রাজশাহীর চারঘাটের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ সরদহ সরকারি মহাবিদ্যালয় শিক্ষক সংকটে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কলেজের নিয়মিত পাঠদান। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ঘাটতি পুষিয়ে নিতে কলেজের শিক্ষাদান পুরোদমে শুরু হলেও শুধু শিক্ষক সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে প্রতিদিনের পাঠদান।
কলেজ জাতীয়করণ পরবর্তী কাজ ও শিক্ষক নিয়োগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলে জানিয়েছেন ইউএনও ও সরদহ সরকারি কলেজের সভাপতি সৈয়দা সামিরা।
জানা গেছে, উপজেলার প্রাচীনতম এই কলেজটি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই কলেজটি প্রথমত এইচএসসি এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে স্নাতক (পাশ) এবং স্নাতক (সম্মান) পাঠদান চালু রয়েছে। মোট ২৫টি বিষয় বাংলা, ইংরেজি, পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত, পরিসংখ্যান, মনোবিজ্ঞান, আইসিটি, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, অর্থনীতি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, ইসলাম শিক্ষা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, দর্শন ও ভ’গোল এ প্রায় ১ হাজার ৬শ’ শিক্ষার্থী পাঠদান নিচ্ছেন। কলেজটি ২০১৬ সালে জাতীয়করণের ঘোষণা হলেও ২০১৮ সালে ৮ আগস্ট জাতীয়করণ হয়।
বাংলা বিষয়ের প্রভাষক রেজা বলেন, কলেজটি জাতীয়করণ হলেও আজ পর্যন্ত কলেজের শিক্ষক জাতীয়করণের আওতায় আসেনি। শিক্ষকরা জাতীয়করণের কোনো সুফল বা সুযোগ সুবিধা পায়নি।
নাম প্রকাশে একাধিক কলেজ শিক্ষক এজন্য অদক্ষ কলেজ প্রশাসন ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই এর সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের উদাসীনতাকে দায়ি করেন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ৫টি বিষয় ইংরেজি, অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান, দর্শন, আইসিটি ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের কোনো শিক্ষক নেই। আরও ৮টি বিয়য়ে রয়েছে একজন করে শিক্ষক। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংকট কাটাতে শিক্ষক পূরণের কোনো উদ্যেগ নিচ্ছেন না। ফলে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে রীতিমতো উৎকন্ঠায় রয়েছেন অভিভাবকরা।
জাতীয়করণের পরে বিগত ৭ বছরে এ কলেজ থেকে একে একে একাধিক শিক্ষক অবসরে চলে যান। অবসরে যাওয়া অন্যতম শিক্ষকরা হলেন, প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, গণিতের নজরুল ইসলাম, মনোবিজ্ঞানের মাজদার রহমান, বাংলার মোবারক হোসেন, জীববিজ্ঞানের সালেহা খাতুন, মার্কেটিং এর আলতাব হোসেন অন্যতম।
ইংরেজি, বাংলাসহ কয়েকটি বিষয়ে কোনো শিক্ষক না থাকায় খন্ডকালীন শিক্ষক ও অনার্স এর শিক্ষক দিয়ে চলছে এইচএসসি’র ১ম, ২য়, স্নাতক (পাশ) ১ম,২য় ও ৩য় বর্ষের শিক্ষা পাঠদান করাচ্ছেন। অবসরজনিত কারণে এবং নতুন শিক্ষক না নেয়ায় কলেজটিতে ইংরেজি, বাংলাসহ কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়ে।
শিক্ষকশূন্য এসকল বিষয়ে কোনো শিক্ষক না থাকায় পাঠদান সচল রাখতে নিয়মবহির্ভুতভাবে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করাচ্ছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ বলে জানিয়েছে একাধিক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে সরদহ সরকারি মহাবদ্যিালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইজাজুল হক জানান, কলেজটিতে বর্তমানে প্রায় ১০টি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। জাতীয়করণ হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারে না। করোনাকালীন পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নতিকরণ লক্ষে ইংরেজিসহ কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষক না থাকায় খ-কালীন শিক্ষক দিয়ে কোনো রকম চালাচ্ছেন ওই সকল বিষয়ের পাঠদান।
সরদহ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট শিক্ষকের চাহিদা চেয়ে পত্র দেয়া হয়েছে। শিগগিরই নতুন শিক্ষক পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
আরএইচএফ/এসআর