জামিনে এসে বাদীর বাবাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন
Published : Saturday, 5 November, 2022 at 4:02 PM Count : 168
ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের মামলায় জামিনে এসে বাদীর বাবা আব্দুল হামিদ খান পাঠান ওরফে তারা মিয়াকে (৭০) বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বাবাকে উদ্ধার করতে পুলিশের জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন মেয়ে লাইলী আক্তার।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের নিজামাবাদ বাসাবাড়ী গ্রামে আসামিদের বাড়িতে গাছে বাঁধা অবস্থায় বৃদ্ধকে উদ্ধার করে পুলিশ। নির্যাতনের শিকার তারা মিয়াকে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
তারা মিয়া জানান, আমার ছেলে রুবেল মিয়ার ৪০ শতাংশ জমি হাবিবুর রহমান আবু (৪০), আশিক খান পাঠান (২০), আছিয়া খাতুন (৩৫), কালা মিয়া খান পাঠান (২৭) ও নয়ন মিয়া খান পাঠান (৩৪) গং দখলের পাঁয়তারা করে আসছেন। এ ঘটনায় বিবাদীরা যাতে জোরপূর্বক এ ভূমিতে আসতে না পারে তার জন্য ১৪৪ ধারা জারি প্রার্থনায় ২ আগস্ট আমার ছেলে বাদী হয়ে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বৃহস্পতিবার আদালতে তারা হাজিরা দিয়ে জামিনে আসেন।
তিনি আরও জানান, জামিনে এসেই ছেলে রুবেল মিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে খোঁজাখুজি করতে থাকে। শুক্রবার সকালে বাড়িতে এসে তাকে না পেয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ওদের বাড়িতে গাছের সঙ্গে বেঁধে মাটিতে ফেলে উপর্যুপুরি নির্যাতন করা হয়।
এদিকে রুবেল মিয়া জানান, তিনি ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিজ দখলীয় ভূমিতে ১৪৪ ধারা জারির জন্য মোকদ্দমা দায়ের করেন। এ মামলা দায়ের করায় তার বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে খবর পেয়ে তিনি গৌরীপুর থানায় ছুটে আসেন। তার ছোট বোন লাইলী আক্তার পুলিশের জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯ নম্বরেও কল করেন। খবর পেয়ে গৌরীপুর থানার সাবইন্সপেক্টর মো. হানিফ মিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার বাবাকে উদ্ধার করেন। তাকে চিকিৎসার জন্য গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
গৌরীপুর থানার সাবইন্সপেক্টর মো. হানিফ মিয়া জানান, কাপড় দিয়ে বৃদ্ধ আব্দুল হামিদ খান পাঠান ওরফে তারা মিয়াকে গাছে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছি। গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী জানান, পুলিশ খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করেছে। এখন পর্যন্ত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুনগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ কাজল মিয়া জানান, আসামিরা বৃহস্পতিবার জামিনে এসে বাদীর বাবাকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সুবিচারের জন্য বিষয়টি বিজ্ঞ বিচারককে অবহিত করা হবে।
জানা যায়, হাবিবুর রহমান আবু গংদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছে। মৃত খালেক খান পাঠানের ছেলে আব্দুল হামিদ খান পাঠান ওরফে তারা মিয়া বাদী হয়ে এ বছরের ২০ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা জারির জন্য ১৫৫নং মামলা দায়ের করে। এ ছাড়াও শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নের আশংকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আরও একটি মামলা করেন তিনি। গত ২৭ জুলাই ধানের চারা রোপণে বাঁধা দেয়াকে কেন্দ্র করে মো. রুবেল মিয়া বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলার প্রতিবেদন ৩ আগস্ট বিজ্ঞ আদালতে প্রদান করেছে পুলিশ।
আসামিদের বিরুদ্ধে হামলা-লুটপাটের ঘটনায় ২ আগস্ট রুবেলের স্ত্রী ইয়াসমিন বাদী হয়ে ময়মনসিংহ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪নং আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। রুবেল মিয়া জানান, আসামিদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচাতে একাধিকবার আইনের আশ্রয় নিয়েও আমরা বাঁচতে পারছি না।
এসআই/এনএন