রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার খুচরা সার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার সার বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষকদের কাছ থেকে সারের দাম বেশি নেয়া হলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা কোন পাকা রসিদ (ভাউচার) দিচ্ছেন না। এতে করে কারও কাছে অভিযোগও দিতে পারছেন না কৃষকরা।
কৃষকদের অভিযোগ হাট-বাজারে নেই কোন বাজার মনিটরিং। এ সুযোগে অসাধু খুচরা ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দামে সার বিক্রয় করছে।
তবে মোহনপুর উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা বলছেন উল্টো কথা। তারা প্রায় প্রতিদিনই বাজার মনিটরিং করছেন বলে দাবি করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকার প্রতি বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) টিএসপি সারের খুচরা মূল্য এক হাজার ১০০ টাকা (২২ টাকা প্রতি কেজি), ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ৮০০ টাকা (১৬ টাকা কেজি), ইউরিয়া সারের মূল্য এক হাজার ১০০ টাকা (২২ টাকা কেজি) এবং এমওপি (পটাশ) ৭৫০ টাকা (১৫ টাকা কেজি) নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু কৃষকের কাছ থেকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। তবে এমওপি (পটাশ) সারের মূল্য ৭৫০ টাকা হলেও ৫০ কেজি এক বস্তা সারের দাম নেয়া হচ্ছে ১৪৫০-১৫০০ টাকা।
মোহনপুর উপজেলায় জুন থেকে অগাস্ট মাসের এমওপি (পটাশ) সারের চাহিদা পাঠানো হয়েছিল এক হাজার ৯০০ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ১৬৬ মেট্রিকটন। উপজেলার বিসিআইসির সাত ও বিএডিসির ১৮ জন ডিলারের মাধ্যমে উপজেলার কৃষকদের কাছে এ সার বিক্রি করা হচ্ছে। তবে খুচরা সার বিক্রেতারা সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি করছেন।
উপজেলার গ্রামের বেলনা গ্রামের আব্দুল মান্নান নামের জানান, তিনি স্থানীয় সারের দোকান থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকায় এক বস্তা এমওপি (পটাশ) সার কিনেছেন।
আবদুল জলিল নামের আরেক কৃষক জানান, সরকারি দামে প্রতি কেজি এমওপি (পটাশ) সার ১৫ টাকায় বিক্রি করার কথা, দোকানদার তা বিক্রি করছেন ২৯-৩০ টাকা। বস্তাপ্রতি এমওপি (পটাশ) সার দ্বিগুণ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
উপজেলার আদিবাসি কৃষক সনাতন বর্মণ জানান, কয়েক দিন আগে কেশরহাটে একজন খুচরা সার বিক্রেতার কাছ থেকে প্রতি বস্তা এমওপি (পটাশ) সার এক হাজার ৪৫০ টাকায় কিনেছি। দোকানদারের কাছে পাকা রসিদ চাওয়ায় সার বিক্রি না করার হুমকি দেন দোকানদার। সার কেনার রসিদ না পাওয়ায় কারও কাছে অভিযোগও করতে পারছি না।
নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির কারণ জানতে চাইলে মোহনপুর উপজেলার একজন খুচরা সার ব্যবসায়ী জানান, সার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে। বেশি দামে সার কিনে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
সারের সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহনপুর উপজেলার ডিলাররা জানান, চাহিদা মোতাবেক সার পাচ্ছি না বলে এমওপি (পটাশ) সারের সংকট দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে মোহনপুর উপজেলা বিসিআইসির ডিলারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর আহম্মেদ জানান, চাহিদা মত সার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সারের সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার অনেক হাট-বাজার ও রাস্তার মোড়ে অনুমোদনহীন কিছু ব্যবসায়ী বাইরে থেকে সার সংগ্রহ করে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। বেশি দামে সার বিক্রির সঙ্গে কোন ডিলার জড়িত নন।
উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা মোছা. রহিমা খাতুন জানান, সরকার-নির্ধারিত দামের বেশি দামে সার বিক্রির কোন সুযোগ নেই। সারের ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের দোকানে অভিযান পরিচালনা করছি। কোন অনিয়ম পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
-আরএইচ/এমএ