিসহ মোট আসন চার হাজার ৩৫৪টি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব হলের প্রতিটিতেই রয়েছে ছাত্রীদের জন্য আলাদা গণরুম। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষ ও দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্রীদের গণরুমে থাকতে দেয়া হয়। এর মধ্যে মন্নুজান হলের চারটি গণরুমে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রী, তাপসী রাবেয়া হলের দুটি গণরুমে ২৮০ জন, খালেদা জিয়া হলের দুটি গণরুমে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী থাকে। এছাড়াও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একটি মাত্র গণরুমে এ বছর ২১০ জন ছাত্রীকে আবাসিকতা দেয়া হয়েছে। বেগম রোকেয়া হলে পাঁচটি রুমে প্রায় ২৫০ জন ছাত্রী ও রহমতুন্নেছা হলে কয়েকটি গণরুমে প্রায় ২৫০ ছাত্রী থাকেন বলে জানা গেছে।

গণরুমের শিক্ষার্থীরা বলছেন, জায়গার তুলনায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়া একজনের সিটে গাদাগাদি করে দু'জন থাকতে হচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে পড়াশোনার পরিবেশ। এছাড়া, শৌচাগার সংকট, সিনিয়রদের দৌরাত্ম, পোকামাকড়ের উপদ্রব, দুর্বল ওয়াই-ফাই, ডাইনিংয়ের পুষ্টিহীন খাবারসহ নানাবিধ সমস্যায় ভুগছেন ছাত্রীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাপসী রাবেয়া হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাবা দিনমজুর। অনেক কষ্টে থাকার একটা সিট পেয়েছি। এক সিটে দু'জন ভাগাভাগি করে থাকি। কিন্তু এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের সিনিয়ররা আমাদেরকে ওয়াশরুম ও কিচেন (রান্নাঘর) ব্যবহার করতে দেয় না। ওই শিক্ষার্থী ওয়াশরুমের সঙ্গে লাগানো একটি পোস্টারিংয়ের ছবি দেয়। এতে লেখা আছে ‘গণরুমের মেয়েদের প্যাড ফেলা ব্যতীত বাথরুম এবং ‘কিচেন’ ব্যবহার করা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ।

মন্নুজান হলের গণরুমে থাকা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসমা (ছদ্ম নাম) বলেন, গণরুমে থাকার মতো পরিবেশ নেই। নেই লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ। হলে রুমগুলো অপরিচ্ছন্ন, দেয়ালে মাকড়সার জাল, দেওয়া হয় না নিয়মিত ঝাড়ু।

শিক্ষার্থীদের তুলনায় বাথরুম, টয়লেটের সংখ্যা খুবই অপ্রতুলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, চারটি গণরুমের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাথরুম মাত্র আটটি, তার মধ্যে দুটি বাথরুমের দরজা আটকানো যায় না। বাইরে থেকে প্রথমবার কেউ এলে গণরুমগুলোকে বস্তির সঙ্গে তুলনা করেন।

খালেদা জিয়া হলের প্রথমবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, গণরুমে ছাত্রীদের রান্নার ব্যবস্থা নেই। সিনিয়রের চুলা ব্যবহার করে রান্না করতে হয়। কোথাও একটু ভুলভ্রান্তি হলে হতে হয় হেনস্তার শিকার। আমাদের প্রয়োজনমতো ওয়াশরুম নেই। ওয়াশরুমে আগে থেকে সিরিয়াল দিতে হয়। সময়মতো ক্লাস টিউশনিতে যেতে পারি না। রয়েছে ওয়াইফাই সমস্যা। একই অবস্থা বাকি তিনটি ছাত্রী হলেরও।

ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষরা বলছেন, ছাত্রীরা তাদের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে সিটের আবেদন করে। ফলে মানবিক বিবেচনায় সিটের তুলনায় বেশি ছাত্রীকে বরাদ্দ দেয়া লাগে। যার কারণে গাদাগাদি করে থাকতে হয়।

গণরুমে এক সিটে দু'জন থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তাপসী রাবেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌসী মহল বলেন, 'শিক্ষার্থীদের চারটি ব্লকের প্রত্যেকটা ফ্লোরে একটি করে হিটারের চুলা রয়েছে। শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় সবাই রান্না করতে পারে না।' এ সমস্যা দূর করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য হলের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

খালেদা জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নুসরাত জাহান বলেন, 'সিটের তুলনায় ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি হলে সমস্যা থাকবেই। আমাদের কাছে এসে একটি সিটের জন্য আকুতি-মিনতি করে। আবার অনেকে শিক্ষকের মাধ্যমে রিকোস্ট করে। ফলে আমরা সিট দিতে বাধ্য হই। আর গণরুমে কিচেন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সিনিয়ররা একটু প্রভাব দেখানোর অভিযোগ সত্য, তবে আমরা হল কর্তৃপক্ষ সর্বদা বিষয়টা দেখভাল করি।'

সার্বিক বিষয়ে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, 'ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল নির্মাণাধীন রয়েছে। এ হলে মোট এক হাজার সিট রয়েছে। এছাড়াও ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আরও হল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।'

-আরএইচ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,