For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

লিচুতে রঙিন বাজার

Published : Thursday, 26 May, 2022 at 4:19 PM Count : 259



আম, জাম, তরমুজ ছাড়াও হাজারো ফলের মধুমাস জ্যৈষ্ঠে এবার রাজশাহীতে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাজশাহীর বাজার রঙিন করে রেখেছে লিচু। আম বাগানের পাশাপাশি রাজশাহীতে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে লিচুর বাগান। তাই এখন রাজশাহীর বাজার মানেই লিচুময়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৫১৯ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। বর্তমানে রাজশাহীর বাজার গুটি জাতের  লিচুর দখলে রয়েছে। রাজশাহীতে এবার ৩ হাজার ১৪৪ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসেবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৪৪ কোটির বেশি টাকার লিচুর বাণিজ্য ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

রাজশাহী কৃষি বিভাগ জানায়, গত বছরের তুলনায় রাজশাহীতে এবার লিচুর উৎপাদন বেশ কিছুটা বেড়েছে। ফলনও গত বছরের চেয়ে অনেকটা ভাল। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় গত বছর গাছে লিচু কম ধরেছিল। তাই এ বছর প্রাকৃতিকভাবেই লিচু ধরেছে অনেক বেশি। আর গত বছর লিচুর ফুল থেকে গুটি আসা পর্যন্ত নানা বৈরী আবহাওয়া থাকায় ফলন কিছুটা ছিল কম।

ফল গবেষকরা বলছেন, লিচুর ফুলের পরাগায়নের সময় তাপমাত্রা কম থাকা প্রয়োজন। কিন্তু গত বছর শীতের শেষে হঠাৎ গরম পড়ে যায়। গত বছর হঠাৎ একটানা কয়েকদিন ভোরে কুয়াশা পড়ে। ফলে পরাগায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার কিছুদিন পর চলে খরা। এতে গুটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে উৎপাদন কম হয় লিচুর। তবে এবার শুরু থেকেই অনুকূল আবহাওয়ার কারণে গাছে লিচুর মুকুল বেশি এসেছিল। এ জন্য গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, লিচুর ভাল পরাগায়নের জন্য ১২০ ঘণ্টা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তারও কম তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এবারও হঠাৎ করেই শীতের পর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ফলে মাঠ পর্যায়ে পরিচর্যার কারণে এবার লিচুর ফলন ভাল হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ফলন এবার অনেকটা ভাল।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলা ও মহানগরীর ২টি থানা এলাকায় কম-বেশি লিচু চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি লিচুর চাষ হয় জেলার বাগমারা উপজেলায়। চলতি মৌসুমে বাগমরায় ১১৫ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। এই উপজেলা থেকেই ৬৯০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এছাড়া, জেলার পবায় ৭৫ হেক্টর জমিতে ৪৫৫ মেট্রিক টন, দুর্গাপুরে ৭০ হেক্টর জমিতে ৪২১ মেট্রিক টন, পুঠিয়ায় ৬৬ হেক্টর জমিতে ৩৯৩ মেট্রিক টন, মোহনপুরে ৫২ হেক্টর জমিতে ৩১০ মেট্রিক টন, চারঘাটে ৪৫ হেক্টর জমিতে ২৭২ মেট্রিক টন, তানোরে ৩০ হেক্টর জমিতে ১৭৬ মেট্রিক টন, বাঘায় ২১ হেক্টর জমিতে ১২৬ মেট্রিক টন, মহানগরীর মতিহারে ২১ হেক্টর জমিতে ১২৫ মেট্রিক টন এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ১০ হেক্টর জমিতে ৫৯ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মহানগরীর ছোটবনগ্রাম, রায়পাড়া, পুঠিয়ার ঝলমোলিয়াসহ কয়েকটি এলাকার বাগান ঘুরে দেখা গেছে, লিচুগাছে লিচু পেকে গোলাপী রং ধারণ করেছে। পাতার ফাঁকে ফাঁকে শুধুই লিচু। সেই লিচু এখন ছড়িয়েছে রাজশাহীর বাজারে। ফলন ভাল হওয়ায় এবার লিচুর দামও রয়ছে নাগালের মধ্যে।

লিচু চাষিরা জানিয়েছেন, রাজশাহী অঞ্চলে মূলত উন্নতমানের জাত হিসাবে বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাদমি, মোজাফফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়ি, চায়না-৩, বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ জাতের লিচু উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বোম্বাই লিচুর আকর্ষণ বেশি। সবচেয়ে বেশি গাছ রয়েছে বোম্বাই লিচুরই।
মহানগরীর রায়পাড়া এলাকার লিচু চাষি আবদুল গাফ্ফার বলেন, গত বছর যেমন ইজারা নেয়া বাগানে ক্ষতি হয়েছে এবার সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।

জেলার পবা উপজেলার লিচুচাষি সামসুল ইসলাম বলেন, লিচু বাদুড়ের প্রিয় খাবার। নেটের জাল দিয়ে পুরো গাছ ভালোভাবে ঢেঁকে দিতে হয়েছে। প্রথম থেকেই এবার লিচুর দাম ভালো। বাগান থেকে খুচরার তুলনায় একটু কম দাম দেয়। ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে লিচু ভেঙ্গে নিয়ে যায়। পরিবহন খরচ ছাড়াই যা পাই তাতেই ভালো হয়। এবার ফলনও ভালো হয়েছে। সবমিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।

কসবা গ্রামের লিচুচাষি আরিফুল ইসলাম জানান, তার বাগানেরও অবস্থা এবার অনেকটা ভাল। গাছে পাতার ফাঁকে ফাঁকে বোম্বাই লিচু দেখে মনে ভরে উঠছে। কয়েকদিনের মধ্যেই লিচুগুলো নামানো যাবে। বাগানে যে পরিমাণ লিচু আছে তাতে হয়তো এবার গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।

এদিকে, রাজশাহীর বাজার এখন লিচুর দখলে। এখনো সেভাবে আম বাজার দখল করতে পারেনি। তাই সর্বত্র লিচু বিক্রি করছে। মহানগরীর অলিগলিতেও ফেরি করে লিচু বিক্রি হচ্ছে।

সাহেব বাজারে লিচু কিনতে আসা কুমারপাড়া এলাকার ইউসুফ বলেন, ১০০ লিচুর দাম এখন ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। লিচু ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন বলেন, এখন শহরের মধ্যেই দেশি জাতের লিচুগুলো বাজারে বিক্রি করছি। কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে বোম্বাই লিচু আসবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. মোজদার হোসেন বলেন, লিচুর এমন একটি ফল যা মানুষকে আকর্ষণ করবেই। তাই এই ফলে খুব একটা লোকসান হয় না। তবে কোন মৌসুমে ফলন একটু কম আবার কোনো মৌসুমে বেশি হয়। তবে প্রতিবছর লিচুর আবাদ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ৫ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ বেশি হয়েছে। তুলনামূলকভাবে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও কিছুটা বেশি। গত বছরের চেয়ে এবছর ১০৭.৯৮ মেট্রিকটন লিচু বেশি উৎপাদন হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।

আরএইচএফ/এসআর



« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,