কুড়িগ্রামের রৌমারীতে প্রতিহিংসা ও অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গলা কেটে হত্যা করা হয় এক গৃহবধূ (২৭) ও তার শিশু সন্তানকে। ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীসহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন নিহত গৃহবধূর উকিল বাবা উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের ওকড়াকান্দা গ্রামের জাকির হোসেন ওরফে জফিয়াল (২৮) ও নিহতের দেবর চাঁন মিয়া (৪৩)।
বুধবার দুপুরে রৌমারী অফিসার্স ক্লাবে প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুরের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান এ তথ্য জানান।
হত্যার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'নিহত গৃহবধূর স্বামী চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। তার স্বামীর আগেই ছোট ভাই চাঁন মিয়া বিয়ে করেন। তার ঘরে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। পরে চাঁন মিয়ার ভাই বিয়ে করেন। তারপর তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। ছেলে জন্মের পর চাঁন মিয়ার হিংসা শুরু হয়। এছাড়াও তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী দেখতে সুন্দর, শিক্ষিত মেয়ে হওয়ায় তা সহ্য করতে পারতেন না দেবর চাঁন মিয়া।'
আশিক উজ্জামান বলেন, 'অন্যদিকে একই এলাকার জাকির হোসেন ওরফে জফিয়াল বিয়েতে উকিল বাবা হওয়ার সুবাদে ওই গৃহবধূর বাড়িতে প্রায়ই যাতায়াত করতেন এবং তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত দেবরকে ওই গৃহবধূর চরিত্র নিয়ে নানা উসকানি দেয় ওই উকিল বাবা।'
তিনি বলেন, 'পরে দু’জন মিলে পরিকল্পনা করেন; বড় ভাইয়ের শিশুসন্তানকে হত্যা করবেন চাঁন মিয়া এবং উকিল মেয়েকে ধর্ষণ করবেন উকিল বাবা জফিয়াল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন শিশুসন্তানের চিকিৎসার জন্য ভিকটিমকে কুড়িগ্রাম নিয়ে যান উকিল বাবা জাকির হোসেন জফিয়াল। পরে কুড়িগ্রাম থেকে বাড়ি ফেরার পথে রৌমারী বাজার থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও একটি ফ্লাক্স কিনে শ্বশুর বাড়িতে যান ওই গৃহবধূ।'
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'সেখান থেকে ছেলেকে নিয়ে তার বাবার বাড়ির উদ্দেশে নির্জন এলাকায় পৌঁছলে আগ থেকে ওৎ পেতে থাকেন তার দেবর চাঁন মিয়া ও উকিল বাবা জাকির হোসেন জফিয়াল। এ সময় তারা জোরপূর্বক রৌমারী সদর ইউনিয়নের নতুনবন্দর গ্রামের জনৈক আব্দুর সবুর মিয়ার পুকুরের পূর্ব পাড়ে নিয়ে প্রথমে শিশুকে কোলে রাখেন দেবর চাঁন মিয়া।'
'এদিকে উকিল মেয়েকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা চালান তার উকিল বাবা জফিয়াল। এ সুযোগে কোলে থাকা শিশুসন্তান ভাতিজার গলায় ধারালো ছুরি চালিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করেন দেবর চাঁন মিয়া। শিশু হাবিবের মৃত্যু নিশ্চিত করে তার ভাবির দিকে ছুটে যান দেবর চাঁন মিয়া। ওই ধারালো ছুরি দিয়ে ভাবি হারেনার ঘাড়ে কোপ দেয় দেবর। এ সময় চাঁন মিয়ার হাত থেকে ছুরি নিয়ে হারেনার গলায় কোপ দেন দেয় উকিল বাবা জাকির হোসেন জফিয়াল। পরে নিশ্চিত মৃত্যু ভেবে চলে যান দু’জনই।'
তিনি বলেন, 'গত ২২ মে নিহতের বাবা বাদি হয়ে রৌমারী থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুর ২টার দিকে র্যাবের দল জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামি জাকির হোসেন ওরফে জফিয়ালকে আটক করে। তার দেওয়া তথ্যমতে, রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে এ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত প্রধান অভিযুক্ত নিহত গৃহবধূর দেবর চাঁন মিয়াকে আটক করা হয়।'
গত শনিবার (২১ মে) রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নতুনবন্দর নামক এলাকায় বাবার বাড়ির পাশের ধান ক্ষেতে পাঁচ মাস বয়সের শিশু সন্তান হাবিবের গলাকাটা মরদেহ ও মা হাফসা আক্তার হারেনাকে গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে মা হাফসার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত হাফসার বাবা বাদি হয়ে রৌমারী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুর ক্যাম্পের স্কোয়াড কমান্ডর এএসপি এম এম সবুজ রানা ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার কর্মীরা।
র্যাবের হাতে আটক ওই দুই আসামিকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রৌমারী থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ।
-এমএ