রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী শহীদুল ইসলাম। তিনি গত শুক্রবার মহানগরীর মির্জাপুর এলাকায় তার এক আত্মীয়র বাড়িতে উঠেছেন। শনিবার বিকেলে ঘুরতে যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সেখান থেকে রিকশা নিয়ে ফিরেছেন মির্জাপুরে।
তিনি বলেন, মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এলাম ২০ টাকায়। কিন্তু বিনোদপুর থেকে মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ি যাব ভাড়া চাচ্ছে ৩০ টাকা। আবার কেউ কেউ ৫০ টাকাও ভাড়া চেয়েছেন। কিন্তু আমার আত্মীয়র কাছে শোনা বিনোদপুর থেকে মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ভাড়া মাত্র ১০ টাকা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। চলবে বুধবার পর্যন্ত। কিন্তু এর আগেই গত শুক্রবার থেকে মহানগরীতে বেড়ে গেছে গাড়ি ভাড়া ও খাবারের দাম। একইসঙ্গে রয়েছে আবাসন সঙ্কটের সমস্যা। অনেকেই অভিযোগ করে বলছেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের বাড়তি চাপের সুযোগ নিয়ে রাজশাহীতে চলে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার প্রতিযোগিতা। ইতোমধ্য মহানগরীর ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা সেই প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন।
মহানগরীর কাজলার সুমাইয়া আফরিন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, 'আমি প্রতিদিন কাজলা থেকে সাহেববাজার যাই অটোরিকশায় করে। কাজলা থেকে সাহেববাজারের ভাড়া আট টাকা। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে ১০ টাকা নেয়া হলেও শনিবার ১৫ থেকে ২০ টাকা অটোরিকশা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। ভাড়া বেশি কেন হচ্ছে? জানতে চাইলে অটোরিকশা চালকরা দুর্ব্যবহার করছে। চালকরা বলছেন, গেলে যান না গেলে না যান।'
অটোরিকশার ভাড়ার মতোই বেড়েছে খাবার হোটেলের বিভিন্ন খাদ্যের দাম। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান ক্লাশ শেষ করে তালাইমারীর একটি হোটেলে সহপাঠিদের নিয়ে রোববার দুপুরের খাবার খেতে গিয়েছিলেন।
আতিকুর রহমান বলেন, সেই হোটেলের ওয়েটার জানান দুপুরে গরুর মাংস ও ভাত ছাড়া আর কোন খাবার নেই। বাধ্য হয়েই তারা সেই খাবার দিয়ে দুপুরের খাবার শেষ করেন। খাবারের বিল জানতে চাইলে বলা হয় ২২০ টাকা করে। সেখানে তারা প্রতিবাদ করেন।
তিনি বলেন, এক প্লেট ভাত আর তিন পিস গরুর মাংস কি করে ২২০ টাকা হয়। ক্যাশ কাউন্টারে থাকা ব্যক্তি তাদের বলেন, খেয়েছেন এখন টাকা দেন। বাধ্য হয়ে তারা ২২০ টাকা দিয়ে আসেন।
আতিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ওই হোটেলে মাছ, মুরগী, সবজি, ভর্তা ও ডালও ছিল। কিন্তু তারা সেগুলোর কথা বলেওনি বা পরিবেশনও করেনি। তারা ইচ্ছামত দাম বাড়াতে শুরু করেছেন। আমরা প্রতিদিন তাদের হোটেলগুলোতে খাই। এভাবে যদি দাম ইচ্ছামত বৃদ্ধি করে তাহলে রাজশাহীর নাম খারাপ হবে।
আতিকুরের মতো রাজশাহীর বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম বৃদ্ধি শুরু করেছে বলে অভিযোগ করছেন ভোক্তারা। ভোক্তারা বলছেন, অযৌক্তিক ভাবে দাম বৃদ্ধির কোন কারণ হয় না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসছেন তারা সবাই আমাদের অতিথি। অতিথিদের সঙ্গে এমন আচরণ করলে রাজশাহীর সম্মান ক্ষুন্ন হবে।
মহানগরীর কুমারপাড়ার সজিব তার আত্মীয়ের জন্য দু'দিন ধরে আবাসিক হোটেলে সিট খুঁজছেন। শহরের প্রায় অধিকাংশ হোটেলে গিয়েও সিট পাননি। সজিব বলেন, কোথাও কোন সিট নেই। এক আত্মীয় এবার ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসবে। তাই ২৫ তারিখের একটি সিট দরকার ছিল পাইনি।
কাদিরগঞ্জের আবরার বলেন, চার দিন খুঁজেছি কোনো আবাসিক হোটেলে সিট পাইনি। শুধু আবরার কিংবা সজিবই নন; মহানগরীতে প্রায় প্রতিদিনই হাজারো শিক্ষার্থীর অভিভাবক-পরিচিতজনরা সিটের পেছনে ছুটেও কোথাও পাচ্ছেন না।
রাজশাহী আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার হাসান কবির বলেন, প্রতি বছরই এই সময়টায় এ ধরনের সংকট তৈরি হয়। আমরা হোটেল মালিকরা এই সময়টায় বিব্রত হই, বিড়ম্বনাতেও পড়ি। কারণ, চেনাজানা অনেকেই আছেন, যারা হোটেলে সিট চান।
মহানগরীর অটোরিকশা ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলার জন্য রাজশাহী ইজিবাইক মালিক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলামের মুঠোফোন নাম্বারে একাধিক বার কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ বলেন, আমরা সোমবার থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাগুলো যাব। সেখানে প্রতিটি হোটেল ও রেস্তোরাঁর খাবারের মান ও মূল্য তালিকা পর্যবেক্ষণ করবো। কোন ব্যবসায়ী যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে খাবারের মূল্য বৃদ্ধি করে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। এই অভিযান ভর্তি পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সকলকে সতর্ক করেছি। তবুও ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের কোন দোকানে খাবারের অতিরিক্ত দাম কিংবা যানবাহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ইউনিটে চার হাজার ২০ আসনের বিপরীতে এবার ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে রাজশাহী আসবেন এক লাখ ৭৮ হাজার ২৬৮ পরীক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে আসবেন অভিভাবক। সব মিলিয়ে বাড়তি অন্তত প্রায় চার লাখেরও বেশি মানুষের চাপ পড়বে রাজশাহীতে।
-আরএইচ/এমএ