For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

ঢাকায় গণসমাবেশ: মুন্সীগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলার অভিযোগ

Published : Sunday, 4 December, 2022 at 12:34 PM Count : 802

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টনে বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে মুন্সীগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক গায়েবি মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা মিলে গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের নাটক সাজিয়ে গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে বলে মুন্সীগঞ্জ বিএনপি নেতাদের দাবি। 

দলীয় একাধিক নেতার দাবি, মুক্তারপুরে পুলিশের গুলিতে যুবদল নেতা শাওন নিহত হওয়ার পর পুলিশ ও শ্রমিক লীগের দায়ের করা দুইটি মামলায় জেলাব্যাপী শত শত নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া এবং মামলাবিহীন নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু করায় মুন্সীগঞ্জ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই অবস্থায় আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টনে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের দমন-নিপীড়ন ও হয়রানি করার লক্ষে নাটক সাজিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর ও শ্রীনগর থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে পল্টনে গণসমাবেশে অংশ নিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নিয়েছে।  

এদিকে, গত ২৭ নভেম্বর রাতে শহরের কলেজপাড়া এবং ১ ডিসেম্বর রাতে শ্রীনগর উপজেলার শ্রীনগর-দোহার বাইপাস সড়কে যানবাহন ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৪০ জন নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতনামা ৯০ জন নেতাকর্মীর নামে পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার এসআই মো. জিয়াউর রহমান গত  ২৮ নভেম্বর বাদী হয়ে শহর যুবদলের সভাপতি এনামুল হককে প্রধান আসামি করে মুন্সীগঞ্জ পৌর বিএনপির বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান দেওয়ান, সদস্য সচিব মাসুদ রানাসহ ২১ জনের নামে থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন। এ মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আরো ৪০/৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। অপর মামলাটি করেন শ্রীনগর উপজেলার দেউলভোগ গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে যুবলীগ কর্মী সাগর হোসেন। এ মামলায় উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাফিজুল ইসলাম খান, শ্রীনগর উপজেলা যুবদলের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জেমসসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও বিএনপির ৩০/৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। 

মামলা সূত্রে মতে, গত ২৭ নভেম্বর রাত ৭টা ৫০ মিনিটের সময় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সুলতান আহম্মেদ-এর মুক্তির দাবিতে শহরের কলেজপাড়া এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে অটোরিকশা ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় বিএনপির ২১ জন নেতাকর্মীকে এজাহারভুক্ত ও ৪০/৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ২৮ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করা হয়েছে। 
অপর মামলাটি হয় গত ২ ডিসেম্বর শ্রীনগর থানায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সকল মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে গত ১ ডিসেম্বর রাতে শ্রীনগর-দোহার বাইপাস সড়কে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মিছিল বের করে ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের ওপর হামলা, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ এনে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। 

এ ব্যাপারে শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. হাফিজুল ইসলাম খান জানান, দীর্ঘদিন ধরে শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকা ছাড়া হয়ে আছে। নাটক সাজিয়ে নতুন করে গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্য এ মামলা করা হয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর পল্টনে বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ  মিলে এ ঘটনা সাজিয়ে গায়েবি মামলা দিয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে।

মুন্সীগঞ্জ পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন জানান, মুক্তারপুরের ঘটনার পর দলীয় নেতাকর্মীরা জামিন নিয়েও পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকা ছাড়া হয়ে আছে। মিছিল করার মতো কোন নেতাকর্মী নেই মাঠে। আমাদের বিরুদ্ধে নাটক সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এই মামলায় আমরা ২০ জন গত ৩০ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছি। এরপরও পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে কেউ এলাকায় যেতে পারছে না।  

জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। পুলিশের বাঁধা এবং দলীয় ব্যানার কেড়ে নিয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে সংঘর্ষ বাঁধে এবং বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীসহ যুবদল নেতা শহিদুল ইসলাম শাওন (২০) পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯ টার দিকে শাওন মারা যায়। নিহত শাওন মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা এলাকার আব্দুর রহিম ভুইয়ার ছেলে ও ৮ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। 

সংঘর্ষকালে মুন্সীগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম, সদর থানার ওসি মো. তারিকুজ্জামানসহ প্রায় ৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এছাড়াও স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মীও আহত হয়।

ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর রাতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনসহ ৩১৩ জনকে এজাহারনামীয় আসামি ও ৭০০-৮০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এই মামলার বাদী হয় এসআই মাইনউদ্দিন। পুলিশ অ্যাসল্ট ও সরকারিকাজে বাঁধা দেয়ায় বিস্ফোরবদ্রব্য আইনে এই মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ, ছয়টি উপজেলা ও ২টি পৌর বিএনপির আহবায়ক-সদস্য সচিবসহ স্থানীয় বিএনপি, জেলা য্বুদল, জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ পদ-পদবীর প্রায় সবনেতাকেই আসামি করা হয়। অপর মামলাটি করেন মুক্তারপুরের বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুল মালেক। শ্রমিক লীগের অফিস ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, মারধর করে জখম করার অভিযোগে এ মামলাটি করা হয়। এ মামলায় সদর উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক মহিউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধান আসামি করা হয়। এ মামলায় ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়। 

এই দুইটি মামলায় ১হাজার ৩৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। জেলার সব উপজেলার নেতারা আসামি হওয়ার পর থেকে মুন্সীগঞ্জে বিএনপির কর্মকান্ড কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। সর্বত্র গ্রেপ্তার আতঙ্কে দলীয় নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান নিয়েছে। এই দুইটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে নেতাকর্মীরা জামিন নেয়। মামলার অধিকাংশ নেতাকর্মী মুন্সীগঞ্জ আদালত থেকে জামিন পেলেও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনসহ ৮-৯ জন নেতাকর্মীর জামিন না মঞ্জুর হলে তারা কারাগারে রয়েছেন। 

গত ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ শহরের বাজার এলাকা থেকে জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সুলতান আহম্মেদকে পুলিশ আটক করে পুলিশের ওপর হামলার হামলায় আসামি দেখিয়ে ৫দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করে। যুবদল নেতা সুলতান এজাহারনামীয় আসামি নয় বলে বিএনপির নেতারা জানান। 

এমএইচ/এনএন

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,