For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

জাল সনদে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতায় চাকরি

Published : Thursday, 8 September, 2022 at 3:53 PM Count : 575

কুড়িগ্রামেফুলবাড়ী উপজেলায় জাল সনদে দীর্ঘদিন ধরে চাকুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। জাল সনদে চাকুরির সত্যতা পেয়ে বেতন-ভাতা বন্ধের সুপারিশ করা এলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। 

তবে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস এই বিষয়ে কোন নির্দেশনা পায়নি বলে জানানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক নাসরিন সুলতানা কম্পিউটারের শিক্ষকতা শুরু করেন ২০০৯ সালে। তার এমপিও হয় ২০১০ সালে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বেতন, ভাতা নিয়মিত তুলছেন। উপজেলার কাশিপুর বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক আসমা খাতুনেরও সনদটি জাল। তিনি ২০১৩ সালে যোগদান করলেও তার এমপিও হয়নি। 

গত বছর ২৪ জুন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা) কুড়িগ্রামের স্বারক নং-০৫.৪৭.৪৯০০.০১৫.০২.০১৪.২১-১৩৩ ফুলবাড়ী উপজেলার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন জন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ যাচাই করার জন্য পত্র দেয়া হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, তাদের নিবন্ধন সনদ সঠিক নয়। ফলে নিবন্ধন সনদটি জাল প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ০৫.৪৭.৪৯১৮.০০০.০২.০৬১.২১.৬৮ স্বারক নং এ ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ওই শিক্ষকের বেতন ভাতা বন্ধের সুপারিশ করে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি পত্র দেয়া হয়। 
এছাড়াও, বিভিন্ন সূত্রে এ উপজেলার আরও চার জন শিক্ষকের জাল সনদের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা হলেন- বেড়াকুঠি হাট উচ্চ বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক আব্দুল রহিম, ফুলবাড়ী আদর্শ  উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল্যা সরদার, ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফিয়া জাহান, বড়ভিটা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহাকরী শিক্ষক বাদশা আলম, কাশিপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আছমা খাতুন, ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মোতালেব ও কাশিপুর ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক মাহফুজার রহমান।

একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশি ইসলামিয়া আলিম মাদ্ররাসার শরীর চর্চার সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদও জাল সনদভুক্ত তালিকায় নাম রয়েছে। তিনি এমপিওভুক্ত হয়ে নিয়মিত বেতন পেয়ে আসছেন। তদন্তে জাল সনদের বিষয়টি প্রমাণিত হবার পরও বহাল তবিয়তে আছেন জেলার অনেক শিক্ষক। জাল সনদের বিষয়টি প্রকাশ পেলেও তাদের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট কোন পত্র বা নির্দেশনা আসেনি। 

এছাড়াও, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০১৬ সালে সরকার ঘোষিত বাতিলকৃত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দিয়ে এখনো চাকুরি করে নিয়মিত বেতন, ভাতা উত্তোলন করছেন শিক্ষকরা। এই প্রতিষ্ঠানের সনদে নাগেশ্বরী ডিগ্রি কলেজের গ্রন্থাগার পদে হালিমা খাতুন চাকুরি করছেন। তার সনদ অনুযায়ী ২০১৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ২০২১ সালে ১০৫ জন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। যার স্বারক নং-ডিআইএ/এনটিআরসিএ/ রাজশাহী/৯৭৭ তারিখ-২৯সেপ্টেম্বর ২০১৬। এই স্বারকে সহকারী পরিচালক (শিক্ষাতত্ব ও শিক্ষা মান) লোকমান হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয় ৪, ৬ থেকে ২১, ২৫, ২৬, ২৮ থেকে ৩২, ৩৫ থেকে ৪২, ৪৪ থেকে ৬৪ এবং ৬৭ হতে ১০৫ নং তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা জাল সনদের আশ্রয় নিয়েছেন মর্মে প্রতিয়মান হয়। তাই সনদধারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নেবার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার নির্দেশ প্রদান করেন।

ফুলবাড়ী উপজেলার সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক নাসরিন সুলতানা জানান, তিনি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ২০০৮-০৯ সালে এই সনদ সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এগুলো জাল নাকি সে বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। এখন অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পারছেন তার সনদটি সঠিক নয়।

একই উপজেলার ফুলবাড়ী আদর্শ  উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল্যা সরদার জানান, তার প্রতিষ্ঠানে অডিট হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক সার্চ দিয়ে দেখেছেন আমার সনদটি সঠিক আছে। তারপরও যদি আমার সনদে কোন ত্রুটি থাকে সেটি কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাচাই করবেন।

নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশি ইসলামিয়া আলিম মাদ্ররাসার শরীর চর্চার সহকারি শিক্ষক হারুনুর রশিদ জানান, তার সনদটি সঠিক। কিভাবে জাল সনদের তালিকায় নাম এসেছে সেটি তার জানা নেই। 

তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন, ভাতা উত্তোলন করার কথা স্বীকার করে সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট মিজানুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অডিট হলেও জাল সনদের বিষয়টি প্রকাশ পায়নি। এছাড়াও বেতন, ভাতা বন্ধের জন্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্থানীয় প্রশাসন থেকে কোন লিখিত চিঠি না আসায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আশরাফিয়া জাহানের জাল সনদে চাকরি করার অভিযোগে উপজেলা শিক্ষা অফিসে আবেদন করলে আমরা তদন্ত করে এর প্রমাণ পাইনি। 

এ প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম জানান, জাল সনদধারীদের বিষয়ে এনটিআরসি থেকে সনদ যাচাইয়ের কোন নিদের্শনা আসেনি। তালিকা পেলে সেগুলো যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবেন। এছাড়াও তালিকাভুক্ত শিক্ষকের বেতন বন্ধ করার সুপারিশের কোন চিঠি তার বিভাগে আসেনি। 

-এসি/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,