বগুড়াসহ রাজশাহী বিভাগীগের সকল জেলার বাস চলাচলে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। এতে জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সাধারণ যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১০ দফা দাবিতে রাজশাহী বিভাগীয় ধর্মঘট চলছে বগুড়াতেও।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট চলছে। আর এ কারণে সকাল থেকেই জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো যানবাহন বগুড়া ছেড়ে যাচ্ছে না। পরিবহন নেতারা বলছেন, ধর্মঘটের কারণে বগুড়া থেকে ৩৪টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে পরিবহন শ্রমিকেরা ১০ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন। এর আগে গত শনিবার নাটোরে বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভায় দাবি আদায়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বগুড়ার চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও ঠনঠনিয়া বাসট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, সড়কে কোন গণপরিবহন চলাচল নেই। চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে সকল রুটের বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তবে সড়কে পণ্যবাহী বাহনের ব্যন্ততাা ছিল প্রতিদিনের মতোই স্বাভাবিক। তুলনামূলক অন্যানদিনের চাইতে মূল সড়কগুলো ফাঁকাই ছিল। তবে সড়কে পর্যাপ্ত যাত্রী দেখা গেছে।
চারমাথা বাস টার্মিনালে রংপুরের বাস যাত্রী শাহ আলম জানান, আমি গত দুই দিন হলো বগুড়ায় এসেছি জরুরী কাজে। বাস বন্ধ থাকায় যেতে পারছি না। বাড়ি ফিরে যাওয়া আমার অত্যান্ত জরুরী। বাস না থাকায় এখানে এসে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে আছি। জানি না কিভাবে বাড়িতে যাবো।
ঢাকার ব্যবসায়ী গাফ্ফার মন্ডল জানান, ব্যবসার সুবাদে প্রতিদিন ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়া আসা করি। কয়েক দিন পর পর পরিবহন শ্রমিক ও মালিকেরা ধর্মঘটের ডাক দেন। এতে অন্য কারও কিছু না হলেও যাত্রীদের হয়রানি এবং ভোগান্তির শিকার হতে হয়। পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের কাছে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এভাবে বাস বন্ধ থাকলে আমাদের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পড়বে।
বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জানান, ১০ দফা দাবিতে পরিবহন শ্রমিকেরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে বগুড়ার অভ্যন্তরীণসহ ৩৪টি রুটের প্রায় ১২শ বাস চলাচল বন্ধ আছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে।
উল্লেখ্য এর আগে বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয় থেকে জানানো হয় গত ২৬ নভেম্বর সকাল ১০টায় নাটোরের কানাইখালী আরপি সেন্টারে রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আয়োজনে এবং নাটোর জেলা বাস মিনিবাস ও মাইক্রোবাস সমিতির ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এই সভায় রাজশাহী বিভাগের সকল যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহন সংগঠনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভা থেকে ১০ দফা দাবী উত্থাপন করা হয়।
দাবীগুলোর মধ্যে রয়েছে, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন করা, সড়ক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, নসিমন, করিমন, ভটভটি, সিএনজি, ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ করা, পরিবহনে ব্যবহৃত জ্বালানী তেল ও যন্ত্রাংশের অস্বাভাবিক মূল্য হ্রাস করা ও করোনাকালিন সময়ে প্রদানকৃত ট্যাক্স মওকুফ করা, পরিবহন সংক্রান্ত ফি অস্বাভাবিক হার বৃদ্ধি বন্ধ করা, চালক লাইসেন্স এর জটিলতা বন্ধ করা, পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, উপজেলা পর্যায় থেকে বিআরটিসি চলাচল বন্ধ করা, সড়ক ও মহাসড়কে হাট বাজার আয়োজন বন্ধ করা ও চলমান বাজার উচ্ছেদ করা, যাত্রী উঠা-নামানোর পার্কিং এর ব্যবস্থা করা, প্রতিটি জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ও সকল প্রকার ওভারলোড পরিবহন বন্ধ করা এবং সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী দূরপাল্লার গাড়ী চালকদের নির্ধারিত স্থানে বিশ্রামাগার নির্মাণ করা।
এ/এসআর