ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান মোট বেতন, উৎসাহ ভাতা, আনুষঙ্গিক সুবিধা হিসেবে যত টাকা নিয়েছেন তার হিসাব তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এ হিসাব আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে তাকসিম এ খানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া, যত দিন পর্যন্ত তাকে অপসারণ করা না হবে ততদিন ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী তার বেতন নির্ধারণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতেও রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে এ নির্দেশ দেন আদালত।
স্থানীয় সরকার সচিব, ঢাকা ওয়াসা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদেরকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে ক্যাবের রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, গত ১৩ বছর ওয়াসা বোর্ড বিভিন্ন রেজুলেশনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কী বেতন-ভাতা এবং টিএ-ডিএসহ অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে তার হিসাব আগামী ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে বিভাগে দাখিলের জন্য আবেদন করেছিলাম, আদালত অনুমোদন করেছেন।
পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন-১৯৯৬ সালের ২৮(৪) উপ-ধারা অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের এখতিয়ার আছে, তার বেতন ও অন্যান্য ভাতা নির্ধারণ করার। কিন্তু সেটি করার জন্য কোনো নীতিমালা নেই। সে ক্ষেত্রে সরকারের ২০১৬ সালের সার্কুলার ও জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ীই তার বেতন-ভাতা নির্ধারণ হওয়ার কথা। কিন্তু তাকসিম এ খানের বেতন-ভাতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি।
রিটে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের অক্টোবরে তাকসিম এ খান ওয়াসার এমডি হিসেবে তিন বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ পান। তখন তার সর্বমোট মাসিক বেতন ছিল এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ছিল ৬০ হাজার টাকা। অন্যান্য খাতের মধ্যে বাড়িভাড়া ২০ হাজার, উৎসব ভাতা ১০ হাজার, মেডিকেল ও বিনোদন ভাতা চার হাজার এবং বিশেষ ভাতা ২২ হাজার টাকা। তার সঙ্গে চুক্তিতে বলা ছিল, বেতন বাবদ প্রদেয় আয়কর তাকসিম এ খানকেই দিতে হবে। এরপর ২০১০ সালে ওয়াসার এমডির বেতন দুই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি ওয়াসা বোর্ডের ২৩১তম সভায় এমডির বেতন নির্ধারণ করা হয় সাড়ে চার লাখ টাকা। একলাফে এমডির বেতন বাড়ে আড়াই লাখ টাকা, যা কার্যকর হয় ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে।
পরে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭২তম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বরে। ওই সভায় এমডির পারিশ্রমিকসহ সুযোগ-সুবিধা, বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্মানী পুনর্নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি দুই দফায় বৈঠক করে এমডির বেতন-ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করে।
গত বছরের ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭৬তম সভায় কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে এমডির বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয় ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার মূল বেতন দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা। উৎসব ভাতা ৪৭ হাজার ৬৬৭ টাকা, বাড়িভাড়া ৩৫ হাজার, চিকিৎসা ও আপ্যায়ন ভাতা ৩৫ হাজার ৭৫০ টাকা, বিশেষ ভাতা এক লাখ ৮০ হাজার ৬৬ টাকা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা চার হাজার ৭৬৭ টাকা।
এ খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হলে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করতে গত ২০ মার্চ বিবাদীদের লিগ্যাল নোটিশ দেয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। নোটিশের পরও এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত ৩১ জুলাই হাইকোর্টে রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
-এমএ