For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিতে পরিকল্পিত শিল্পায়নের ওপর প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

Published : Sunday, 20 November, 2022 at 6:16 PM Count : 81

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আবাদি জমি রক্ষায় পরিকল্পিত শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে যুব ও নারীদের এ খাতে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার সকালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সারাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) ৫০টি শিল্প ইউনিট, প্রকল্প ও সুযোগ-সুবিধা উদ্বোধনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত্রতত্র কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। আবাদি জমি ও তিন ফসলি জমির কোন ক্ষতি করা যাবে না। শিল্পায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনব।’

তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ৫০টি শিল্প ইউনিট ও অবকাঠামোর উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে গিয়ে আজ আমি খুবই আনন্দিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময় বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দেন এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের মান ও মর্যাদা বিশ্বে যেন আরো বৃদ্ধি পায় সে পদক্ষেপ নেয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছি বলেই ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা ধরে রাখতে হবে। সে জন্য আমাদের ব্যাপক শিল্পায়ন দরকার। কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধিসহ আমাদের নতুর নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে এবং জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নতি করে তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে নিজস্ব বাজার সৃষ্টি হয়। সরকার সে কারণেই সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই বেশ কয়েকটি ইপিজেড নির্মাণ করেছে।

উত্তরবঙ্গে প্রথম নীলফামারির উত্তরা ইপিজেড প্রতিষ্ঠার কথা স্মরণ করেন তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ইতোমধ্যে ইপিজেড করতে ৯৭টি জায়গায় তাঁর সরকার ঠিক করে রেখেছে। সেখানে পর্যায়ক্রমে বিনিয়োগ আসবে। কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক ধাক্কা সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশে লাগলেও তাঁর সরকার সেটি সামলে নিয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখায় সচেষ্ট রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর মরার ওপর খরার ঘাঁ, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশনের ফলে আমাদের ক্রয় ক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা নেমে এসেছে। আমদানি পণ্যের দাম এবং পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। ফলে অনেক দেশ মন্দায় ভুগছে।

শিল্প মালিকদের এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজের ইন্ডাস্ট্রি চালিয়ে অন্তত দেশের মানুষের চাহিদা পূরণের প্রচেষ্টা চালাবেন আপনারা। আওয়ামী লীগ সরকার আপনাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এখন আর হাওয়া ভবন নাই যে আপনাদের কোন কাজ পেতে হলে সেখানে পাওনা ঘুচাতে অথবা এখানে ওখানে ছোটাছুটি করতে হবে। আমরা দেশকে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। ব্যবসার ক্ষেত্র প্রস্তুত এবং সুযোগ-সুবিধা আমরা করে দিচ্ছি। আপনারা প্রত্যেকেই দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন, যত বেশি মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন আমরা সরকার তত বেশি আপনাদের সহযোগিতা করবো। কিন্তু এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষ কষ্ট পায় বা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

তিনি বলেন, কৃষি জমি যেমন আমাদের বাঁচাতে হবে তেমনই শিল্পোৎপাদনও করতে হবে। সে জন্য যত্রতত্র যেন শিল্প গড়ে না ওঠে সে দিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।

বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাবের কারণে বাংলাদেশ উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিরসরাই শিল্পাঞ্চলে যেসব ফসলী জমি রয়েছে সেগুলো ফসলী হবে।’

জাপান ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একপাশে ইন্ডাষ্ট্রি আরেক পাশে পুরো ধান ক্ষেত। আমি ধান ক্ষেতে নিজে নেমে দেখে এসেছি। আমাদের দেশেও সেভাবে হতে পারে। আমরা সেটাই চাই।

