জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিপূরণ অর্থায়ন
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থ আদায়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে হবে
Published : Tuesday, 6 December, 2022 at 3:56 PM Count : 87
আগামী বছর জলবায়ু আলোচনায় ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়ন কাঠামো (লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফিন্যান্সিং ফ্রেমওয়ার্ক-এলডিএফএফ) তৈরির ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে জোরালো নেতৃত্ব প্রদানে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুপারিশ করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত 'কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলনের ফলাফল এবং বাংলাদেশের করণীয়' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সিএসআরএম’র সেক্রেটারি জিয়াউল হক মুক্তা, সিপিআরডি’র চিফ এক্সিকিউটিভ মো. শামসুল দোহা ও এসডিএস’র নির্বাহী পরিচালক রাবেয়া বেগম। আয়োজক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের পরিচালক সৈয়দ আমিনুল হক।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ইকুইটিবিডির আমিনুল হক বলেন, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফিন্যান্স ফ্রেমওয়ার্ক (এলডিএফএফ) ঘোষণা কপ২৭-এর একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এ নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে আত্মতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই, যতক্ষণ না এটিকে একটি দারিদ্র্যবান্ধব এবং ন্যায্যতাভিত্তিক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা না যায়।’
তিনি সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রে স্বল্পোন্নত দেশ ও দ্বীপদেশগুলোর কথা উল্লেখ না করার ধনী দেশগুলো এবং কপ সভাপতির সমালোচনা করেন।
শামসুদ্দোহা বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতিবিষয়ক অর্থায়নের ঘোষণাটি কিছুটা জটিল এবং এর সঙ্গে জলবায়ু প্রশমনের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যার অর্থ হলো এলডিএফএফের আওতায় সহায়তা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ভবিষ্যতে তাদের নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে হবে। এটি খুবই বিতর্কিত এবং বিপদাপন্নতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা, এলডিএফএফে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া নিয়ে উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য দেখা দিতে পারে। ধনী দেশগুলো বিভিন্ন ধরনের শর্ত আরোপ করে এই প্রক্রিয়াটিকে বিলম্বিত করতে পারে। আমাদের এই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হার ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্য অর্জনে অর্থপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে কপ২৭-এর ব্যর্থতার সমালোচনা করেন জিয়াউল হক মুক্তা। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানোর বর্তমান আলোচনা বিজ্ঞানভিত্তিক দাবির চেয়ে ৪০ বছর পিছিয়ে। ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দূষণকারী দেশগুলোর এই বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগই নেই। তথাকথিত ‘ফেজ ডাউন’ ধারণার সুযোগে অনেক ইউরোপীয় দেশ তাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুনরায় কার্বন নিঃসরণ শুরু করেছে। এই প্রবণতা অগ্রহণযোগ্য এবং ইউএনএফসিসিসি থেকে চাপ সৃষ্টি করা বন্ধ করতে হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দেন রাবেয়া বেগম। তিনি বলেন, ‘অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর কথা তুলে ধরতে হবে, সরকার এবং নাগরিক সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে তা আমাদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করতে পারে।‘
পরবর্তী কপে স্বল্পোন্নত, অতি বিপদাপন্ন এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামকে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন রেজাউল করিম চৌধুরী।
এনএন