সাঁতরে দেশে ফেরার সময় নদীতে নিখোঁজ ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
Published : Sunday, 3 July, 2022 at 5:58 PM Count : 126
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে নীলকমল নদী সাঁতরে এক দম্পতির বাংলাদেশে ফেরার সময় পানিতে ডুবে নিখোঁজ দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে বিএসএফ।
রোববার দুপুর দেড়টার দিকে জিরো লাইনে ভারতীয় অংশে নীলকমল নদীতে ওই দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ১৯২ ব্যাটালিয়নের সেওটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফ ও কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ।
দুপুরে উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ধর্মপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার নং ৯৪৩ এর পাশ থেকে মাত্র ৫০ গজ ভারতের ভেতরে নীলকমল নদীতে স্থানীয়রা শিশুর দুটির মরদেহ ভাসতে দেখে। খবর পেয়ে সীমান্তের দুই দেশের স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে বিজিবি অতিরিক্ত টহল জোড়দার করে। পরে ভারতীয় সেউটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে নীলকমল নদী থেকে শিশুর দুটির মরদেহ উদ্ধার করে ভারতে নিয়ে যায়।
নিহতরা হলো- কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম সুখাতি গ্রামের রহিচ উদ্দিন (৩৮) ও তার স্ত্রী সামিনা বেগম (৩৫) দম্পতির সন্তান পারভীন (৯) ও সাকিবুর (৫)।
এদিকে, প্রায় ১৫ বছর আগে রহিচ উদ্দিন ও তার স্ত্রী সামিনা বেগম কাজের সন্ধানে অবৈধ ভাবে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের একটি ইটভাটায় যান। সেখানেই তাদের দুই সন্তানের জন্ম হয়। বাবা-মা বাংলাদেশি হলেও শিশু দুটির জন্ম ভারতে হওয়ায় তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্বের কোন প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় বিজিবির কাছে হস্তান্তর না করে শিশু দুটির মরদেহ ভারতে নিয়ে যায় বিএসএফ।
নিহত শিশুর চাচা আজিজুল হক বলেন, ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সুলতানপুর এলাকার হাসিহেসা ইট ভাটায় কাজ শেষে দুই দেশের দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য শুক্রবার রাতে স্ত্রী ও দুই সস্তানসহ কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার সেউটি-১ সীমান্তে এলাকায় আসেন রহিচ উদ্দিন। এ সময় পাচারকারী দালালরা কাঁটাতারের বেড়া কেটে তাদেরকে নীলকমল নদীর পাড়ে নোম্যান্স ল্যান্ড এনে দাঁড় করিয়ে রেখে নদী সাঁতরে বাংলাদেশে আসতে বলে। এ অবস্থায় লোকজনের কথা বলার শব্দ শুনে ভারতীয় সেউটি-১ ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যরা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে তাদের ধাওয়া করে। অবস্থা বেগতিক দেখে দুই সন্তানকে নিয়ে নদী সাঁতরাতে শুরু করেন সামিনা বেগম। কিন্তু তীব্র স্রোতের মধ্যে হাতের বাঁধন খুলে ডুবে যায় দুই শিশু। ডুবে যাওয়ার দুই দিন পর রোববার তাদের মরদেহ ভেসে উঠে।
নিহত শিশুর বাবা রহিচ উদ্দিন বলেন, পরিবার নিয়ে নিরাপদে দেশে ফেরার জন্য দুই দেশের দালালদের সঙ্গে প্রথমে ভারতীয় ২২ হাজার রুপী চুক্তি হলেও দুই দেশের দালালরা ভারতীয় ৪০ হাজার রুপী নিয়েছে। তারা আমাদেরকে সীমান্তে এনে অন্য ২০/২৫ জন নারী, পুরুষ ও শিশুদের সঙ্গে একটি বাড়িতে রাখে। শুক্রবার গভীর রাতে কাঁটাতারের বেড়া কেটে তারা আমাদেরকে নদীর পাড়ে নিয়ে এলেও ভারতীয় দালাল সিরাজুল ইসলাম, নয়ন মিয়া ও ময়না মিয়া আরও বাংলাদেশি ১০ হাজার টাকা নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নীলকমল নদীর পাড়ে কিছুক্ষণ পর ভারতীয় বিএসএফ ধাওয়া দিলে দালালরা দ্রুত নদী পার হতে বলে। আমি ব্যাগ নিয়ে সাঁতার দেই আর আমার স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে নদী সাঁতরাতে শুরু করে। কিন্তু অন্ধকারে তীব্র স্রোতের বেগে স্ত্রীর হাত থেকে সন্তানরা নিখোঁজ হয়। এরপর পানিতে ডুবে অনেক খোঁজাখুজি করেছি কিন্তু সন্ধান পাইনি। আমার দুই শিশুর মরদেহ নেওয়ার জন্য দুই দেশের সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি।
লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধীন কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার কবির হোসেন বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে শিশুদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রও দেখাতে না পাড়ায় ভারতীয় বিএসএফ নীলকমল নদী থেকে শিশু দুটির মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে সীমান্তে শান্তি শৃংখলা রক্ষার্থে ২৪ ঘন্টা বিজিবির টহল অব্যাহত আছে।
তিনি আরও বলেন, সকালে ওই সীমান্তের মেইন পিলার নং ৯৪২ এর সাব পিলার ৮ এসের পাশে দুই দেশের কোম্পানী পর্যায়ে এক সৌজন্যমূলক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বিজিবির ছয় সদস্যের পক্ষে নের্তৃত্ব দেন কোম্পানী কমান্ডার কমির হোসেন ও ভারতীয় ১৯২ ব্যাটালিয়নের সেওটি-১ ক্যাম্পের ছয় সদস্যের বিএসএফের পক্ষে নের্তৃত্ব দেন কোম্পানী কমান্ডার এস এইচ শংকর কুমার এসি।
-এসি/এমএ