মালিকপক্ষের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, আপনারা যদি শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করে দেন। তারা ভালো থাকলে তাদের কাছ থেকে অধিক কাজ পাবেন এবং উৎপাদনশীলতা বাড়বে। তাদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ক্রমান্বয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন করে দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগের জন্য আসছে। আমরা একেকটা দেশের জন্য একেকটা খন্ডে জমি দিয়ে দিচ্ছি। তারা নিজেদের মতো করে তাদের দেশ থেকে যে সমস্ত কোম্পানি আসবে তারা নিয়ন্ত্রণ করবে। তাদের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়বে এবং সেই সঙ্গে আমাদের দেশের যা প্রয়োজন তাও মিটাবে এবং বিদেশে রপ্তানিও করবে।

তিনি আরও বলেন, এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং এখান থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আমরা নির্ধারণ করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে ইতোমধ্যে ২৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক উৎপাদন করছে এবং ৬১টি শিল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ৪৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প নির্মাণে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

শিল্পায়নের জন্য যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে গ্যাস খুঁজে বের করার এবং বিদেশ থেকে ক্রয়ের চেষ্টা করছি, যাতে গ্যাস সংকটে না পড়তে হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি খাতে শিল্পায়নের জন্য জায়গা দিয়ে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। শিল্পায়ন এক এলাকা ভিত্তিক নয়, সারা বাংলাদেশব্যাপী করা হচ্ছে। শিল্পায়ন করতে গিয়ে তিন ফসলের জমি নষ্ট করা যাবে না। যারা জমি দেবে তাদের পরিবারের সদস্যদের কর্মস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। 

তিনি এ সময় অহেতুক চাকরির পেছনে না ছুটে সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যুব সমাজকে উদ্যোক্তা হবার এবং নিজের এবং অপরের জন্য কর্মসংস্থানে এগিয়ে আসায় তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

সরকারপ্রধান বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ দ্রুত হয়েছে। ঢাকা থেকে আরও অল্প সময়ের মধ্যে যাতে রেলে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যায়, সেই জন্য নতুন রেল লাইনের চিন্তা করছি। এটা আমরা কবর। পাশাপাশি মিরেরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ এবং চার লেনের রাস্তা ছয় লেন করা হবে।

তিনি বলেন, কক্সবাজারে আমরা আন্তর্জাতিক মানের এয়ারপোর্ট করে দিচ্ছি। চট্টগ্রাম কর্ণফুলী টানেল করে দিচ্ছি। এপারের মানুষ ওপারে যেতে আর অসুবিধা হবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার একটানা প্রায় ১৪ বছর সরকার পরিচালনায় আছে বলেই উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান হয়েছে এবং এর সুফল জনগণ পাচ্ছে। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। মাথাপিছু আয় বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার।

৫০টি শিল্প সুবিধার মধ্যে চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে (বিএসএমএসএন) চারটি কারখানা এবং বেসরকারি ভাবে পরিচালিত বিভিন্ন ইপিজেডে আটটি কারখানা খোলা হয়েছে।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি, চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান চট্টগ্রামের বিএসএমএসএন প্রান্তে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। 

স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কর্মকান্ডের ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে চারটি কারখানার পাশাপাশি সিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের দুটি, মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাতটি এবং শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি শিল্প-কারখানা নিয়ে মোট ১৪টি কারখানার বাণিজ্যিক উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। 

অর্থনৈতিক অঞ্চলের সড়ক, ভবন, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোও উদ্বোধন করেন তিনি।

এছাড়া, দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্মাণাধীন ২৯টি কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকারপ্রধান।
প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন একযোগে মোট আটটি ভেন্যুতে হয়। ভেন্যুগুলো হচ্ছে- গণভবন, ঢাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর (বিএসএমএসএন মিরসরাই, চট্টগ্রাম), শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল (মৌলভীবাজার), কর্ণফুলী ড্রাইডক এসইজেড (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম), মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল (সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ), জামালপুর অর্থনতিক অঞ্চল (জামালপুর সদর), সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক (সাবরাং, কক্সবাজার) ও হোসেন্দি অর্থনৈতিক অঞ্চল (গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ)। বাসস।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,